তানভীরুল মিরাজ রিপন

রানা প্লাজা ট্রাজেডির আজ ৭ বছর হলো। বাংলাদেশকে তিল তিল করে যে মানুষগুলো উন্নয়নশীল দেশে তৈরি করলো তারা গার্মেন্টস শ্রমিক। দেশের ৭০-৭৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম যোদ্ধা। তাদের শ্রমের বিনিময়ে গার্মেন্টস মালিক,গার্মেন্টস মালিক সংগঠন, রাষ্ট্র প্রবৃদ্ধি পায়। ক্ষমতাসীন সময়ে গলা উঁচিয়ে বলে দেশ উন্নত হচ্ছে,প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু এত এত শ্রমিকদের আদৌ ভাগ্য বদল হয়েছে? যে লাউ সে কদু। গার্মেন্টস মালিকেরা ঋণ খেলাপি ও মওকুফের জন্য গার্মেন্টস পুড়িয়ে দেয়, শত শত গার্মেন্টস কর্মী প্রত্যেক বছর হয়ত মৃত্যু নয়ত পঙ্গুত্ব বরণ করে। এরপর আর কেউ দেখে না। এ যেন নব্য দাস প্রথার সময় চলছে। রানা প্লাজা ধ্বসের শত শত শ্রমিক মারা গিয়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শোকবার্তা এসছে। সকলকে নাড়া দিয়েছে। বর্তমান মেয়র আতিককে যে ক্ষতিপূরণ বৈদেশিক বায়াররা দেননি তা নয়, দিয়েছে। আতিক গিলে খেয়েছোন। এবং বর্তমান সরকার সবচেয়ে বড় পুরষ্কারে তাকে পুরস্কৃতও করেছে। তিনি এখন খুনী থেকে মেয়র। ১১৩৪ জন দেশগড়ার শ্রমিকও মারা গিয়েছেন। আরও অনেকেই বরণ করেছেন পঙ্গুত্ব, অর্থনৈতিক দৈনতার অবসান হয়নি। এখনও অনেক শ্রমিক ভিক্ষা করছে, পরিবারের বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। এখনও অভিযোগ অনেক শ্রমিক তাঁর প্রাপ্য মজুরী পায়নি। আশ্বস্ত আশ্বাসের ৭টি বছর অতিক্রম হল। কোন বদল কি হয়েছে? বছরের পর বছর ঈদের আগে নয়ত বড় কোনো উৎসবের সময়ে শ্রমিকরা মিছিল করে, রাস্তা অবরোধ করে ঠিকমত বেতন তো পাচ্ছে না। বকেয়া বেতনের জন্য তাদের পথে নামতে হয়। সরকারের চেয়েও গার্মেন্টস মালিকেরা শক্তিশালী? শক্তিশালী হলে দেশের আইন আর সর্বোপরি মুক্তির জন্য প্রাণ দিয়ে গণতন্ত্র আনার কোনো অর্থ আছে? পাকিস্তানি ২২ পরিবার যেভাবে চুষে খেয়েছে ঠিক একই আদলে দেশের শ্রমিকদের চুষে খাচ্ছে গার্মেন্টস মালিকেরা। বছরের বছর গার্মেন্টসে কাজ করেও জীবন যাপন বদল করতে পারে না। কিছু হলেই লে-অফ, ছাটাই, চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি। শ্রম আইন কেন? এই অপরাধীদের প্রতি আইন প্রয়োগের কোনো ব্যবস্থাও দেখি না।

আজ সাতটা বছর হল। এ সাত বছরে অনেক গার্মেন্টস পুড়লো, অনেক শ্রমিক চাকরি হারালো, অনেকেই পঙ্গু হলো, অনেকের মৃত্যু হল। কিন্তু? কোথাও কিছু বদল হল? হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে থমকে আছে গোটা বিশ্ব। দেশের এতো এতো প্রবৃদ্ধির টাকা নিয়ে উন্নয়ন হয়েছে অবকাঠামোগত, মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে, দেশে এখন বড় বড় নোটে সয়লাব মানুষ পকেট কিন্তু দ্রব্যমূল্যের যা অবস্থা হয়ে দাড়িয়েছে তা দিয়ে হাজার টাকার নোট দিয়ে দুইদিন চলাও কষ্ট সাধ্য। সরকার সামান্য পেয়াজ সিন্ডিকেটকে ধরতে পারলো না। কিভাবে মানুষের দূঃখ লাগবে এগুবে সেটাই বড় প্রশ্ন। করোনা দিনে বাংলাদেশে হালাচালও যে খুব ভাল এমনই নয়। কম টেস্টের ফলে কম রোগী, বেশি টেস্ট বেশি রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট করো এবং রোগী আলাদা করো। তা না করে মন্ত্রীদের বেফাঁস কথা দিয়ে রাষ্ট্র যেনো বানরের সার্কাস মাঠ। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে নাজুক অবস্থা হয়েছে তা দেখা গিয়েছে। জবাবদিহিতা নেই, বাজেটের নামে সম্পূরক যোগ করতে একবাজেটের সব টাকা অর্থবছর শেষ না হওয়ার বহু আগেই তুলে নিয়েছে। রঙ্গতামাশার শেষ তো নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে শ্রমিকদের জন্য ৫০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেন। তা গার্মেন্টস মালিকদের হাতে না দেওয়াতে তারাও অসন্তোষ প্রকাশসহ আপত্তি জানিয়েছেন । এ দিকে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা ও বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা মিলে এ করোনার সময় নানান প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষদের চাকরি ছাটাইয়ের ভয় দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসলেন। তারই ফলশ্রুতিতে দেশে করোনা রোগী বেড়েছে।গাজীপুরের এসপি বলেছেন, পিপিই তৈরী করার নামে পোশাক তৈরী করছে। পিপিই তৈরী করছে না। কোনো ধরনের স্বাস্থ্য নির্দেশিকাও মানছে না । শ্রমিক নেতাদেরও প্রশ্ন, শ্রমিকদের জীবন কি মানুষের জীবন নয়? বিএনপি দেশের সব কিছুকে বেসরকারিকরণ করেছে, সেগুলোর খারাপ, আপনারাও বেসরকারিকরণ পদ্ধতি না মেনে আছেন? আপনারা জনবান্ধন পলিসিমেকার হলে বেসরকারি হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি করছেন না কেনো ?

তাদের মাসের বেতন তুলতে হাজারে চারটাকা করে দিয়ে ফেলতে হচ্ছে। অনেকের মাসের বেতনও হচ্ছে না। অনাহারে যে মানুষগুলো দিন কাটাচ্ছে তা কি রাষ্ট্র মানুষের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে না? করছে। কিন্তু জবাবদিহিতা আর দূঃখ বোধের কোনো অবস্থান তারা তৈরী করেনি। ব্যবসায়ীদের সুদের হার কৃষকদের চেয়েও কম। কৃষকে ৫% করে দিতে হচ্ছে সুদ। তাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন দুর্ভিক্ষ হবে না, যাদের পরিশ্রমের ওপর দাড়িয়ে জোর গলায় বলতে পারছেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন তাহলে এতো অভুক্ত কেন? কৃষক আত্মহত্যার হুমকি কেন রাষ্ট্রকে দিচ্ছে?

২০১৩ সালে দেশে এতো অক্সিজেন সংকট পড়েছিল একটা শ্রমিক বাঁচাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছিল। টিভি, রেডিও চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছিল যে যার মত সাহায্য পাঠান। মানুষ এগিয়ে এসেছিল। আপনারা লাশ গুনলেন, খুনীকে বানালেন মেয়র। মন্ত্রীর বেফাঁস কথা আজও কানে আসে, জামায়াত শিবিরের ধাক্কাধাক্কির কারণে ভবন ধ্বস হয়েছে। এমন অবান্তর কথা বলার মন্ত্রী আজও আছে পরিষদে। ওরা জন বিচ্ছিন্ন তাই জনগনের দায়বদ্ধতা থেকে কথা বলে না। দায়বদ্ধতা বলতে কিছু নেই ওনাদের ভেতর। আজও সে আইসিইউ সংকট। কোথায় বদলালোনা, শুধু খুনী বনে গেলেন মেয়র। শুধু বদল হল বাহাস জিডিপি । মানুষের মুক্তি কবে হবে এ গেঁড়াকল থেকে?