বলরাম দাশ অনুপম :
রেড জোন ঘোষণা ও লকডাউনের পরও পর্যটন জেলা কক্সবাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগির সংখ্যা। বিশ্ব মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব কক্সবাজার জেলার শহরগুলো ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রামে। জেলার সব পৌর এলাকা ও সব উপজেলায় শক্ত ভাবে হানা দিয়েছে করোনা। পাশাপাশি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে করোনার হানা ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের। পাল্লা দিয়ে করোনা রোগি সনাক্ত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়-বুধবার (২৪ জুন) পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৫ জন। আর কক্সবাজারের ৮ উপজেলায় সনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ২৮৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগি (এদের মধ্যে ৪৭ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছে)। আর সুস্থ হয়েছেন ৭৯৩ জন।
আক্রান্ত ২ হাজার ২৮৭ জনের মধ্যে শুধু কক্সবাজার সদর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫৩ জন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়-২৪ জুন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৪৫৯ জনকে আইসোলেশনের রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ৬ হাজার ২৭৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং ৮৩৭ জনকে প্রাতিষ্টানিক কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আনা হয়েছে। সেখান থেকে এ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৫৭ জন। এদিকে সর্বশেষ বুধবার (২৪ জুন) কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্যনুযায়ী আক্রান্তের মধ্যে বেশীর ভাগ রোগি কক্সবাজার সদর উপজেলায়। এখানে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৩ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭ জন। এছাড়া চকরিয়া উপজেলায়ন আক্রান্ত হয়েছে ৩১১ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন, উখিয়া উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৬ জন ও মৃত্যু ৬ জনের। টেকনাফ উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০০ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন, রামু উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৯০ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন ১ জন, পেকুয়া উপজেলায় ৯৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মহেশখালী উপজেলায় আক্রান্তের সংখা ৯০ জন আর মৃত্যু হয়েছে ১ জনের এবং কুতুবদিয়া উপজেলা মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ জন আর মৃত্যুবরণ করেছেন ১ জন।
জানা গেছে-কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের করোনা পরীক্ষার ল্যাবে জেলার আট উপজেলা ছাড়াও ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প, বান্দরবান জেলা ও এর কয়েকটি উপজেলা এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া থেকে সন্দেহভাজন রোগীর করোনা নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা করা হয় প্রতিদিন। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও জনগণের উদাসীনতায় সারাদেশের মত কক্সবাজার জেলায়ও করোনা রোগির সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
কক্সবাজার চেম্বার ও সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, করোনা যেহেতু একটি ছোঁয়াচে ভাইরাসজনিত রোগ সেহেতু শুরু থেকেই এ বিষয়ে সরকার ও প্রশাসন নানা সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালিয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে সচেতনতা চালিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা ও সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনও। কিন্তু সবকিছুকেই উদাসীনভাবে নিয়েছে সাধারণ মানুষ। ফলে এখন এর কুফল দৃশ্যমান হচ্ছে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ অনুপম বড়ুয়া বলেন, কমেক ল্যাবে দিন দিন সন্দেহভাজন করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫’শ থেকে ৬’শর মত সন্দেহভাজন রোগির নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের এই ল্যাবে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলা ছাড়াও বান্দরবান এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি সকলকে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।