আজ মনটা খুব খারাপ। ৯ মে শনিবার অনেকদিন পর মহেশখালীর নিজ বাড়িতে একটি জরুরী কাজে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে, মা মেয়ে সহ পরিবারের সবার সাথে দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলেছি শুধু। দু’ঘণ্টা পর আবার চলে আসি। কিন্তু এই প্রথমবার, বাড়িতে যাওয়ার পরে আর বাড়ি থেকে ফেরার সময় মাকে পা ছুঁয়ে সালাম করতে পারেনি। মাও আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারেনি। আমার একমাত্র মেয়েটাও বাপের বুকের সাথে জড়াতে পারেনি। আমার জীবনে একটি প্রথম ঘটনা, যে মা থাকা সত্ত্বেও মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করতে পারেনি মায়ের বুকে গিয়ে আদর নিতে পারিনি। বাড়ি থেকে কক্সবাজার শহরে ফেরার পথে শুধু এই ঘটনাটি বারবার মনে পড়ছিল আর মা ও আমার মেয়ে নতুন মনির চেহারাটা চোখের মধ্যে ভাসছিল।
সাধারণত আমি বাড়িতে গেলে প্রথমেই মাকে পা ছুঁয়ে সালাম করি। এরপর মা আমাকে জড়িয়ে ধরেন। আর আমার মেয়েটা আমার বুকের সাথে লেগে থাকতো। ফেরার পথে মাকে সালাম করতে গেলে। মা বুকে জড়িয়ে ধরে মাথার উপর হাত বুলিয়ে দিতেন। কিন্তু বিশ্বময় এখন চলছে মহামারী করোনা। এ ভাইরাসের কারনে আজ আমি যেমন আমার মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হলাম, তেমনি আমার মেয়ে তার বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হল। আমার মা, মেয়ে ও পরিবারকে নিরাপদ রাখতে বুকে পাথর চাপা দিয়ে, দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলে চলে আসতে হয়েছে। ফেরার পথে এসব কথা ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই কখন যে চোখের পানি বের হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি।
মহামারী করুনার কারণে চরম সংকটে রয়েছে বাংলাদেশের মিডিয়াকর্মীরা। ইতোমধ্যে আমার দৈনিক আমাদের সময়ের সাবেক সহকর্মী হুমায়ুন কবীর খোকনসহ কয়েকজন মিডিয়াকর্মী শহীদ হয়েছে। ফলে সবাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর সে কারণেই পরিবারকে নিরাপদ রাখতে দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলে ফিরে এলাম। একারণেই মনটা ভীষণ খারাপ। মনকে কোনভাবে সান্তনা দিতে পারছি না। যদিওবা, আমার মা বারবার বলছে, মায়ের দোয়া থাকলে ছেলের কোন বিপদ হয় না। এভাবে মহান সৃষ্টিকর্তা যেন, বাংলাদেশ কে, দেশের মানুষকে করোনা ভাইরাস সহ সব বিপদ থেকে নিরাপদ রাখে।
আজ বিশ্ব মা দিবস। কিন্তু আমার কাছে প্রতিটি দিনই মা দিবস। কারণ আমি মা ছাড়া কিছু বুঝিনা। আমার কাছে মা সবকিছু। কিন্তু অনেক সন্তান আছে, যারা এখনো মা কে কষ্ট দেয়, মাকে খাবার দেয় না, মাকে জঙ্গলে ফেলে আসে, মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। এগুলো খুব দুঃখজনক। আজকের এই দিনে প্রত্যাশা, পৃথিবীর সব মা যেন তার সন্তানদের কাছে সম্মান পায়।