সমকাল:
প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের একটি ছোট দলকে নেওয়া হচ্ছে ভাসানচরে। শুক্রবার মিয়ানমার থেকে দালালদের মাধ্যমে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় আটক প্রায় ৭০ রোহিঙ্গাকে প্রথমবারের মতো ভাসানচরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল শনিবার সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আর জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে যারা শনিবার এসেছে, তাদের ভাসানচরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটাই হবে রোহিঙ্গাদের প্রথম কোনো দল, যাদের ভাসানচরে পাঠানো হচ্ছে।
এই রোহিঙ্গাদের আসার ব্যাপারে মন্ত্রী আরও জানান, এই রোহিঙ্গারা প্রথমে মিয়ানমার থেকে দালালদের মাধ্যমে পালিয়ে বড় ট্রলারে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তারা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করলে সে চেষ্টাও ব্যর্থ করে দেওয়া হয়। এরপর ট্রলারটি মিয়ানমারের দিকে গিয়ে নতুন কৌশল হিসেবে ছোট ছোট দলে ভাগ করে ডিঙি নৌকা ধরে বাংলাদেশের সীমান্তে আসে। তিনি আরও বলেন, এক শ্রেণির বাংলাদেশি দালালই তাদের নিয়ে আসে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে। এই দালালদের পেছনে স্থানীয় কোনো কোনো এনজিওর ইন্ধন আছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে। আর ডিঙি নৌকায় আসা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার থেকে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, আটক দালালরা জানিয়েছে যে রোহিঙ্গাদের নৌকায় করে বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য স্থানীয় কোনো এনজিওর মাধ্যমে কক্সবাজার ক্যাম্প থেকেই মাথাপিছু ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তবে তারাও এনজিওর নাম বলতে পারেননি। আটক দালালরা বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার দালাল চক্রের সঙ্গে যুক্ত।
প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গাবাহী একটি ট্রলার কয়েকদিন ধরেই সমুদ্রে ভাসছিল। এ সময় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এই রোহিঙ্গাদের নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি চাপ অব্যাহত রাখে। যদিও প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে নতুন করে রোহিঙ্গাদের নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু পরে ওই ৭০ জনকে নিতে হলো।
ড. মোমেন গতকাল শনিবারও বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গা সংকটের চাপ আর বহন করা সম্ভব নয়। এটা উন্নত দেশগুলোর বোঝার কথা। তারা কেন অন্যান্য দেশকে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে বলছেন না। তারা কেন শুধু বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সংশ্নিষ্ট দেশ ও সংস্থাগুলোকে জানানো হয়েছে।
এর আগে সরকার নোয়াখালীর ভাসানচরকে রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী করতে প্রকল্প নেয়। মন্ত্রী জানান, বর্তমানে ভাসানচর দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বসবাসের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এখানে আছে। বাধ্য হয়ে এখানে রোহিঙ্গাদের নিতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের না নেওয়া হলে এটা দেশের আরেকটা আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হতে পারত।
এদিকে সংশ্নিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, ছোট্ট একটি দলকে ভাসানচরে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানোর মূল কর্মসূচি শুরু হচ্ছে না। মিয়ানমার থেকে যারা এসেছে তাদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত থাকতে পারে এ আশঙ্কা থেকেই এ দলকে মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশতে দেওয়া হয়নি। সতর্কতার অংশ হিসেবেই পাঠানো হচ্ছে ভাসানচর।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।