সিবিএন ডেস্ক:
বিশ্বজুড়ে ২৩ এপ্রিল এই মুহূর্তে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন! করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব জুড়ে যে মহামারীর হাহাকার, যে আতংক, যে আশংকা, সেখানে বিশাল এক আশা জাগাচ্ছে এই ২৩ এপ্রিল।

২৩ এপ্রিল বৃটেনে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি করোনা ভাইরাসের একটি টিকা মানুষের শরীরে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বৃটিশ সরকার এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ভীষণ সংকটের এই সময়ে বিশ্ববাসীকে আশার বানী শোনানোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতেই হয়।

সিএইচএডিওএক্স১ এনসিওভি-১৯ নামের ওই টিকাটি নিয়ে আশা জাগানিয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হলো- ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর ওপরে এটি প্রয়োগ করে সাফল্য পাওয়ার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিনটির ব্যাপারে এতটাই আশাবাদী যে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই টিকার সাহায্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারণঘাতী করোনা ভাইরাসের আক্রমণ এড়াতে পারবেন বলে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

প্রায় ৮ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী এই গবেষণাটিতে অংশ নিচ্ছেন। আমরা এখন সবাই জানি যে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাক্সিনোলজি বিভাগের একদল গবেষক তিনমাসের চেষ্টায় এই টিকাটি আবিষ্কার করেন। গবেষক দলটির নেতৃত্বে আছেন অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট।

চীন থেকেও আসছে সুখবর। চীনের দুটি কোম্পানি তাদের আবিষ্কৃত টিকার পরীক্ষা করতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। বেইজিং ভিত্তিক একটি কোম্পানি এবং উহান ভিত্তিক একটি কোম্পানি দুটি ভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রযোগ করতে যাচ্ছে। জার্মান সরকারও মানবদেহে করোনা ভাইরাসের টিকার পরীক্ষা চালানোর অনুমোদন দিয়েছে। BioNTech এবং Pfizer যৌথভাবে BNT162 নামের টিকাটি তৈরি করছে। এই দুটি সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রেও এই ধরণের পরীক্ষা চালাবে। মানবদেহে করোনা ভাইরাসের আরেকটি টিকা পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়ও। এই ধরণের পরীক্ষা চালানোতে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান Nucleus Network মার্কিন প্রতিষ্ঠান Novavax এর সঙ্গে যৌথভাবে এই সপ্তাহেই NVX-CoV2373 v নামের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরুর কথা আছে।

বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা প্রাণপনে চেষ্টা করছেন করোনা ভাইরাসের বিপদ থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে। আমাদেরকেও এসময় এগিয়ে আসতে হবে সর্বস্ব নিয়ে। আমাদের আনেক সীমাবদ্ধতা আছে, সেটা স্বীকার করতেই হবে, কিন্তু আমাদের মেধা-প্রতিভার কোনও অভাব নেই। প্রয়োজন যথাযথ ও কার্যকর উদ্যোগের। এই মুহূর্তে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর উচিৎ যেসব দেশ, প্রতিষ্ঠান পরীক্ষাগুলো চালাচ্ছে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। যাতে করে টিকার কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে এর উৎপাদন শুরু হলে দ্রুত বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেটা নিয়ে আসা যায়।

আফ্রিকার ছোট দেশ সেনেগাল থেকেও শিক্ষা নিতে পারি আমরা। উন্নত দেশের পাল্লা দিয়ে দরিদ্র এই দেশটি করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় যুগান্তকারি কাজ করছে। দেশটির বিজ্ঞানীরা টেস্টিং কিট তৈরি করছেন যার মূল্য মাত্র ১ ডলার বা প্রায় ৮৫ টাকা মাত্র! মাত্র ১০ মিনিটে এটি দিয়ে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা যায়। লক্ষণ থাক বা থাক, সবাইকে পরীক্ষার আওতায় এনে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিচ্ছে দেশটি।

আরও একটি দারুণ কাজ করে ফেলেছে সেনেগাল। আমদানির দিকে তাকিয়ে না থেকে, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তারা ভেন্টিলেটর তৈরি করেছে, মাত্র৩ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ছে এতে! আমরা সেনেগালের এই প্রযুক্তিগুলো সম্বন্ধে খোঁজ নিতে পারি, খোঁজ আসলে এখনি নেওয়া উচিত। সেনেগালের শিক্ষা তো আমরা নিতেই পারি।

আমরা আশা করি, সকলের শুভ উদ্যোগগুলোর মঙ্গল হবে, পৃথিবী মৃক্ত হবে সমস্ত নেতিবাচক খবর থেকে।

১. রেজাউল করিম চৌধুরী
নির্বাহী পরিচালক
কোস্ট ট্রাস্ট।

২. মোঃ মজিবুল হক মনির
যুগ্ম পরিচালক
কোস্ট ট্রাস্ট।