সিবিএন ডেস্ক:
হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমোমেসেজ পাঠানো, কথা বলা বা ভিডিও কলিংয়ের অ্যাপ হিসেবে দেশে ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর ফেসবুকের সঙ্গে বিল্টইন থাকায় মেসেঞ্জারের জনপ্রিয়তাও আকাশছোঁয়া। অন্যদিকে চীনভিত্তিক ব্যবসায়ীদের (আমদানি ও রফতানিকারক) কাছে উইচ্যাটের জনপ্রিয়তা অন্যসব অ্যাপকে ছাপিয়ে গেছে। ঠিক এই মুহূর্তে দেশে এ ধরনের কত অ্যাপ কত মোবাইল গ্রাহক ব্যবহার করছেন— তার সঠিক কোনও পরিসংখ্যান না থাকলেও জানা গেছে, এগুলো ব্যবহারের জন্য কোনও নীতিমালা নেই। নেই কোনও নির্দেশনাও।

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের পছন্দ মতো অ্যাপস ‘অ্যাপস্টোর’ থেকে ডাউনলোড করে বন্ধু, স্বজন, আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এমনকি অফিসিয়াল কাজেও ব্যবহার হচ্ছে এসব অ্যাপ। যোগাযোগভিত্তিক এসব অ্যাপের পোশাকি নাম ওটিটি (ওভার দ্য টপ) সার্ভিস। দেশেও এ ধরনের কয়েকটি দেশি অ্যাপ চালু হয়েছে এবং কয়েকটি জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।

জানা গেছে, এ ধরনের (ওটিটি) হাজারও অ্যাপ রয়েছে অ্যাপ স্টোরে। কিন্তু ঠিক কতগুলো অ্যাপ দেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করছেন তার কোনও হিসাব নেই কারও কাছে। এমনকি এরমধ্যে অনেক অ্যাপ পিসি (ব্যক্তিগত কম্পিউটার), ল্যাপটপ ও ট্যাবেও ব্যবহার হচ্ছে।

এসব অ্যাপ মনিটরিংয়ের আওতায় আনা বা নীতিমালা তৈরি করা হবে কিনা, জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, ‘এসব নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি। আমাদের কাছে আসেনি কোনও অভিযোগও। যখন আসবে তখন দেখা যাবে। প্রয়োজন হলে আমরা মনিটর করবো এবং নীতিমালা তৈরির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি‘র সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘প্লে-স্টোরগুলোতে হাজারও কমিউনিকেশন অ্যাপ রয়েছে। দেশের মানুষ কতগুলো অ্যাপ ব্যবহার করেন এ তথ্য বের করা কঠিন। তবে আমি মনে করি মনিটরিং ব্যবস্থা থাকা উচিত। কারণ, অ্যাপগুলোতে নিবন্ধনের সময় বা ডাউনলোডের সময় গ্রাহকের কাছে মোবাইল বা পিসির একসেস চায়। ফলে সব তথ্য তাদের কাছে থাকে। এসব তথ্য নিয়ে তারা কোনও সমস্যা করলে প্রতিকার পাওয়া কঠিন।’ এসব অ্যাপসের এ দেশে অফিস নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অফিস থাকলে একটা কথা ছিল। সেখানে অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার চাওয়া যেতো।’ তিনি মনে করেন, নীতিমালা, মনিটরিং থাকলে অন্তত অভিযোগ জানানোর একটা জাগয়া থাকে।

আমিনুল হাকিম জানান, দেশেও রয়েছে কিছু দেশীয় ওটিটি অ্যাপ। এগুলোও বেশ ভালোই ব্যবহার হচ্ছে। দেশে ব্যবহৃত অ্যাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ব্রিলিয়ান্ট। এছাড়া, আম্বার আইটির ‘আম্বার আইটি অ্যাপ’ রয়েছে, কিছু দিনের মধ্যে এটা বাজারে আসবে।

এ খাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে কমিউনিকেশন অ্যাপ হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবার খুবই জনপ্রিয়। ফেসবুকপ্রেমীরা মেসেঞ্জার দিয়েই যোগাযোগের কাজ সারেন। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে, উপজেলা বা গ্রামগুলোতে বেশি জনপ্রিয় আইএমও (ইমো) অ্যাপ। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, ইউরোপের (বিশেষ করে ইতালি ও গ্রিস) দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীরা এই অ্যাপটি বেশি ব্যবহার করেন। তাদের অভিমত, ওটিটি অ্যাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ অ্যাপ হলো সিগন্যাল। এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই সুরক্ষিত।

জানা গেছে, দেশীয় অ্যাপসের জন্য বিটিআরসির একটি ডিরেক্টিভস (নির্দেশনা) আছে। তবে কোনও নীতিমালা নেই। নির্দেশনায় দেশীয় অ্যাপসগুলোর বিষয়ে বলা আছে, অ্যাপস কীভাবে চলবে, কী কী নীতিমালা মানতে হবে, বিটিআরসিতে কী জমা দিতে হবে ইত্যাদি। অ্যাপস নির্মাতারা সেসব মেনে বিটিআরসিতে তথ্য দিয়ে থাকেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশীয় ওটিটি (আইপিভিত্তিক) অ্যাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রিলিয়ান্ট নামের একটি অ্যাপ। এটি আইপিভিত্তিক। আইপি টু আইপি বিনামূল্যে কল করা গেলেও জিএসএম নেটওয়ার্কে (মোবাইল ফোন নম্বরে) ফোন করলে প্রতি মিনিটের জন্য বিল দিতে হয় ৩০ পয়সা। এছাড়া রয়েছে আম্বার আইটি লিমিটেডের আম্বার আইটি ও লিংক থ্রি’র ডায়াল নামের অ্যাপ। এগুলোও আইপিভিত্তিক অ্যাপ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, আরও দুটি অ্যাপ আসছে। ইন্টারনেটে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিডিকম অনলাইন ও মেট্রোনেট অ্যাপ দুটি আনছে বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে অ্যাপ দুটির অনুমোদনও দিয়েছে বিটিআরসি।