ইউছুফ আরমান

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও শ্রমিক সংকটে কৃষকের ধান কেটে দেয়ার কার্যক্রম শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ। বিষয়টি দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। তারা এ কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। এরপর থেকে অন্যান্য সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও ধানক্ষেতে নেমে ধান কাটতে শুরু করেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন পোশাক পরে কোথাও কৃষককে কৃষি কাজে করতে দেখেছেন কি? ফেসবুকে ছবি প্রকাশ করবেন তাই ভালো কাপড় না হলে কি আর হয়? না হলে তো আবার মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই সবচেয়ে দামী পোশাকটি পড়েই ধান কাটতে হয়।

বর্তমান নেতারা ধান কাটছেন পাঞ্জাবি, স্যুট, টাই, নতুন শার্ট, প্যান্ট, বেল্ট পরে। অফিসের পোশোকেও অনেকে ধান কেটে বা ২-১ আটি ধান মাথায় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছবি প্রকাশ করছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা ও বসে নাই। কিছু নারী নেত্রীও ধান কাটতে মাঠে নেমেছেন। আমাদের গ্রামাঞ্চলে পুরুষের পাশাপশি নারীরাও কৃষি কাজে সহায়তা করে। ধানের বীজ বপন থেকে শুরু করে ধান কাটা সব কাজেই নারীরা করে থাকেন। বর্তমানে যেসব নেতা ও নেত্রী ধান কেটে সারাদেশে জনপ্রিয়তা কুঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা একটু কৃষকদের সম্পর্কে ভালো করে জানবেন। কৃষকদের পোশাক সম্পর্কে জানবেন। আপনারা যে পোশাকে ধান কাটছেন তা আসলে কৃষকের জন্য অবমাননাকর। আপনারা হয়তোবা ভাবতে পারেন পোশাকের সাথে আবার কৃষকের সম্পর্ক কী? আপনারা সারাদেশের কৃষকের পোশাক নিয়ে ভালো করে গবেষণা করবেন তারপর বুঝতে পারবেন আপনাদের এই পোশাক কৃষি কাজের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ।

জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা দলবল নিয়ে ক্ষেতে ধান কাটতে নামছেন এবং নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ধান কাটছেন। অনেক ক্ষেত্রে কাঁচা ধান কাটছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ দলবলসহ ক্ষেতের ভেতর নেমে ছবি তুলে চলে যাচ্ছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধান কেটে দেয়ার ছবি ভাইরাল হতে থাকার পর শুরু হয় সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধান কাটার সমালোচনা করে বেশ কিছু স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়। সেখানে ধান কাটার ফটোশুটের একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, এই অভিনয় কেন? কী প্রমাণ করতে চাচ্ছেন? আপনাদের জন্য ঘরে বাইরে আর কত লজ্জা পেতে হবে?
অন্যজন লেখেন, চলিতেছে সার্কাস, সার্কাসের নাম ধান কাটা, ওরে বাটপার ওরে বাটপার, মোশারোফ করিম খুব তাড়াতাড়ি একটা নাটক তৈরী করবে কথা বার্তা চলছে।

এখনই ধান কাটা ছেড়ে দেয়া উচিত। তা না হলে অর্জিত ইজ্জত ম্লান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যেই হারে মডেলিং শুরু হয়েছে, ধানও লজ্জা পাচ্ছে!

কৃষকদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ধান কাটার ব্যবস্থা করতে পারলে এই ফটোসেশন প্রক্রিয়া আর দেখতে হবে না। সুতরাং মূল সমস্যার সমাধান করে এই ফটোসেশন প্রক্রিয়া বন্ধ করুন।

লেখক পরিচিতিঃ- ইউছুফ আরমান, কলামিষ্ট, সাহিত্যিক, কক্সবাজার। ০১৬১৫৮০৪৩৮৮, ০১৮১৫-৮০৪৩৮৮
yousufarmancox@gamil.com