এস. ইউ. সৌরভ


কক্সবাজার জেলার প্রবীণ আইনজীবী তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী ২৮ জানুয়ারি ১৯৩৭ সালে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের চাকমার কাটা গ্রামে জম্মগ্রহণ করেন। পিতা-হাসান আলী চৌধুরী একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী এর প্রথম পুত্র। গ্রামে প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পেকুয়া হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। অষ্টম শ্রেণীতে কক্সবাজার হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৫৫ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঐ সময়ে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মহলের মধ্যে ছিলেন সাবেক বিচারপতি ও মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল কবির চৌধুরী, জয়নাল আবেদিন, নরুল হুদা, ডাক্তার আলম, সালামত উল্লাহ প্রমুখ। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ হতে ১৯৫৭ সালে ইনটারমিডিয়েট ও ১৯৬০ সালে একই কলেজ হতে স্নাতক (বিএ) পাশ করেন। ঐ সময়ে তার বন্ধু মহলে ছিলেন ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস, মহেশখালীর বন্ধু রশিদ মিয়া ও রফিকুল্লাহ, আব্দুল কুদ্দুস প্রমুখ। ১৯৬১ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র আন্দোলনে ইকবাল হলের ১৩৭ কক্ষ হতে পেকুয়ার বন্ধু নুরুল হুদা সহ গ্রেপ্তার হন। পরে ছাত্রাবাসের প্রভোষ্ট গিয়ে মুক্ত করেন। ১৯৬৫ সালের ৮ ই আগষ্ট বৃহত্তর গর্জনিয়ার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রশিদ মিয়া চৌধুরীর প্রথম কন্যা শাহজাহান বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। বিবাহ অনুষ্ঠানে ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমিরুল কবির, ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ১৯৬৬ সালের ১১ই এপ্রিল চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে ঢাকা বার কাউন্সিলের সদস্য হন। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামস্থ কক্সবাজার সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। (একই কমিটিতে সভাপতি ছিলেন বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী)। একই বছরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে কার্যালয়ে “আইন কর্মকর্তা ” হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েও পিতার পরামর্শে স্ব পেশা / স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত থাকেন এবং ১৯৬৮ সালে নভেম্বর মাসে পিতার আদেশে কক্সবাজার কোর্টে যোগদান করেন। তিনি সেখানে সিনিয়র হিসেবে পান এডভোকেট জ্যোতিস্বর চক্রবর্তী ও যতিন নন্দীর মত স্বনামধন্য আইনজীবীগণকে। ১৯৮০ ও ১৯৮১ সনে পরপর দুই বার কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ হতে ১৯৮৯ সাল পযর্ন্ত রামু উপজেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে সম্মানজনক ক্রেস্ট প্রদান করেন তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম চৌধুরী। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৩ সালে দীর্ঘ (৪৭বছর/অর্ধ-শত) বছরের ক্যারিয়ারে ইতি টানেন সেচ্ছায় অবসর গ্রহণের মাধ্যমে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখে তার বড় ছেলে সোহেল ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করলে মানসিকভাবে তিনি ভেঙ্গে পড়েন। বড় ছেলের মৃত্যু শোক শেষ না হতেই ২০২০ সালের পবিত্র রমজানের পনেরতম দিন ও ১০ই মে ভোর ৬.৩০ মিনিটে কক্সবাজার শহরের শেখ রাসেল সড়কের নিজ বাস ভবনে, রোজা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে সল্পভাষী, সৎ ও সুন্দর মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি স্ত্রী, পূএ, কন্যা ও নাতি -নাতনি রেখে গিয়েছেন। তিনি পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন (তার ব্যক্তিগত ডায়েরি হতে সংগৃহীত )। আল্লাহকে ভয় কর, সৎ কাজ কর, অসৎকর্ম থেকে ধৈর্য্যসহকারে বিরত থাক। তবেই ইহকাল ও পরকালিন জীবন হবে আনন্দদায়ক, সুন্দর ও স্বার্থক। আমার বাবা এডভোকেট তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী’ই আমার জীবনের সেরা আদর্শ, আমার স্বপ্ন, আমার সবকিছুর প্রেরণা, পথচলার সারথি, অদম্য সাহস ও মনোবল।

(লেখক : এস, ইউ, সৌরভ, কনিষ্ঠ পুত্র প্রভাষক (হিসাববিজ্ঞান) বান্দরবান কালেক্টরেট কলেজ। পার্বত্য বান্দরবান জেলা।)