-মুহাম্মদ আতিকুল ইসলাম

 

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, কেউ জ্বর,ঠান্ডা,কিংবা শ্বাসকষ্ঠের,লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে গেলে তাকে করোনা সন্দেহে,বেসরকারি ক্লিনিক,এমনকি সরকারি হাসপাতালগুলোতেও ভর্তি করা হচ্ছে না।পত্রিকা কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে যথেষ্ট লেখা -লেখি হয়েছে।হৃদয়বিদারক এ সংবাদগুলি পড়ে অনেক বিবেকবান মানুষের বিবেক নাড়িয়ে দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্টানসমূহ একগুয়েমিভাবে অজ্ঞোচিত সন্দেহ-সংশয়ের ফলে তারা তাতে অনট রয়েছেই বলে মনে হচ্ছে।

৩০ মার্চ দৈনিক যুগান্তরে এ -সম্পর্কিত একটি খবর আসছে এই শিরোনামে :করোনা সন্দেহে ভর্তি নিল না ৪ হাসপাতাল,মুক্তিযোদ্ধার করুন মৃত্য :৬৮ বছর বয়সী আসলাম উদ্দীনের বড় ছেলে আরিফ হাসানের অভিযোগ শনিবার ভোরে তার বাবা বাসাবোর নিজ বাসায় ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।এর পর বারডেম হাসপাতাল,সোহরাওয়াদী হাসপাতাল,পপুলার হাসপাতাল ও কুয়েতমৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হলে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোন হাসপাতাল ভর্তি করতে রাজি হয়নি।পরে রাত ১২ টায় মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভম হলেও শারীরিক অবনতিতে রোববার সকালে মারা যান বাবা।

১ এপ্রিল ঢাকার শীর্ষ অনলাইন নিউজ ইনসাফ ২৪.কম অনুরুপ আর এক খবরের শিরোনাম : চার হাসপাতাল ঘুরে ঠাই পেল না শিশু:বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু:খুলনার খালিশপুরের হাউজিং বিহারি ক্যাম্প নং ১ এর বাসিন্দা মুহাম্মদ কাশেমের ছেলে স্কুল ছাত্র রিফাত লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ৩১ মার্চ দুপুরের দিকে তার শারীরিক সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ একে একে ৪ টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্টানে নেওয়া হয়। কিন্তু কেউ তাকে ভর্তি করেনি।অবশেষ বিনা চিকিৎসায় নিষ্টুরতার নির্মম এ পৃথিবী হতে সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।

৩০ মার্চ ২০ দৈনিক যুগান্তর আর একটি শিরোনাম: করোনা সন্দেহে ঘর ছাড়া করলেন স্বজনরা,সড়কে কাতরাচ্ছে নারী:জ্বর থাকায় করোনা সন্দেহে রেনিসা বেগম নামক নারীকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন স্বজনরা। মানুষ কত অমানবিক হলেই একজন নারীকে ঘর থেকে বের করে দিতে পারে করোনার আতংকে,এ প্রশ্ন আজ সচেতন মানুষ কে ভাবিয়ে তুলছে!

এভাবে ২ এপ্রিল ২০ ঢাকার অনলাইন নিউস ইসলাম টাইমস ২৪.কম আর একটি সংবাদ শিরোনাম:নিষ্ঠুরতার নির্মম আখ্যান ৬ হাসপাতালে ছুটেও চিকিৎসা না পেয়ে স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যু :চিকিৎসা না পেয়ে নির্মম মৃত্যুর শিকার হলেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা মাহমুদা খানম (৭২) ছয়টি হাসপাতাল ঘুরেও মিলল না এই বৃদ্ধ মহিলার চিকিৎসা। তিনি ছিলেন শ্বাসকষ্টের রোগী।

দেশে করোনা শনাক্তের পর চিকিৎসা না পেয়ে এভাবেই মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলছে! প্রতিদিনই এমন কোনো না কোনো, ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে।

এহেন পরিস্থিতিতে মানবিকতা ও মনুষ্যত্ববোধ দেশে আজ প্রশ্নবিদ্ধ। আবার উত্তরায় হাসপাতালে হামলা হলো শুধুমাত্র করোনা রোগী কে ভর্তি নিয়ে সেবা দেয়ার কারণে।তেজগাঁওয়ে করোনা হাসপাতাল করতে উদ্যোগ নেয়া হলে জনতা বাধা দিলো আশপাশের সংক্রমণের আশাংকা থেকে। এর চেয়ে বেশি আর কি দেখালে সমাজ প্রশ্নবিদ্ধ হবে না,প্রশ্নবিদ্ধ হবে না তাদের মানবতা? সাধারণ অসুস্থদের চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, আবার মৃত্যু’দের জানাজা ছাড়াই দাফন করা হয়েছে কিছু কিছু স্থানে।আচ্ছা সীমিত পরিসরে জানাজা পড়তে অসুবিধা কোথায়?তাতে কি ভাইরাসক্রান্ত হবে।যেমন দেশের নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাহিনির বিরাট সংখ্যাক লোক সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী বিস্তৃত। শুধুমাত্র লোক সমাগমই যদি সংক্রমণের কারণ হতো,তাহলে এদের কেউ ভাইরাসমুক্ত হতে পারতো না।

এখন আসুন বিশ্বমানবতার ধর্ম ইসলাম কি বলে? সাধারণ একটি ভাইরাসের ভয়ে আমাদের মগজ থেকে,মানবিকতা আজ দূরিভূত হয়েগেছে।কেননা আমরা বিশ্বচরাচরের মালিকও পালনকর্তা মহান আল্লাহ কে ভয় না করে আজ ছোট একটি ভাইরাস কে ভয় করতেছি, যেহেতু মানুষের মস্তিস্ক বা মগজ নষ্ট হয়ে গেছে। আর সব চেয়ে বড় গুনাহ বা আজাব হলো মগজ নষ্ট হয়ে যাওয়া। যার ফলে মানুষ মহান আল্লাহর বিধি-বিধানবাদ দিয়ে হালাল পন্থানুসরণ না করে,হারাম পন্থায় নিজের বেপুরোয়া জীবন চালায়। কারো যদি মাথার মগজ নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তার সবকিছুতেই ভেজাল!বর্তমানে সমাজে যত ধরণের অমানবিক, নিষ্ঠুরতার নির্মম আখ্যান ও ফেৎনার সৃষ্টি হচ্ছে সবই হলো মানবতার একমাত্র ধর্ম ইসলাম থেকে দূরে সরার কারণেই।মানিষ যদি ইসলাম কে পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করে।তখনই তার আকিদা অনুসারে সে স্বীকার করতে বাধ্য হবে।

জীবানুর নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। বরং তা আল্লাহর হুকুম ও ইচ্ছার অধীন,তাই আল্লাহ সুরক্ষা দিলে ভাইরাস কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।এ বিশ্বাস পোষণ করা ঈমানের অংশ। এ বিশ্বাস ঠিক রেখে সতর্কতা অবলম্বন করা ঈমানের পরিপন্থী নয়।সুতরাং করোনা ভাইরাসে আতংকিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেশি বেশি মহান মাওলার নিকট ইসতেগফার ও তাওবা করা জরুরি।’

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন,
ألاله الخلق والأمر
অর্থাৎ :আল্লাহ তা’আলাই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং হুকুমদাতা [সূরা আ’রাফ ৫৪]
অত এব সু-স্বাস্থ্য এবং রোগ উভয়টি মহান আল্লাহরই হুকুমে হয়।
রাসুল সা:ইরশাদ করেন: لاعدوى
অর্থাৎ:ইসলামে ব্যধি সংক্রমণের কোন বাস্তবতা নেই।[সহীহ বোখারী হাদিস নং ৭৫৫৭]

তাই সকল মুসলমানের মৌলিক আকিদা হবে,যে কোন রোগ সরাসরি আল্লাহরই হুকুমেই হয়।

পৃথিবী যেহেতু আসবাবের জগত, তাই বিশ্বমানবতার একমাত্র ধর্ম ইসলাম আসবাবকেও স্বীকৃতি দিয়েছেন।যেমন হাদিসে বলা হয়েছে,

فر من المجذوم كما تفر من الأسد
অর্থাৎ:কুষ্ঠরোগী থেকে এমনভাবে পলায়ন করো,যেমন তুমি বাঘ থেকে পলায়ন করে থাকো।[সহীহ বোখারী হাদিস নং ১৭৬৭] এতে বোঝা গেলো, সংক্রমণ এটাও মহান আল্লাহর হুকুমে হয়।রোগের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই।বর্তমানে মানবতার এহেন ক্রাইসিসে,বিশ্বময় মনুষ্যত্বহীনতার অবসান রোধে মানবীয় চেতনা জাগ্রত করতেই মহান আল্লাহ করোনাকে ঝাঁকুনি হিসেবে পাঠাইলেন। তাই আসুন আল্লাহমূখী হই,আল্লাহু আল্লাহ জিকির করি,ইবাদতে মশগুল হই,মানবতা শিখি,মানবিক হই,
মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোক আমীন।

লেখক,কলামিষ্ট,সেক্রেটারি:পেকুয়া উপজেলা আল-কোরআন ফাউন্ডেশন।পেকুয়া,কক্সবাজার।E-mail:m.Atikulislam2019@gmail.com