মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি :

চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনায় বিপর্যস্ত সারাবিশ্ব, সংক্রামিত হচ্ছে লাখো লাখো মানুষ, এবং সারা বিশ্বে মারা গেছে ইতোমধ্যে পঁয়ত্রিশ হাজারের অধিক মানুষ। তাই এ ভাইরাসের হাত থেকে নিরাপদ থাকতে গত ২৫ মার্চ বান্দরবানের লামা উপজেলাকে লকডাউন ঘোষনা করে প্রশাসন। এরপর থেকে উপজেলা ও থানা প্রশাসন, তথ্য অফিস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা পৃথক সচেতনতামূলক প্রচারনা শুরু করে। এতে মানুষ নিজেরাই সচেনত হয়ে এখন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। উপজেলা শহরে গুটিকয়েক টমটম ও রিক্সা চলাচল করলেও দুর পাল্লার যান চলাচল ও নৌ পথ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলায় কোন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রহণ ও প্রদানের লক্ষে কন্টোলরুমও খোলে প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, লকডাউনের পর করোনা প্রতিরোধে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগসহ বিভিন্ন প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে জনগণকে নিজ গৃহে অবস্থান করা, হোম কোয়ারেইনটান, সকল দোকানপাট বন্ধ রাখা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা, অ-প্রয়োজনে ঘোরাফেরা না করা, যানবাহন না চলা, অসহায় মানুষদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, শহরের বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপন, মাক্স ও সাবান বিনামূল্যে বিতরণসহ নানাবিধ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এতে করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে হোম কোয়ারেইনটান না মানায় ইতিমধ্যে মেমং মার্মা নামের এক বিদেশ ফেরত প্রবাসীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া পৌরসভা এলাকার চার প্রবাসী ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ৮ প্রবাসীর বাড়িতে লাল নিশানা উড়িয়ে দেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা। পাশাপাশি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও প্রাদুর্ভাব জনিরত পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রহণ ও প্রদানের লক্ষে কন্টোলরুম খোলা হয়েছে। এতে যোগাযোগের নম্বর সমূহ হলো- নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস- ০৩৬১-৭১০০২, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান-০১৭২১১৬৫৮৮৮, নির্বাহী অফিসার-০১৭৭১৪৭৫৪৪৭, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা- ০১৮৩০৩৩৫৩৭৯, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা- ০১৭১৮৫০১৬৫০.

সরেজমিনে উপজেলা শহর ঘুরে দেখা যায়, দোকানপাট বন্ধ, রাস্তায় মানুষের চলাচল খুবই কম। তবে কাঁচা বাজার ও ওষধের দোকানগুলো খোলা রয়েছে। যেখানে দিনরাত সমান তালে জনসমাগম থাকত, সেখানে এখন জনহীন হয়ে পড়ে আছে উপজেলা শহরটি। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে গৃহ বন্দি মানুষের মাঝে বিভিন্ন ত্রান সামগ্রী বিতরণ করে চলেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল, নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি, পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ফাতেমা পারুল প্রমুখ।

স্থানীয় মো. আনোয়ার হোসেন, মো. ফারুখ, নুরুল আবচার, আবদুল হামিদসহ অনেকেই জানান, করোনার আতঙ্কে প্রশাসনের ব্যাপক নজরদারির কারণে আমরা নিজেরাই নিজ গৃহে অবস্থান করছি। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছিনা।

থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান জানায়, মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ প্রচারণার কোনো ঘাটতি নেই। উপজেলা থেকে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঢুকতে ও বাহির হতে দেয়া হচ্ছেনা। যৌথ তৎপরতায় মানুষের মাঝে সচেতনতা বহুলাংশে বাড়তে শুরু করেছে।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ-জান্নাত রুমির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাতদিন একটানা বিভিন্ন প্রচার মাইকিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করায় মানুষ সচেতন হচ্ছে। তাছাড়া খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি সচেতনতামুলক কার্যক্রম অব্যাহত আছে।