মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার শহরের মাঝিরঘাটস্থ বাঁকখালী নদীতে নোঙ্গর করা একটি ফিশিং ট্রলার থেকে খালাসের সময় এক কোটি ইয়াবা লুটের মূলহোতা মিজানকে কক্সবাজার আনা হচ্ছে। রোববার ১৯ জুলাই সকালে বেনাপোল সীমান্তের ইমিগ্রেশন পুলিশ সেখানে যাওয়া কক্সবাজার জেলা পুলিশের টিমকে আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মিজানকে হস্তান্তর করে। এরপর কক্সবাজার জেলা পুলিশের টিম মিজানকে নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) সিবিএন-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মিজানকে কক্সবাজারে আনার পর সে কথিত ইয়াবা লুটকারী মিজান কিনা তা যাচাই করে নিশ্চিত হতে হবে। এরপর ইয়াবা পাচার ও লুটের রহস্য উদঘাটনে আইনী প্রক্রিয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গত ১৭ মার্চ রাতে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ কক্সবাজারে এক কোটি ইয়াবা লুট নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা মিজানকে আটক করে।

এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরের মাঝেরঘাটে আবু ছৈয়দ কোম্পানির জেটিতে ইয়াবার এই বিশাল চালানটি লুটের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে মিজান ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেই ইয়াবাগুলো বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে। জানা গেছে, দালালের মাধ্যমে ইয়াবা গুলো ২৪ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছিলো। এই ঘাটে একটি ফিশিং বোটে করে একটি আন্তর্জাতিক ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট বিশাল এই ইয়াবার চালানটি এনেছিলো।

এ বিষয়ে কক্সবাজার শহরজুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠলে ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে মিজান কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দর রোডস্থ একটি গণ পরিবহনে করে চট্রগ্রাম চলে যায়। ওই সময় চট্রগ্রাম শহরে মিজান ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অবস্থান করার পর একইদিন রাতেই বিমানযোগে সে ভারত পালিয়ে যায়। পরে মিজানের মোবাইলের সিডিএমএস পর্যাবেক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের সঙ্গে কথা বলে মিজান দেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবরটি নিশ্চিত হয় পুলিশ। ভয়ংকর মিজান টেকপাড়া ও আশেপাশের এলাকার মানুষের কাছে এক মুর্তিমান আতংকের নাম।

এক কোটি ইয়াবা লুটের প্রধান হোতা মিজান (৩২) কক্সবাজার পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম টেকপাড়ার বাসিন্দা গোলাম মওলা বাবুল প্রকাশ ‘জজ বাবুল’ এর পুত্র। গোলাম মওলা বাবুল কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসাবে চাকুরীরত অবস্থায় নিজেকে ‘জজ বাবুল’ হিসাবে জাহির করতে করতে সে এখন সবার কাছে ‘জজ বাবুল’ হিসাবে পরিচিত। একজন চতুর্থ শ্রেণির সাবেক কর্মচারি হয়েও নামের আগে ‘জজ’ শব্দ ব্যবহার করতে পেরে গোলাম মওলা বাবুল এট নিয়ে এখন বেশ গর্ববোধ করেন। তার সন্তান মিজানের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এবছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর ১০(গ)/৪২ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। যার নম্বর ৮৭/২০২০ ইংরেজি।

এই চাঞ্চল্যকর এক কোটি ইয়াবা লুটের ঘটনার দীর্ঘ ৫ মাস পরে মিজান সড়ক পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় শুক্রবার ১৭ জুলাই দিবাগত রাতে যশোরের বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ মিজানকে আটক করে এবং বিষয়টি কক্সবাজার জেলা পুলিশকে অবহিত করে। শুক্রবার রাতেই কক্সবাজার জেলা পুলিশের একটি দল মিজানকে আনার জন্য বেনাপোলের উদ্দেশ্যে রাওনা দেন। শনিবার তারা বেনাপোলে পৌঁছেন।

এদিকে ইয়াবা লুটের পর ওই সময় মিজান পালিয়ে গেলেও তার প্রধান দুই সহযোগী ফিরোজ ও তার সহোদর মোস্তাককে ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে দুই লাখ ইয়াবাসহ আটক করেছিলো পুলিশ।