ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান নাজিরঃ

মে মাসের ১১ তারিখে ও কক্সবাজারের রোগী ছিল ১০১ মাত্র। তার ২০ দিন পর মে ৩১ এ ৭৯৫! মৃত্যুর মিছিলও ক্রমশই লম্বা হচ্ছে। আজ ভোরে খবর পেলাম আমার গ্রামের আমার সময়ে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল( সে অবশ্যই দাখিল দিয়েছিল), সে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে। আল্লাহ তাকে উপযুক্ত প্রতিদান দিক।

কক্সবাজার একটা ছোট্ট প্রান্তিক শহর। পর্যটকদের আনাগোনা ও নাই। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রশাসন, পুলিশ, র‍্যাব, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জন প্রতিনিধি, সাংবাদিক, উকিল, শিক্ষক, ব্যাংকার সমানে আক্রান্ত হচ্ছে।

এই শহরে ৩০০ কাছাকাছি রোগী। কত আর জনসংখ্যা। করোনা আসার আগে ধারণা ছিল কক্সবাজারের মানুষ যেহেতু একতাবদ্ধ ইতালির সেই শহরের মত কক্সবাজারকে করোনা মুক্ত রাখা যাবে। ধারণা পাল্টে গেল। বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তিক শহরের মধ্যে কক্সবাজারের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। প্রশাসনসহ আইন শৃংখলা বাহিনী জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়ল। কিন্তু জনগণ নিজেরা একটু চিন্তা না করলে…। সামান্য মুখে মাক্স পরে রোগী ৩ ফুট দূরে অবস্থান করলে যেখানে ৭০% রোগ কম হওয়ার সম্ভাবনা সেখানে এই কাজটা করতে এত পেশার মানুষের এত ত্যাগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না। কোন টা রোগী; কোনটা ভাল মানুষ, এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে তা বুঝা বড়ই কঠিন। বড়ই দূরহ।

তাই আমরা কি নিজেদের প্রয়োজনে আমার আশেপাশে যারা থাকে সবাইকে রোগী মনে করে মুখের মাক্স টা নিশ্চিত করে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে পারিনা?

প্রায় ৫০০ কাছাকাছি রোগী হোম আইসোলেশনে আছে। ৪৭% রোগীর স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক হোম আইসোলেশন থাকার ঘর অপ্রতুল। অধিকাংশই ২ রুমের টিনের চালা ঘরে পরিবারের সব সদস্য মিলে থাকে। বাকি যাদের আছে তাদের একটা অংশ পারেন না বাচ্ছাদের দূরে রাখতে। ফলে আইসোলেশন ব্যহত হয়। একঘরে একজন পজিটিভ হলে আরো ৪/৫ জন বাড়ে। তাদের আবার হাসপাতাল ও দরকার হয় না কারন তাদের কোন উপসর্গ নাই। তাই তাদের যদি কোন হোটেল, সরকারি বিল্ডিং অন্তত ১০-১৪ দিন রাখা যেত, নতুন রোগী হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেত।

ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির
সহকারী অধ্যাপক,
ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন
২ জুন ২০২০