• ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দিন

আমাদের দেশে দেখা যায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় যে রোগ নিয়ে রোগীরা ভর্তি হয় ছাড়পত্র পাওয়ার সময় দেখা যায় রোগীর শরীরে আরো কয়েকটি রোগবালাই দেখা দেয়।চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় ২৪ ঘন্টা পরে রোগীর শরীরে যে নতুন রোগ দেখা দেয় তাকে nosocomial infection বা Hospital Acquired Infection (HAI) হাপাতালে অর্জনকৃত রোগ।।
এর জন্যে আমরা নিজেরাই দায়ী!! সবাই একটু দায়িত্বসচেতন হলে এটি অনেকাংশে কমবে।
এবার আসুন জেনে নিই এ ইনফেকশন বা সংক্রমন টা হয় কিভাবে ঃ

* সরাসরি সংস্পর্শ।
যেমনঃ
১.স্পর্শ, হ্যান্ডশ্যাক,চুমু বা যৌনমিলন
২. হাঁচি,কাশি, কফ, থুতু,মাধ্যমে।
৩. বমি,মল মুত্রের মাধ্যমে।
৪.রক্তের মাধ্যমে, সর্প্শের মাধ্যমে।
* পরোক্ষ সংস্পর্শ
যেমনঃ রোগীর বিছানা ও চারপাশ, সেবা প্রদানের জায়গা।

* বাহকদ্ধারা সংক্রমণঃ
যেমনঃ মশা, মাছি,কুকুর,ইদুর বা আক্রান্তব্যাক্তি।

ইন্টারন্যাশনাল পেশেন্ট সেইফটি গোল (IPSG) এর ৫ নং এ বলা আছে রোগীর সংক্রমন প্রতিরোধ করা।

আমাদের দেশে হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থপনা পর্যাপ্ত নয় ফলশ্রুতিতে হসপিটাল একোয়ারড ইনফেকশন বেশী হচ্ছে । এক্ষেত্রে আমাদের হাসপাতালের ধারন ক্ষমতার দুই তিনগুন রোগী ভর্তি রাখতে হয় ফলে সীমিত রির্সোসে এত কিছু করা সম্ভব হয়না। এবং হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের অতিরিক্ত চাপ সংক্রমনের জন্যে অনেকাংশেই দায়ী।
একজন রোগীর সাথে একজন দর্শনার্থী এ অভ্যাসটা আমরা এখনো করতে পারিনি। যার ফলে রোগীর স্বজনদের সাথে আসা রোগবালাইগুলো হাসপাতালের রোগীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। এজন্যবলা হয় হাসপাতাল সুপার স্প্রেডার এরিয়া। আমরা সাধারণ বর্জ্য ( যেমনঃ
খাবারের ময়লা,বিভিন্ন প্যাকেট,টিস্যু ) জীব ময়লা যেমনঃ মল,মুত্র,রক্ত,প্রশাব, বমি,হাঁচি, কাশি,কফ থুতু) আমরা আলাদাভাবে ফেলতে অভ্যস্থ না।
আমরা হাত ধৌত করতে অভ্যস্থ নয়।
এ দীর্ঘ সংক্রমণের কারণ আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে অর্থ ও সময় দুটোই অপচয় হচ্ছে।সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটি হবে সেটি হল অদূর ভবিষ্যতে আমরা এন্টিবায়োটিক সংকটে পড়ব এটিকে সুপারবাগ বলা হয়।
নিম্নোক্ত অভ্যাসগুলো করলে আমরা সংক্রমন প্রতিরোধ করতে পারব।
১.আমাদের কে প্রতিটি কাজের পুর্বে এবং পরে হাত ধৌত করার অভ্যাসটা চালু করতে হবে। সেবাদাতা ও সেবা গ্রহীতারা সার্বজনীনভাবে ভাবে এ অভ্যাসটা করলে আমাদের সংক্রমনের হার অনেকটা কমে যাবে।
২. হাঁচি, কাশি ও কফ শিষ্টাচার মানা : যেমন : হাঁচি,কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু, রুমাল বা হাতের কুনুই ব্যবহার করা।
৩। সাধারন ময়লা ও জীব ময়লা পৃথকীকরণ ঃযেমনঃ মল,মুত্র,রক্ত,প্রশাব, বমি,হাঁচি, কাশি,কফ থুতু আলাদা স্থানে ফেলানোর অভ্যাসটা আমাদের করতে হবে। আর সাধারণ উচ্ছিষ্ট যেমন ঃ খাবারের ময়লা, প্যাকেট, আলাদাভাবে ফেলতে হবে।
৪। হাসপাতালে দর্শনার্থীর নিয়ন্ত্রণ ঃ হাসপাতালে অতিরিক্ত দর্শনার্থী রোগীর সংক্রমণের হার বাড়িয়ে দেয়।
তাই আমরাই পারি দর্শনার্থীর ভীড়টা কমাতে।

সম্প্রতি সরকারি ও বেসরকারী উদ্দ্যেগে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে সংক্রমণ প্রতিরোধ কাজ হচ্ছে।
তৎমধ্যে ২৫০ শয্যা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এ সংক্রমণ প্রতিরোধ কার্যক্রম চলমান,। এখানে একটি সংক্রমন নিয়ন্ত্রণ কমিটি আছে । এর তত্ত্ববধানে
বর্তমানে এ হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থপনা কার্যক্রম, হাতধোয়া প্রশিক্ষন, হাসপাতাল পরিস্কার পরিছন্ন চেকলিস্, বিগ ক্লিনিং প্রভৃতি চলমান।
এ হাসপাতালের সংক্রমণ অনেকখানি কমেছে। আমরা আশাবাদী এ টিমের নেতৃত্বে অনেকদূর এগিয়ে যাব।
আমাদের টিমের সহযোগী হয়েছে আর্ন্তজাতিক সংস্থা এম এস এফ( msf).

আসুন একটু সচেতন হই রোগীদের সংক্রমণের হারটা কমায়।
হাত ধোয়ার অভ্যাস করি।


ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দিন , ডেপুটি ফোকাল পারসন ,আইপিসি কমিটি ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল কক্সবাজার