শান্ত নূর


 

সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান প্রায় শেষ হয়ে এলো এবং পবিত্র ঈদু-উল-ফিতর দরজায় এসে কড়া নাড়লো। প্রতি বছর দুইটি ঈদ আমাদের জীবনে নিয়ে আসে আনন্দের বন্যা। কিন্তু প্রতিটি মুসলমানের মন ও মননে ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও প্রভাব অনেক বেশি। পূর্ণ একমাস সিয়াম সাধনার পর এই উৎসব মুসলিম জাতির প্রতি সত্যিই মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে অনেক বড় নেয়ামত ও পুরস্কার।

বাঙালি মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। প্রায় এক মাস সিয়াম সাধনার পর এই উৎসব আনন্দের জোয়ার বইয়ে দেয়। কিন্তু এবারের দুর্যোগকালীন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এই আনন্দ আমরা খুঁজে নেব বিপন্নজনের মুখে হাসি ফুটিয়ে অন্ধকারের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন অনুভূতির বোধ আরও পুষ্ট করে।

আমরা সামাজিক পরিসরে ঈদের জামাতের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্বের যে বন্ধন আরও দৃঢ় করে নেওয়ার অবকাশ খুঁজি, তা এবার খুঁজে নিতে হবে ঘরে বসে কিংবা সামাজিক-শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে অন্যরকম প্রয়াসে।ঈদ উৎসবে কক্সবাজারে নানা রকম অনুষ্ঠানের রেওয়াজ গড়ে উঠলেও এবার তা হচ্ছে না। তাতে নিরাশ হওয়ার কিংবা মন খারাপের কিছু নেই।

আমাদের সচেতনতায়-সতর্কতায় যদি বিপর্যয় থেকে রক্ষার পথ প্রশস্ত হয়, তাহলে তাই তো অবলম্বন করা শ্রেয়। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা ঐতিহ্যকে বুকে লালন করে আগামীর জন্য পথ রচনা করব। উৎসব মানুষকে মানবিকতার যে মহামিলন ক্ষেত্রে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, আমরা সেই অনুভূতি নিয়েই এগিয়ে যাব। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সামাজিক বন্ধন, পারস্পরিক সহমর্মিতা আরও পুষ্ট করব নব অঙ্গীকার প্রত্যয়ে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রায় গোটা বিশ্বে মর্মন্তুদ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আমরাও এর বাইরে নই। রমজানের শেষে সমাগত ঈদে আমরা আমাদের ধর্মীয় কর্ম সম্পন্ন করব স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে, সরকার নির্দেশিত নিয়মনীতি মান্য করে। এবার সঙ্গত কারণেই উৎসব আকারে ঈদুল ফিতর উদযাপনের অবকাশ নেই। তবুও অনুভূতির তো নানা রকম তাগিদ থাকেই।

আসন্ন ঈদে করোনার ঝুঁকি নিয়ে ‘মৃত্যুদূত’ হয়ে বাড়ি না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেছেন, যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। যারা শপিংমলে সামাজিক দূরত্ব না মেনে ভিড় করছেন তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মনে রাখবেন যেন এটাই জীবনের শেষ শপিং না হয়।

উৎসব ধর্মের ভিন্নতার ঊর্ধ্বে মানুষকে এক জায়গায় জড়ো হতে সহায়তা করে। তাই উৎসব জীবনের আনন্দের ও মঙ্গলের। এবার দুর্যোগে আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে থাকব আরও নিবিড়ভাবে এবং সবরকম ব্যক্তিবিলাস, আড়ম্বর বর্জন করে আরও মানবিকতা প্রকাশে প্রত্যয়ী হবো।

তাছাড়া বিশ্বব্যাপি মহামারি করোনার কারণে এবারের ঈদ উৎসব এক ভিন্ন আমেজ পালন করতে হবে। ইতিমধ্যেই রমজানের দিনগুলো কোনো প্রকার আড়ম্বর ছাড়াই কেটেছে। ইফতার পার্টির দৌড়ঝাপ ছিলোনা। ছোট-বড় বিপনিবিতানগুলোতে দেখা যাচ্ছে ক্রেতাহীন শূন্যতা।

এ পরস্থিতিতে পরম করুণাময়ের কাছে ক্ষমা ও সাহায্য র্প্রাথনার মাধ্যমে দিনগুলোকে সাজিয়ে তুলবো। এটাই হোক আমাদরে এবারের ঈদরে নতুন সংযোজন।

উল্লেখিত আলেচনার আলোকে আমরা যদি কর্তব্য কাজে তৎপর হতে পারি তবেই আমাদের ঈদুল ফিতরের এ আনন্দ-উৎসব অর্থবহ ও সার্থক হবে। ঈদুল ফিতরের প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতে পারবো আমরা। ঈদ হোক সবার জন্য আনন্দের, সবাইকে ঈদ মোবারক


লেখক: জলবায়ু যোদ্ধা, তরুণ সমাজকর্মী।