সিবিএন ডেস্ক:
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে যাদের শরীরে কোনো উপসর্গ নেই, তারা খুব বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জিং ডিজিজ বিভাগের প্রধান মারিয়া ভন কেরখোভ।

সোমবার (৮ জুন) করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।

মারিয়া ভন কেরখোভ বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য ও পরিসংখ্যান রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে সব রোগীর শরীরে উপসর্গ নেই তাদের থেকে অন্য কারও শরীরে সংক্রমণ ছড়ানোর হার খুব কম। বলতে গেলে বিরল, এটা খুবই বিরল। তাই সরকারের উচিত যেসব করোনা আক্রান্ত মানুষের শরীরে উপসর্গ রয়েছে তাদের খুঁজে বের করা, আইসোলেশনে রাখা এবং চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা।’

মারিয়া বলেন, ‘এ ব্যাপারে আরও গবেষণা আরও পরিসংখ্যান দরকার। কারণ, আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি দেশের থেকে তথ্য এসেছে। যারা খুব ভাল করে কনট্যাক্ট ট্রেসিং করেছে। তারা দেখেছে, অ্যাসিম্পটম্যাটিক পেশেন্টদের থেকে অন্যজনের শরীরে খুব বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না। এটা খুবই বিরল।’

তিনি বলেন, ‘একটা কথা বরং আমাদের স্পষ্ট বুঝে নেওয়া দরকার। যে রোগীদের উপসর্গ রয়েছে তাদের যদি আমরা চিহ্নিত করতে পারি, তারা যাদের সংস্পর্শে এসেছেন তাদের আইসোলেশনে বা কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পারি তা হলে সংক্রমণ ছড়ানোর হার এক ধাক্কায় কমে যাবে।’

এর আগে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, করোনার সংক্রমণ নিয়ে সব থেকে উদ্বেগ রয়েছে অ্যাসিম্পটম্যাটিক রোগীদের নিয়ে। কারণ, তাদের থেকে সংক্রমণ ছড়ালে তা ধরাই যাবে না। সংক্রমণ মোকাবিলা তখন কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্তারা সেই ধারণা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সোমবার জানায়, এ ভাবে সংক্রমণ ছড়াতেই পারে, কিন্তু এটাই সংক্রমণ ছড়ানোর প্রধান উপায় নয়।

এদিকে, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। তিনি বলেন, ‘চীন থেকে ডিসেম্বরে যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর মিলেছিল, ধীরে ধীরে তার কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো। ইতালিতে মৃত্যুমিছিল শুরু হয়ে যায়। তবে ইতালি এখন সংক্রমণের রাশ টেনেছে অনেকটাই। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৩৫ হাজারের কাছাকাছি। সে তুলনায় সংক্রমণের হিসাবে ইতালিকে টপকে গেছে ব্রাজিল, রাশিয়া, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও ভারত।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আগামী দিনে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় করোনার সংক্রমণ ও এর কারণে মৃত্যু আরো বাড়বে। কিছু দেশ অর্থনীতিকে চাঙা করতে লকডাউন শিথিল করার কথা ভাবছে। কিন্তু তাতে বিপদ আরো বাড়বে। টেড্রস আধানম জানিয়েছেন, গত রোববার বিশ্বে যত সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তার ৭৫ শতাংশই ছিল আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত ১০টি দেশে।

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে করোনার সংক্রমণ ৭০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু চার লাখেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতি আরো শঙ্কাজনক। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু এক লাখের বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, সংক্রমণের গতি বাড়ছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে। ভয়ানক অবস্থা ব্রাজিল ও মেক্সিকোতে। গোট দক্ষিণ আমেরিকায় করোনায় সংক্রমিত ১২ লাখেরও বেশি। মৃত্যু হয়েছে ৬০ হাজারের বেশি মানুষের।