সিবিএন ডেস্ক:
দেশে করোনা পজিটিভের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এরইমধ্যে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে যাদের মৃত্যু হচ্ছে বা যারা উপসর্গ থাকার পরও পরীক্ষা করাচ্ছেন না, তাদের অনেকের হিসাবই এর বাইরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে যদি রোগী সংখ্যা বাড়তে থাকে আর সংক্রমণ রোধ না করা যায়, তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।

দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার ৯৫তম দিনে শুক্রবার (১২ জুন) আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ৮১ হাজার ৫২৩ জন। আর মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে এক হাজার ৯৫ জনে।

জুনের শুরু থেকে প্রতিদিন দুই হাজারের ওপরে কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এরমধ্যে তিন হাজার ছাড়িয়েছে তিন দিন। বিগত দিনগুলোর তুলনায় শুক্রবার সর্বোচ্চ মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এদিন ৪৬ জনের মৃত্যুর কথা জানান অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) অধিদফতর থেকে জানানো হয়, তার আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ১৮৭ জন। শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ২১ শতাংশ, মারা গেছেন ৩৭ জন। গত ১০ জুনের তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হন তিন হাজার ১৯০ জন, শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ, মারা গেছেন ৩৭ জন।

৮ জুনের হিসাব অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয় ৪২ জনের আর শনাক্ত হন দুই হাজার ৭৩৫ জন। ৭ জুনের তথ্যানুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয় ৪২ জনের আর শনাক্ত হন দুই হাজার ৮৪৩ জন। ৬ জুনের তথ্যানুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয় ৩৫ জনের আর শনাক্ত হন দুই হাজার ৬৩৫ জন। ৫ জুনের তথ্যানুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয় ৩০ জনের আর শনাক্ত হন দুই হাজার ৮২৮ জন। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকসহ বিশেষজ্ঞরা।

করোনার বিস্তার বন্ধ করতে বড় এলাকাজুড়ে পূর্ণ ও কঠোর লকডাউন প্রয়োজন বলে মনে করে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। আর তাই সারা দেশে আক্রান্ত ও ঝুঁকির মাত্রার ভিত্তিতে যতটা বড় এলাকায় সম্ভব জরুরি লকডাউনের সুপারিশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। একইসঙ্গে রোগী বাড়তে থাকলে হাসপাতালগুলোতে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এভাবে যদি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে তাহলে ভয়াবহ বিপর্যয় হবে মন্তব্য করে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এভাবে রোগী সংখ্যা বাড়লে তো হাসপাতালে জায়গা পাওয়াই কঠিন হয়ে যাবে। অলরেডি যেসব হাসপাতালে কোভিডের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো ভর্তি হয়ে গেছে। জায়গাই তো খালি নাই। সরকারকে চেষ্টা করতে হবে। তারচেয়েও জরুরি, রোগের সংক্রমণ যাতে কমে সে ব্যবস্থা নেওয়া। যেকোনোভাবেই রোগী সংখ্যা কম হোক এই প্রার্থনা করি। যেন হাসপাতালে যাওয়া না লাগে, যেন আইসিইউ না লাগে। এজন্য প্রতিকার, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রতি জোর দিতে হবে বেশি, যাতে সংক্রমণের হার কমে যায়।‘

মানুষ কোনও নির্দেশনা মানছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তারা প্রতিকার, প্রতিরোধ কিছুই নিচ্ছে না। এজন্য বিপর্যয় রোধে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সচেতন হতে হবে।’

কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে সেবার পরিধি বাড়ানো দরকার। এখনি রোগী ভর্তি হতে পারছে না। এ সমস্যার সমাধান হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, দ্রুত হাসপাতালগুলোতে শয্যা বাড়ানোর কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। একইসঙ্গে অন্যান্য উপকরণও বাড়াতে হবে, বিশেষ করে অক্সিজেন সরবরাহ।

প্রথম কথা হচ্ছে রোগী বাড়তে দেওয়া যাবে না- এই মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘রোগী যদি বাড়ে তাহলে যতই চেষ্টা করা হোক, সীমিত সম্পদ, সীমিত স্বাস্থ্য অবকাঠামো, সীমিত লোকবল দিয়ে সেটা ম্যানেজ করা যাবে না। তাই প্রথম কাজ রোগী যেন না বাড়ে সে ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে।‘

রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসার ওপর জোর দিতে বলেন অধ্যাপক বেনজির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রোগী যখন প্রাথমিক পর্যায়ে থাকবে তখনই ব্যবস্থা নিতে হবে তিনি যেন মারাত্মক পর্যায়ে না যান। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকা, পাশাপাশি দরকার চিকিৎসক, নার্সসহ সবার ভালো মানের প্রশিক্ষণ।’

এখনই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘বাস্তবতা সবারই স্বীকার করা উচিত। রোগী এভাবে বাড়লে বর্তমানে থাকা হাসপাতালগুলোর বেডে সংকুলান হবে না।’ এক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি বিষয়ের একটি ক্যাপাসিটি, একটা লিমিট থাকে। যদি দিনের পর দিন রোগী বাড়তে থাকে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ডরমেটরি যেসব আছে সেসবকে অস্থায়ী হাসপাতাল বানাতে হবে। মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে আগে।’

তিনি আরও বলেন, রেড-ইয়োলো গ্রিন জোন করা হচ্ছে, এটা যদি ঠিকভাবে পালন করা যায় তাহলে সংক্রমণের যে অব্যাহত ধারা এটা হয়তো কমে আসতে পারে।