এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া:

মহামারি করোনা ভাইরাসের এই বৈশ্বিক দুযোর্গে অসহায় হয়ে পড়েছেন সর্বসাধারণ। চারিদিকে লাশ হচ্ছে মানুষ। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে যুদ্ধ হিসাবেই ঘোষণা এসেছে। কিন্তু জনবল, অবকাঠামো ও উপকরণ সঙ্কটে গৃহীত পদক্ষেপ যেন অসম যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় করোনাযুদ্ধে সম্পৃক্ত হতে চান তরুণ প্রজন্ম।

দেশের ক্রান্তিলগ্নে কক্সবাজারের চকরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর গিয়াস উদ্দীনের নেতৃত্বে বেশ কিছু তরুণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে চকরিয়ায় একটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফিল্ড হসপিটাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে কম এবং মাঝারি উপসর্গ আছে এমন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।

করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে তারা মনে করেন, এই অবস্থায় আর বসে থাকার সুযোগ নেই। তাই যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন এই স্বপ্নবাজরা। করোনা আক্রান্তদের জন্য এই ফিল্ড হসপিটালে থাকবে ৫০ শয্যা, এটাকে তিন স্তরে সাজানো হবে। ৩৫ বেড থাকবে আইসোলেশন, ১০ শয্যা থাকবে এইচডিইউ, ৫শয্যা থাকবে আই সি ইউ সুবিধা। সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সাপোর্ট, স্বাভাবিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, থাকবে ভালোবাসাময় সেবা।

কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে করোনাজয়ে সাহস সঞ্চারের পাশাপাশি তার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু এমবিবিএস ডাক্তার, সেবিকা ও স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবে বলে জানিয়েছেন ‘চকরিয়া ফিল্ড হসপিটালের উদ্যোক্তারা।

চকরিয়া সিটি হসপিটালের এমডি ও ‘চকরিয়া ফিল্ড হসপিটালের উদ্যোক্তা প্রফেসর জুবাইদুল হক বলেন, যেভাবে রোগী বাড়ছে বেডের সংকোলান হচ্ছে না, আর সব রোগী বেডে রাখে না। প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ রোগী বাসায় থেকেই চিকিৎসা করতে পারে। কিন্তু করোনা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত হসপিটাল হলে সুবিধা টা বেড়ে যায়। ফিল্ড হসপিটাল তৈরির কথা উলে­খ করে তিনি আরও বলেন, এখন সারা দেশে সংক্রমণের হার ব্যাপক, চিকিৎসা সেবা খুব ক্ষীণ, তাই ফিল্ড হসপিটাল খুব গুরুত্বপূর্ণ, হসপিটাল যদি বাড়ানো যায় তা আমাদের জন্য ভালো।

উদ্যোক্তাদের মুখপাত্র হিসেবে আ ক ম গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘বৈশ্বিক এই দুযোর্গে আমরা সবাই অসহায় হয়ে পড়েছ। আগামী ১৫ দিন পরে কি হবে কেউ জানিনা। এই অবস্থায় আমাদের আর বসে থাকার সুযোগ নেই। আসুন আমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে মানুষের পাশে দাঁড়াই।

‘আমরা ৫০ জন চিকিৎসা সেবা পাবে এমন একটা হসপিটাল করতে চাই। যেখানে অক্সিজেন সাপোর্ট, এইচডিউ আই সি ইউ, সহ স্বাভাবিক চিকিৎসাগুলো হবে, থাকবে ভালোবাসাময় সেবা।এটি কোন আত্মপ্রচারমূলক প্রকল্প নয় উলে­খ করে তিনি বলেন, ‘এটা কোন আত্মপ্রচার প্রকল্প হবেনা। আমরা নিজেরা বাচাঁর জন্য প্রকল্প টি, আমরা করেছি বলে আমিত্ব জাহিরের কোন প্রকল্প হবেনা এটি। সত্যিকার অর্থে মানুষের জন্য একটা সেবার জায়গা হবে। সেখানে করোনা রোগীদের অন্তত ৫ বেলা খাবারের ব্যবস্থা, চিকিৎসা, সেবা, মানসিক সাপোর্ট পাবে।’ সবার কাছে আমাদের হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত পাবে।

আ ক ম গিয়াস উদ্দিন তরুণদের আহŸান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগের সাথে যদি কেউ সারথী হতে চান, তাহলে হাত তুলুন। অন্তত ৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই ‘ ফিল্ড হসপিটালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে, ইতিমধ্যে যেকোনো একটি ভবনকে ফিল্ড হসপিটালে রুপান্তরের জন্য ৫০ টি মেডিকেল বেড তৈরির কাজ চলছে।

উদ্যোক্তা ও জেলা ছাত্রলীগ নেতা শামীমুল ইসলাম পাপেল বলেন ‘গিয়াস স্যারের নেতৃত্বে চকরিয়ার কিছু স্বপ্নবাজ তরুণদের উদ্যোগে চকরিয়া পেকুয়ার, লামা বান্দরবান, মহেশখালী -কুতুবদিয়ার করোনা আক্রান্তদের জন্য তৈরী হতে যাচ্ছে নতুন ‘ফিল্ড হসপিটাল’। আমরা পঞ্চাশ জনের দায়িত্ব নিতে চাই। আপনি কতজনের দায়িত্ব নেবেন? আসুন একসঙ্গে কাজ করি। আমাদের শক্তিগুলো এক জায়গায় করি। ভালোবাসাগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করি। ঐক্যবদ্ধ ভালোবাসার শক্তি অনেক বড়শক্তি।’

‘এই হসপিটালের মাধ্যমে দেশের কিছু মানুষকে আমরা বাঁচাতে চাই। এখানে থাকবেনা কোন রাজনৈতিক মত পার্থক্য। এখানে থাকবে শুধুই করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির অভিন্ন শপথ। স্বপ্নবাজ তরুনদের এ উদ্যোগের পাশে আশীর্বাদ হয়ে সাথে থাকুন। করোনামুক্ত একটি সকালের প্রত্যাশায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এগিয়ে যাবো।