ফারুক আহমদ, উখিয়া
বৈশ্বিক মহামারী কোভিন নাইনটিন নবিলা করোনা ভাইরাস জনিত সংক্রমিত রোগ নিয়ে কক্সবাজারসহ পুরো বাংলাদেশ যখন অবরুদ্ধ। এ অবস্থায় দেশের সর্বশেষ সীমান্তবর্তী উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অন্যরকম পরিবেশ নিয়ে স্থানীয় নাগরিক সমাজ চরম উৎকন্ঠিত।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোকে কর্মকান্ড ব্যাপারে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও কেউই সেই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফলে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে এলাকাবাসীর কাছে করোনা আতঙ্ক দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে।
গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সেখানে বিদেশিদের যাতায়াত না করতে অনুরোধ জানান। সরকারের শীর্ষ নির্বাহী হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর এরকম অনুরোধের একদিন পর বুধবার দেখা গেছে, কক্সবাজার থেকে ক্যাম্পমূখী শত শত যানবাহনের ঢল। লকডাউনের কারণে কক্সবাজার জেলা শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ এবং টেকনাফ সড়কের ৪৫ কিলোমিটার জুড়ে কোনো যাত্রীবাহী গাড়ির যাতায়াত না থাকলেও এনজিও গাড়ির ভিড়ে দীর্ঘ জ্যামের সৃষ্টি হয়।
দেশি-বিদেশি এনজিওদের গাড়িবহরের ঢল দেখে সামাজিক সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠে।
দেশের ক্রান্তিলগ্নে এমন ভয়াবহ ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এনজিও দের শত শত গাড়ি অবাধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াত কেউ মেনে নিতে পারছে না।
সৈয়দ মোহাম্মদ ফরহাদ তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন সড়কে এনজিওদের গাড়ি চলাচল থেকে মনে হয় সরকারের ঘোষিত লকডাউন অকার্যকর হয়ে গেছে। তিনি জাতিকে বাঁচাতে প্রতিরোধের আহ্বান জানান। মার্শাল চৌধুরী এন আলম মাসুদ, আরিফ সোহেল ও জাহাঙ্গীর আলম তাদের স্ট্যাটাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গাড়ি চলাচল ভয়ঙ্কর কারণ হতে পারে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মর্জিনা আক্তার তার ফেসবুক ওয়ালের লিখেছেন সরকারের নির্দেশে এনজিওদের গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে ক্যাম্পের অভিমুখে দশটি চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। তিনি আরো লিখেছেন আর আর আর সির অনুমতি নিয়ে আসা গাড়িগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় নাগরিকদের অভিমত ক্যাম্পে বিদেশ ফেরত অসংখ্য রোহিঙ্গা নাগরিক অবস্থান করছে। এসব তথ্য তারা গোপন রাখা হচ্ছে। সেবা দিতে গিয়ে এনজিও কর্মীর সাথে তাদের সংস্পর্শ হচ্ছ। গাড়ি করে ওইসব সেবা কর্মীরা উখিয়াসহ কক্সবাজারে অবস্থান করে। তাদের মত লকডাউন অবস্থায় এভাবে চলাফেরা কতটুকু ভয়াবহ হতে পারে বলার আর অপেক্ষা থাকে না।
এ ব্যয়পারে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও যানবাহনের জটলার বিষয়টি আমার দৃষ্টিতে এসেছে। তদুপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দ্দেশনার পরেও ক্যাম্পে বিদেশিদের যাতায়াত নিয়ে আমি উখিয়ার ইউএনওকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দ্দেশ দিয়েছি।
তিনি বলেন, দেশের প্রচলিত আইন সবাইকেই মানতে হবে। না মানলে তারও ব্যবস্থা রয়েছে।
দেশে চলমান লকডাউন পরিস্থিতি বিরাজমান সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প মুখি শত শত যানবাহনের স্রোত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা চলছে। দেশের প্রচলিত আইন সবার জন্যই সমান বলে যে কথাটি রয়েছে সেটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যাপারে কার্যকর নয় কেন-এমন প্রশ্নই উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বুধবার কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল কেবল মাত্র এনজিওর যানবাহনগুলো নিয়ে।
উখিয়া-টেকনাফের বাসিন্দাদের দ্বিগুণ হচ্ছে ৩৪টি শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের একটি বড় সংখ্যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। তাদের হাতে বেশীর ভাগই বাংলাদেশের ভুয়া পাসপোর্ট। এসব প্রবাসী রোহিঙ্গাই আমাদের ঝুঁকিতে রেখেছে।
এসব বিষয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য সরবরাহ, স্বাস্থ্য ও করোনা সচেতনতা সৃষ্টিসহ তিনটি কাজে জড়িত এনজিও কর্মীদেরই ক্যাম্পে যাতায়াত অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর বাইরে যেসব এনজিওকর্মী এবং বিদেশিরা যাতায়াত করছে সেই বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।