রাইজিংবিডি:
আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। বর্তমান সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি নিয়ে বাজেট প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত।

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতি অনেকটাই বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আসন্ন ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বর্ক্তৃতা ছাড়া বাজেটের অন্যান্য দলিলাদি ইতিমধ্যে সরকারি মুদ্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি দেখানো হয় ৫ শতাংশ। যা দেশের আর্থিক খাত থেকে মেটানো হয়। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি দেখানো হয়েছিল ৫ শতাংশ। আশা করা হয়েছিল রাজস্ব আদায়ে গতি আসবে। বিশেষ করে করের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়ানো হবে এবং এ ঘাটতি কমবে। কিন্তু মহামারি করোনারভাইরাস দেশের অর্থনীতিতেও প্রবল ধাক্কা দিয়েছে। এর ফলে বাজেট ঘাটতি না কমে উল্টো সংশোধিত বাজেটে বাড়াতে হয়েছে।

অর্থমন্ত্রণালয় থেকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘাটতির যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছর বাজেট ঘাটতি ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি বাড়ছে ৩০ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা।

অন্যদিকে আগামী অর্থবছর অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করা হচ্ছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। চলমান অবস্থায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর পক্ষে এ অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সংশোধিত বাজেটে এটা কমিয়ে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫১০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সংশোধিত বাজেটের চেয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ২৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করা হবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫ লাখ এক হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। আর আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটের চেয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৫৫ হাজার ৪০১ কোটি টাকা বেশি প্রস্তাব করা হবে।

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে দেশের আর্থিক খাতে যে ক্ষতি হয়েছে তা কমিয়ে আনা এবং এর প্রভাবকে নমনীয় করার উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন চূড়ান্ত করেছে। করোনার প্রভাবের মধ্যেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সবচেয়ে বড় অবদান থাকবে কৃষি খাতের। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, দেশের জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মোট কর্মসংস্থানের ৬৩ শতাংশই কৃষিখাতে।

অর্থমন্ত্রণালয় মনে করছে, করোনভাইরাস আগামী অর্থবছরে দেশের জিডিপি বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও বাজেটের ঘাটতির ওপর প্রভাব ফেলবে না।

এ বিষয়ে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের কৃষির ওপর নির্ভর করে জিডিপি ৮ শতাংশের বেশি হওয়ার আশা করাটা খুবই কঠিন হবে। কারণ করোনাভাইরাসের কারণে দেশের আমদানি-রপ্তানি ও পরিবহনের মতো অন্যান্য খাতগুলোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশও সেই আন্তর্জাতিক প্রভাবের বাইরে নয়।’

তিনি বলেন, ‘যারা মনে করছেন চলমান পরিস্থিতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না, আমি তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। এবারের বাজেট হবে অনেকটাই ঋণ নির্ভর। সেখানে প্রবৃদ্ধি নিয়ে উচ্চাশা না করাই ভালো।’

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের সদস্য ড. শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস যদি সঠিক হয় তা হলে পরবর্তী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের উপরে হবে। এছাড়া, দাতা সংস্থাগুলো ধারণা করছে মূল্যস্ফীতি কম হবে। তাদের এ ধারণা ঠিক। কারণ এ বছর সব ধরনের ফসল ভাল উৎপাদন হয়েছে।’