ইমাম খাইর:
জীবনে সফলতা পেতে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়, অটুট থাকতে হয় নিজ লক্ষ্যে।
আর নিজ টার্গেটে অটল থেকে সফল হওয়া একজন সাংবাদিকের নাম কবির হোসেন সিদ্দিকী। যিনি শুধু সাংবাদিক নন; অনেক সাংবাদিকের উস্তাদ। ক্ষুধা-দারিদ্রতা আর অভাবের সাথে লড়াই করে বেড়ে উঠা কবির হোসেন সিদ্দিকী এখন সাংবাদিক থেকে সম্পাদক। তিনি অনেকের সম্মান ও জীবিকার উছিলা।

আপোষহীন সাংবাদিক কবির হোসেন ছিদ্দিকী সত্যের পক্ষে থাকতে গিয়ে জেল খেটেছেন একমাস ১৪ দিন। হামলার শিকার হয়েছেন অসংখ্যবার। মামলা খেয়েছেন দুই ডজনের বেশি। তারপরও সত্যের পথ থেকে বিচ্ছুত হননি।

পার্বত্যজেলা বান্দরবানের পাহাড়ী সন্তান কবির হোসেন ছিদ্দিকী ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন ভালো কিছু করার। স্বপ্ন লিখতে শুরু। ১৯৯৭ সালে এসএসসির পর থেকেই জড়িয়ে পড়েন লিখালিখিতে। ১৯৯৮ সালে কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় মাসিক হিসেবে সাঙ্গু প্রকাশ করেন তিনি। ওই সময়ে পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন জয়নাল আবেদীন, নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন আল ফয়সাল বিকাশ, মুদ্রাকর ছিলেন জামাল হোসেন হেলালী। কবির হোসেন সিদ্দিকী ছিলেন প্রকাশক।

১৯৯৯ সালে পত্রিকাটি সাপ্তাহিক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন লাভ করে। ৫ বছর সাপ্তাহিক হিসেবে চলার পর ২০০৪ সালে দৈনিক সাঙ্গু বান্দরবান জেলা থেকে দৈনিক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ২০০৯ সালে পত্রিকাটি চট্টগ্রামে দৈনিক হিসেবে প্রকাশ শুরু করেন কবির হোসেন সিদ্দিকী।

শুরু হয় তার নতুন যাত্রা। এরপর পরেই তিনি একে একে জন্ম দেন দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন, দৈনিক চট্টগ্রাম সময়, দৈনিক আওয়ার চট্টগ্রাম, দৈনিক প্রিয় চট্টগ্রাম, সাপ্তাহিক নতুন ঈশান। এর মধ্যে দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন ও দৈনিক চট্টগ্রাম সময় তিনি যথাক্রমে ফোর এইচ গ্রপ ও আয়ান শর্মার হাতে হস্তান্তর করেন।

সর্বশেষ তিনি জাতীয় দৈনিক বায়ান্ন এর অনুমোদন নেন। পত্রিকাটি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। সাংবাদিকতা জীবনে কবির হোসেন সিদ্দিকী দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, সংবাদ, বাংলাদেশ সময়, চট্টগ্রাম মঞ্চ, নিউজ ২৪, চ্যানেল আইসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় কাজ করেছেন।

তাই তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সাধারণ পরিবার থেকে সাংবাদিকতা করে আজ স্থানীয়, আঞ্চলিক, জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক। স্যালুট, প্রিয় কবির হোসেন ছিদ্দিকী।

কবির হোসেন ছিদ্দিকীর আত্মজীবনী থেকে জানলাম- তার শিশু ও শৈশবকাল কেটেছে অনাহারে অর্ধহারে। বাবা ছিদ্দিকুর রহমান ছিলেন পুলিশ বিভাগের সামান্যতম একজন কর্মচারী। তার সামান্য বেতনে ৫ ভাই বোনের সংসার চালানো কঠিন ছিল। ছেলে- মেয়েদের মানূষ করতে বাবার পাশাপাশি মা শামসুর নাহারও করেছেন অমানুষিক পরিশ্রম।
ছেলে মেয়েকে মানূষ করতে মা শামসুর নাহার হাতে তুলে নিয়েছিলেন হাতুড়ি। মানুষের বাসাবাড়িতে করেছেন ঝি এর কাজ। মায়ের সে স্মৃতি মনে করে আজো কাঁদেন কবির হোসেন সিদ্দিকী। সেই মানুষটি এখন একজন সফল সম্পাদক। আজ পূর্ণ হলো তার সাংবাদিকতার ২১ বছর।

সাংবাদিকতা জীবনে তিনি সাহিত্যিক আবুল ফজল পদক, গুলজার হোসেন পদকসহ অসংখ্য পদক পেয়েছেন। বয়সে তরুণ এই সংবাদ কর্মীর কর্মস্পৃহা একজন সামান্য জেলা প্রতিনিধি থেকে তাকে আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকের আসনে বসিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে কবির হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি সবসময় স্বপ্ন দেখি মানুষের জন্য ভালো কিছু করার। সেই মানসিকতা থেকে আজও পত্রিকার জগৎকে আকড়ে ধরে আছি। স্বপ্ন ছিল বলেই আমি সামান্য একজন সংবাদদাতা থেকে ৭টি পত্রিকার সম্পাদক হতে পেরেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘পত্রিকায় লাভ করা অনেক কঠিন। এমনও সময় গেছে মা-বোনের স্বর্ণ বন্দক রেখে পত্রিকা প্রকাশ করতে হয়েছে। তার পরেও আর্থিক বড় ঝুঁকিতে থেকেও শুধুমাত্র সমাজের জন্য ভালো কিছু করার মানসে পত্রিকা প্রকাশ করে চলেছি।’

সাংবাদিকতা জীবনে সফলতার পেছনে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ এর অবদান বিশেষভাবে স্মরণ করেন কবির হোসেন সিদ্দিকী।

তার সফলতার পেছনে বন্ধু জহির রায়হান, বদরুল ইসলাম মাসুদ, জয়নাল আবেদীন, আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, এইচ এম সম্রাট, সাফায়েত হোসেন, জমির উদ্দিনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ উমর ফারুক, চ্যানেল আইয়েরে বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, মফস্বল সম্পাদক আদিত্য শাহীন, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান চৌধুরী ফরিদ, কক্সবাজার প্রতিনিধি সরওয়ার আলম মানিকের অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন তিনি।

সাঙ্গুতে আমার অর্জন-অবস্থান:
কবির হোসেন ছিদ্দিকীর একান্ত দরদ-আন্তরিকতায় ডাক পড়ে দৈনিক সাঙ্গুতে কাজ করার। তখন ছিল ২০১৭ সালের সম্ভবত জুলাই মাস। কক্সবাজার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে বলেন। সিদ্ধান্ত নিলাম। কাজ শুরু করে দিলাম। বছর শেষে প্রতিনিধি সম্মেলন। চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লাহ কদম মোবারক লেইন তারাবানু ভবনস্থ পত্রকার নিজস্ব অফিসে অনুষ্ঠান হয়। প্রথমবারের মতো কোন আঞ্চলিক পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে আমিও উপস্থিত। এক পর্যায়ে ঘোষণা মঞ্চ থেকে আমার নাম ঘোষণা আসে। বলা হয়- ২০০১৭ সালের সাহসী প্রতিবেদক ইমাম খাইর। শুনে তো থ। সম্পাদকসহ অতিথিদের হাত থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করলাম। পরের বছরও সাহসী প্রতিবেদক সম্মাননা আমার হাতে। তৃতীয় বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে পত্রিকায় বিশেষ অবদান রাখায় ‌সম্মাননা স্মারক দেয়া হয় আমাকে। সেই সাথে কক্সবাজার প্রতিনিধি থেকে স্টাফ রিপোর্টার পদোন্নতি প্রদান করেন।
আসলে, পেশাগত মর্যাদা তিনি বুঝেন। মূল্যায় করতে জানেন। সাঙ্গুকে আমি তুলে ধরিছি। সাঙ্গু আমাকে মর্যাদা দিয়েছে। সম্মানিত করেছে পরপর তিন বছর।
প্রিয় সম্পাদক কবির হোসেন ছিদ্দিকীর কণ্ঠকমুক্ত জীবন ও দীর্ঘ নেক হায়াত কামনা করছি।