মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ও কক্সবাজার জেলায় কোভিড-১৯ কার্যক্রমের সমন্বয়কারী হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, কক্সবাজার জেলায় আরও দু’টি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের চেষ্টা চলছে। জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা UNHCR এবং WHO’কে অনুরোধ করেছি উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা এবং রোহিঙ্গাদের জন্য যাতে একটা পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। এছাড়াও চকরিয়ার ডুলাহাজারা মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালেও যাতে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা যায় সে ব্যাপারেও চেষ্টা চলছে। যেখানে স্থানীয়দের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোকজনও সহজে করোনার স্যাম্পল টেস্ট করাতে পারবেন।

শুক্রবার ১০ জুন বিকেলে কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন চৌধুরী পাড়া এলাকায় ‘কক্স হেলথ কেয়ার হসপিটাল’ এর ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে তিনি হাসপাতালের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানে সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, প্রস্তাবিত এ ২ টি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা গেলে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, বান্দরবানের লামা, আলীকদম, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া সহ পার্শবর্তী এলাকার লোকজন এখানে অনায়াসে করোনার স্যাম্পল টেস্ট করাতে পারবেন। তখন আমরা দ্রুত জানতে পারবো কে ‘কোভিড’, আর কে ‘নন কোভিড’। সেই অনুসারে আমরা চিকিৎসা নিতে পারবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘ কক্সবাাজার এখন করোনার হটস্পট। ঢাকার পরে চট্টগ্রাম ও নারায়নগঞ্জ। এরপরেই কক্সবাজার। আমরা কক্সবাজারের মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষকে বাঁচাতে হবে। কক্সবাজারে আজ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ জন। নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে এই সংখ্যা শুধু বাড়তেই থাকবে। মানুষ এখন লকডাউন মানছে না, স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। তাহলে করোনা যাবে কি করে? এটা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। সুতরাং মানুষকে মাস্ক পড়তে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে প্রথম দিকে কিছুই ছিলোনা। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল এখন অনেক উন্নত হয়েছে ICU হয়েছে, HDU হয়েছে। যা দেশের অন্য কোন জেলা সদর হাসপাতালে নেই। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আইসোলেশন সেন্টার করেছেন। আমরা ৪ টা হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা পেয়েছি। কক্সবাজারে দু’টি পিসিআর মেশিন চালু আছে। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বর্তমানে কক্সবাজারের যে অবস্থান, তাতে প্রত্যেকটা মানুষ আশাবাদী হতে পারবেন। রংপুর বিভাগে মাত্র একটি পিসিআর মেশিন আছে। তাদের টেস্ট রিপোর্ট পেতে ৮/১০ দিন সময় লাগে। রাজশাহী বিভাগে মাত্র দু’টি পিসিআর মেশিন আছে। বরিশালে মাত্র একটা আছে। সেই তুলনায় কক্সবাজার জেলা অনেক ভালো অবস্থানে আছে। অন্তত:পক্ষে মানুষ স্যাম্পল টেস্ট করাতে পারছেন। ২/৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাচ্ছে।’

‘কক্স হেলথ কেয়ার হসপিটাল’ কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করবো, এখানে যাতে মানসম্মত চিকিৎসা গ্রহনের মাধ্যমে মানুষ আস্তা খুঁজে পায়। সেই আস্তার জায়গাটা তৈরী করতে হবে। আসুন আমরা সকলে মিলে কক্সবাজারের চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরষ্পরের সহযোগী হই।’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘কক্স হেলথ কেয়ার হসপিটাল’ এর চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার পৌরসভার সকল নাগরিককে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পড়তে হবে।’ তিনি বলেন, কক্সবাজারের মানুষকে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি এ হাসপাতাল দ্রুত সময়ের মধ্যে মানুষের আস্তা অর্জনে সক্ষম হবে। কক্স হেলথ কেয়ার হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী জুবাইদুল ইসলাম চৌধুরীর সঞ্চালনায় এবং মাওলানা আনোয়ার হোসাইনের কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: নুরুল আকতার চৌধুরী। এছাড়া কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার, পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক, কাউন্সিলর সালাউদ্দিন সেতু, ইয়াসমিন আক্তার, সাহাবুদ্দিন সিকদারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথম ফেইজে হাসপাল হবে ৫০ শয্যার। এতে সাধারণ বেড থাকবে ৪০টি এবং আইসিইউ, এইচডিইউ, সিসিইউ থাকবে ১০ শয্যার। পরবর্তীতে হাসপাতালটিকে ১২৫ শয্যায় উন্নীত করা হবে। তখন আইসিইউ, এইচডিইউ, সিসিইউ ব্লক হবে ২০ শয্যার। সব মিলিয়ে শিগগির হতে যাওয়া এই হসপিটালটিতে সুলভমূল্যে আধুনিক চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে হলে ঘোষনা দেন কক্স হেলথ কেয়ার হসপিটালের চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।