মোহাম্মদ শাহজাহান

এক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের বিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি সংক্রান্ত খবর সম্প্রতি মিডিয়ায় চাওর হয়েছে। মূলধারার গণমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়াতে খবরটির শিরোনাম দেখে আমার মতো দুর্বল চিত্তের অনেকেই হয়তো ভয় পেয়েছেন। ওই খবরের মূল দুটি শব্দ হলো-‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ আর ‘বিরুপ পোস্ট’। এই খবরে ভয়ের কারণটি হলো, ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ আর ‘বিরুপ পোস্ট’ এর কোন সংজ্ঞা বা রকমফের মিডিয়ার খবরে নেই। ফলে কে যে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ আর কে যে নন কিংবা কী ধরণের পোস্টকে ‘বিরুপ পোস্ট’ বলা হবে, তা বুঝা দায়। এ সংক্রান্তে বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত কয়েকটি খবর/মতামত নিচের লিঙ্কগুলোতে ক্লিক করে পড়ে নিই। কেবল শিরোনামগুলো পড়লে যে কারো মনে হতেই পারে যে, এই নির্দেশিকা হয়তো বা সবার জন্যই। আসলেই কি তা-ই?

জনকন্ঠ এর শিরোনাম-রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিরূপ পোস্ট বা শেয়ার দিলে ব্যবস্থা

ইনকিলাব এর শিরোনাম-ফেসবুকে বিরূপ পোস্ট দিলে ব্যবস্থা : পরিপত্র জারি

পূর্বকোণ এর শিরোনাম-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করলেই ব্যবস্থা

দৈনিক কক্সবাজার এর শিরোনাম-গুরুত্বপূর্ণব্যক্তিদের নিয়ে বিরূপ পোস্ট দিলে ব্যবস্থা

বাংলাদেশ প্রতিদিন এ ডক্টর তুহিন মালিক এর কলাম- নীতিমালা যখন গীতিমালা

দুই।

এই খবরে মূলত সরকারের ২০১৯ সালের ‘সরকারী প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা’ এর কথা বলা হয়েছে। এই নির্দেশিকাটি কেবল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য; এটি কোনমতেই সবার উপর প্রযোজ্য নয়। এই নির্দেশিকায় সরকারী চাকুরেদের জন্য সোশাল মিডিয়ার অফিসিয়াল ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। নিচের লিঙ্কটি থেকে নির্দেশিকাটি পড়ে নেয়া যেতে পারে।

লিঙ্ক-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা

তিন।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, সরকারী বলি আর বেসরকারি বলি, চাকুরি যাঁরা করেন, তাঁদের অন্য সবার মতো দেশের সকল আইন-কানুন মান্য করার পাশাপাশি নিজ নিজ কর্মস্থলে প্রযোজ্য অতিরিক্ত কিছু আইন ও নিয়ম-কানুন মানতে হয়। সেদিক থেকে আলোচ্য নির্দেশিকাটি তেমন খারাপ কিছু নয়। এটির বৈধতাও প্রশ্নাতীত। কেননা, কোন সরকারী চাকুরে এটিকে চ্যালেঞ্জ করেননি কোন আদালতে।তাই এটি মানতে তাঁরা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অন্যদের মনে করার যৌক্তিক কারণ অনুপস্থিত।

চার।                  

প্রসঙ্গত বাক-স্বাধীনতার কথা উঠতে পারে। কথা বলার বা ভাব/মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নাগরিকের জন্য অত্যাবশ্যক। এই নির্দেশিকায় সরকারি চাকুরেদের ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয় না; সরকারী প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য নাগরিকদের মতোই তাঁদের আইন মেনে সোশাল মিডিয়ার ব্যক্তিগত ব্যবহারে বাধ সাধা হয়নি এতে। তবে সরকারি চাকুরেরা সোশাল মিডিয়ায় জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতকারী, রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারমূলক, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রতি বৈষম্যমূলক, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাস্ট্রকে হেয়মূলক, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক, জনগণের জন্য অসন্তোষজনক, আত্মপ্রচারমূলক এবং ভিত্তিহীন, অসত্য ও অশ্লীল তথ্য প্রচার করতে পারবেন না মর্মে বলা হয়েছে।

পাঁচ।       

মিডিয়ার খবরের শিরোনামে কৌশল থাকতে পারে। কারণ, কৌশলী শিরোনাম না হলে বা তথ্যের সারবস্তুই শিরোনামে দেয়া হয়ে গেলে পাঠক হয়তো খবরের ভেতরেই যাবেন না আর। তাই খবরের কেবল শিরোনাম পড়েই আতঙ্কিত হবার দরকার নেই। পুরো ব্যাপারটিতে সরকারি চাকুরেদেরও চিন্তিত হবার কিছু নেই। কারণ, এতে তাঁদের জন্য সোশাল মিডিয়া ব্যবহারে বিরত থাকতে বলা হয়নি; বরং সহজ কিছু নিয়ম মেনে সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

মোহাম্মদ শাহজাহানঃ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। মুঠোফোনঃ ০১৮২৭৬৫৬৮১৬