শাহেদ মিজান, সিবিএন:

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে মহেশখালী এক বড়মানের বিকাশ ব্যবসায়ীর সাড়ে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে হ্যাকার চক্র। দোকানের কর্মচারীকে বোকা বানিয়ে টানা ২২দফায় এসব টাকা হ্যাকিং করে নিয়ে যায়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এত বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি টেরই পায়নি দোকানের ওই কর্মচারী। এতে পুরো মুলধন হাতিয়ে নেয়া নিঃস্ব হয়ে গেছেন হোয়ানক টাইমবাজারে নামকরা বিকাশ ব্যবসায়ী মিজানুরর রহমান।

তিনি জানান, বাড়িতে ইফতার করার জন্য বাজার-সদাই নিয়ে তিনি আছরের পর বাড়িতে চলে যান। তিনি চলে যাওয়ার পর তার মালিকানাধীন ‘বাদশা টেলিকম’ দোকানে ছিলো তার কর্মচারী আলমগীর । দোকানের মালিক মিজান চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ০১৮৮৮-৫৩৩১৪১ নাম্বার থেকে দোকানের বিকাশ পার্সোনাল ০১৮৬৬-১৮৮৬১০ নাম্বারে কল আসে। অন্যদিকে আগে থেকে মিজানের আরেকটি বিকাশ সীম লক করা হয়েছিলো। ওই হ্যাকার কল করে লক করা ওই সীমের বিষয়ে কথা বলে। হ্যাকার ওই সীম সম্পর্কে সব তথ্য বলে যা সঠিকভাবে মিলে যায়। তখন সীমটি আনলক করার অফার দেয় হ্যাকার। এতে সম্মতি দেয় দোকান কর্মচারী।

কর্মচারীর উদ্ধৃতি দিয়ে দোকান মালিক মিজান আরো বলেন, কর্মচারী লক থাকা ওই সীম আনলক করতে সম্মতি দিলে হ্যাকার তাকে কিছু নির্দেশনা চালিয়ে যেতে বলে। সে হিসেবে প্রথমে এজেন্ট সীমের বিকাশ অ্যাপস-এ গিয়ে হ্যাকারের নির্দেশনা দেয়া অপশনে ক্লিক করতে বলে এবং পিন নং কোড খুুঁজে। কর্মচারীটি পিন কোড দিলে সাথে সাথে ওই এজেন্ট সীমে থাকা ৩০ হাজার টাকা একটি নাম্বারে ক্যাশআউট হয়ে যায়। এতে আতঙ্কিত এবং হতবিহŸল হয়ে পড়ে কর্মচারী আলমগীর। তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে হ্যাকার থেকে ওই টাকা ফেরত চায়। টাকা ফেরতের জন্য আরেকটি অপশনের ক্লিক করতে বলে হ্যাকার। ওই অপশনে ক্লিক করলেও আবার ৩০ হাজার টাকা আরেকটি নাম্বারে ক্যাশআউট হয়ে যায়। এবার টাকা ফেরতের দোহাই দিয়ে এভাবে একবার একেকটি অপশনে ক্লিক করতে বলতে থাকে হ্যাকার।

একবার ক্লিক করলেই ২০ হাজা থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত পরিমাণ নতুন একেকটি নাম্বারে ক্যাশআউট হয়ে যায়। এভাবে ওই কর্মচারীকে ২৪বার ক্লিক করায় হ্যাকার। এতে একবারে ২০-৩০ হাজার টাকা করে মোট ৬লাখ ২৩ হাজার ৪১০ টাকা টাকা নিয়ে যায়। আবার কোনো নাম্বাার ছাড়া ১লাখ ৭০ টাকা গায়েব হয়ে যায়। এভাবে সীমের সব টাকা শেষ হয়ে গেলে লাইন কেটে দেয় হ্যাকার। এক পর্যায়ে ওই মুঠোফোন নাম্বার বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে বহুবার চেষ্টা করেও ওই নাম্বার সংযোগ পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে মিজানের এজেন্ট নাম্বারটা বন্ধ হয়ে যায়।

জানা গেছে, মহেশখালীতে বিকাশ ব্যবসার চালুর কারিগদের একজন হলেন মিজানুর রহমান। পুরো মহেশখালীতে তার বিকাশ মানি সাপ্লাইয়ের ব্যবসাও ছিলো। বর্তমানে তিনি ‘বাদশা টেলিকম’ নিয়ে পুরো এলাকা সুনামের সাথে বিকাশ ব্যবসা করে আসছিলেন। করোনার কারণে টাকা লেনদেনে ইনকামিং হলেও আউগোয়িং হয়নি। সে কারণে সীমে এত বিপুল টাকা জমা ছিলো বলে জানান মিজান। বলতে গেলে তার ব্যবসার সবটুকু টাকাই ছিলো ওই সীমে। এভাবে হ্যাকাররা তার মূলধন ছিনিয়ে নেয়ায় তিনি ফতুর হয়ে গেছেন। এতে তার ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এই ঘটনায় মহেশখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন বিকাশ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও আইটি বিষয়ে অভিজ্ঞ মানস বড়ুয়া বলেন, বিকাশের টাকা হ্যাকিং করার কয়েকটি চক্র রয়েছে দেশজুড়ে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার একটি হ্যাকার গ্রুপ বেশ ভয়ংকর। এইসব চক্র নিমিষেই হাতিয়ে নিয়ে মানুষের বিকাশের লাখ লাখ টাকা। কক্সবাজারের বহুজনের টাকা এভাবে হ্যাকিং করে নিয়ে গেছে চক্রগুলো। কিন্তু তাদের চিহ্নিত করা বা টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয় না।