জিয়াউর রহমান মুকুল

বিশ্ব ব্যাপি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ রোগের বিস্তাররোধে সারা দুনিয়া হিমশিম খাচ্ছে। শুরু থেকে এরোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমরা অনেক গুলো ওয়ার্ডের সাথে পরিচিত হলাম যেমনঃ হোম কোয়ারান্টাই, আইসোলেশন & সোশ্যালডিস্ট্যান্সসহ আরো অনেকো।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী সকল রাস্ট্র সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স বা সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারে বেশ জোর দিচ্ছেন।জন্মগতভাবে মানুষ সামাজিক জীব।সমাজ ছাড়া তারা শান্তিতে থাকতে পারেনা।যে ব্যক্তি যত বেশি সামাজিক সে ততবেশি সমাদৃত ও পরিচিত। সামিজকতার চেয়ে মানব জীবনের মূল্য অত্যধিক হওয়ায় মানুষকে তার চিরচেনা এই সামাজিকতা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।বারংবার অনুরোধ করার পরেও যখন মানুষ সামাজিক দূরত্ব মানছেনা তখনই কেবল বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিয়ন্ত্রণে আসছে।
সামাজিক দূরত্ব বলতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যা বুঝিয়েছে তা সকলের কাছে বোধগম্য;ভিড় এড়িয়ে চলা,সভা সমাবেশ এড়িয়ে চলা,করোনা ভাইরাসের লক্ষণ আছে এমন কারো সংস্পর্শে না আসা,পারস্পরিক আলাপে পর্যাপ্ত দূরুত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি।সামাজিক দূরত্বের মাধ্যমে আমরা প্রাণঘাতি ভাইরাসকে আমাদের থেকে দূরে রাখতে পারি।এই দূরুত্ব আসলে কতটা হওয়া দরকার তা নিয়ে একেক সময় একেক রকম কথা শোনা গেলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা ন্যুনতম এক মিটার বা তিন ফুট আরো সহজ করে বললে দুই হাত বা তারো অধিক দূরত্ব বজায় রেখে পারস্পরিক প্রয়োজীয় ভাষা আদান প্রদান করা।সাম্প্রতিক আমেরিকান স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই দূরুত্ব ন্যুনতম ছয়ফুট হওয়া বাঞ্ছনীয়।সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সবথেকে ভালো উপায় হল নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করা;অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে ঘুরাঘুরি না করা।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমরা অনেকে বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছিনা। অনেকে বিষয়টাকে একেবারে তাচ্ছিল্য ভাবছেন।সরকার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যে সকল সরকাকারি অসরকারি অফিস,আদালত,শিক্ষা প্রতিষ্টান,সভা সমাবেশ,অনুষ্ঠান এমনকি বিয়ে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করছে অথচ আমরা এখনো বিষয়টা ততটা মূল্যায়ন করছিনা।কেউ কেউ আবার এই সুযোগে আত্মীয়স্বজনদের বাসায় গিয়ে দাওয়াত খাওয়ারমত সামাজিকতাও চালিয়ে যাচ্ছি।সামাজিক দূরত্ব কিন্তু শুধু বাইরের জন্য নয় ঘরের ভিতরের জন্য রক্ষণীয়। গণ পরিবহন এড়িয়ে চলেও এর সমাধান কিছুটা করা যায়।দেশের প্রতিটা নাগরিকের উচিত দেশের এই দূর্দিনে সরকারের পাশে থাকা।সরকারি নির্দেশনা মেনে চললে এই দূর্যোগ থেকে সম্মিলিতভাবে রক্ষা পাওয়া সহজতর হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেবল সেনাবাহিনী, পুলিশ,বিজিবি উপর না দিয়ে তাদের পাশাপাশি প্রতিটা পাড়া,মহল্লা এবং ওয়ার্ডের মেম্বার,চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরদেরও সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।তারা স্বস্ব এলাকায় বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে পারেন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের নোবেল করোনা ভাইরাস থেকে বাচাঁর উপায় সম্পর্কে সচেতন করতে পারেন।সরকারি নির্দেশে দেশের প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ রয়েছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্টানের সম্মানিত শিক্ষক শিক্ষিকাগণ একাজে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে পারেন।একজন শিক্ষক শিক্ষিকা কিংবা ইমাম পুরোহিতের কথা স্থানীয় বাসিন্দারা যতটা মান্য করেন অন্য কারো কথা তারা ততটা মান্য করেন বলে আমার মনে হয়না।প্রতিটা এলাকায় কর্মরত সরকারি অসরকারি সংস্থা প্রচারণা কাজে অংশ নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ অব্যাহত রাখতে পারেন।এলাকার যুবসমাজের সম্পৃক্ততা একাজে আশানুরূপ সাফল্য বয়ে আনতে পারে।সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাকালীন আমরা প্রায় সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুক এর দ্বারস্থ হয়;সারাদিন অসমর্থিত সূত্রে প্রাপ্ত গুজবে বিশ্বাসস্থাপন করে নিজদের অযথা মানসিকভাবে দূর্বল করে ফেলছি।এবিষয়ে ডাব্লিউএইচও এর স্পষ্ট নির্দেশনা হল ‘দিনে এক/দুইবার কেবল বিশ্বস্তসূত্রের কোভিড-১৯ এর খবর শোনা’।আমার মতে সামাজিক দূরত্ব কার্যকরভাবে মানার জন্য সমাজিক এই মাধ্যম থেকেও কিছুটা সময় দূরে থাকা কখনোই আপনাকে অসামাজিক বানাতে পারেনা।অযথা বেশি বেশি হৃদয় ভারীকরা গুজবে কান না দিয়ে প্রকৃত খবর দেরিতে শোনাও ভালো।আসুন আমরা সকলে সচেতন হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করি।সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখি।বিশ্বব্যাপী চলমান এই মহামারীতে সকলে নিরাপদ থাকতে সচেস্ট হই।

লেখক:মানবিক ও উন্নয়ন কর্মী,
শেড,কক্সবাজার।
ইমেলঃziaur@shedbd.org