জাহাঙ্গীর আলম শামস:
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সমিতিপাড়ার বয়োবৃদ্ধ রশিদ আহমদ (১০৫) এর কুড়েঘরে পৌঁছিয়ে দেয়া হলো জেলা প্রশাসনের ত্রাণের চাল।
রবিবার (২৯ মার্চ) বিকাল ৫টার দিকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তারের মাধ্যমে একটি প্রতিনিধিদল ২০ কেজি চালের প্যাকেট হাতে হাতে তুলে দিয়ে আসে। এ সময় রশিদ আহমদের স্ত্রী, মেয়েও উপস্থিত ছিলেন।
রশিদ আহমদের তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে বেবির বাসা সমিতিপাড়া বাজারের দক্ষিণে ৫ নং গলিতে। সেখানে বয়োবৃদ্ধ স্ত্রীসহ তিনি বসবাস করেন।
১০৫ বছর বয়সী দরিদ্র রশিদ আহমদের জীবনের কাহিনী নিয়ে সংবাদ করে কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)।
রবিবার (২৯ মার্চ) সকালে ‘ভাতের টাকা নাই, পেটের দায়ে বের হলাম…’ শিরোনামে প্রকাশ হওয়া সংবাদটি সবার নজরে আসে।
নিজের ফেসবুকওয়ালে বৃদ্ধ রশিদ আহমদের করুণ কাহিনী ও আবেদনমাখা স্ট্যাটাস দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও সিবিএন-এর বার্তা সম্পাদক ইমাম খাইর। এরপর ওই বৃদ্ধের সন্ধান করতে থাকে প্রশাসন। পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের পক্ষ থেকেও ওই বৃদ্ধের খোঁজখবর নেয়া হয়। কিন্তু শহরের কোথাও তার দেখা মেলে নি।
অবশেষে জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনের নির্দেশে ওই বৃদ্ধের ঘরে গিয়ে পৌঁছিয়ে দেয়া হলো সরকারী ত্রাণের চাল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন বলেন, সকালে ইমাম খাইর-এর ফেসবুক স্ট্যাটাস ও একটি নিউজ আমাদের চোখে পড়ে। এরপর থেকে ওই বৃদ্ধকে খোঁজে বের করতে বলা হয়। কোথাও পাওয়া যায় নি। অবশেষে তার বাড়িতে গিয়ে ত্রাণের চাল দিতে আসা হয়।
তিনি বলেন, গরীব, অসহায়, ছিন্নমূল মানুষদের জন্য সরকার ত্রাণ বরাদ্দ দিয়েছে। যথাযথভাবে সবার ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছিয়ে দিয়ে আসা হবে। ঘর থেকে বের হতে হবে না।
জেলা প্রশাসক বলেন, আপনারা ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
এদিকে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সুত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলার হতদরিদ্র ও কর্মহীন লোকদের জন্য ৩০০ মেট্রিক টন চাল ও ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর মাধ্যমে উপযুক্ত পরিবারের ঘরে ঘরে গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
বরাদ্দের ১২ লক্ষ টাকায় পেঁয়াজ, ডাল, তেল ইত্যাদি শুকনো খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করা হবে। যা ৬ হাজার পরিবার পাবে।
জরুরী ত্রাণ তৎপরতার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপজেলা ভিত্তিক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। প্রকৃত কর্মহীন, গরীব, অসহায়, হতদরিদ্ররাই তালিকাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) মোহাম্মদ মাহবুব আলম।
তিনি বলেন, প্রতি পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল বিতরণের কার্যক্রম রবিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তালিকার মাধ্যমে প্রকৃত হকদারদের ঘরে ঘরে চাল ও শুকনো খাবার সামগ্রী পৌঁছিয়ে দেয়া হবে।

সিবিএন-এ প্রকাশিত মন্তব্য প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

ইমাম খাইর

প্রতিদিনের মতো মর্নিংওয়াকে বের হলাম।
হেঁটে শহরের বাহারছরা হয়ে জেলা পরিষদ ভবনের গেট পর্যন্ত পৌঁছলে বৃদ্ধ লোকটির সঙ্গে দেখা। লাঠিতে ভর করে হাঁটছেন। ভাঁজ পড়েছে চামড়ায়। ভালোভাবে দেখেন না, শুনেন না।
করোনার ভয়ে মুখে লাগানো ওয়ান টাইম মাস্কটিও নষ্ট হয়ে গেছে।

কৌতুহল জাগলো, এত ভোরে লোকটি কয় যায়? জিজ্ঞেস করলাম। জবাব, ভিক্ষা করতে বেরিয়েছেন।
ভোরে তো মানুষজন নাই। ভিক্ষা কে দিবে?

বললেন, ‘দিনের বেলায় সেনা বাহিনী, পুলিশের গাড়ি দেখলে ভয় হয়। তাই সকাল সকাল কিছু পাওয়া যায় কিনা, দেখতে বের হলাম। রিজিকের মালিক আল্লাহ। রিজিকে থাকলে পাব।’

বলতে বলতে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত পৌঁছলাম।
এরপর পরিচয় জানতে চাইলাম।

প্রথমে লোকাতে চেয়েছিলেন। রোহিঙ্গা কিনা জিজ্ঞেস করলে ‘না’ উত্তর। তারপর সব খোলাসা করেন।

রশিদ আহমদ, ১০৫ বছর বয়স।
পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সমিতিপাড়ার বাজারের দক্ষিণে ৫ নং গলিতে বড় মেয়ে বেবির বাসায় বয়োবৃদ্ধ স্ত্রীসহ বসবাস।

তিন মেয়ের সবাই বিয়ে দিয়েছেন। কোন ছেলে সন্তান নাই। মেয়ের জামাতারাও কাজকর্ম করে কোন রকম সংসার চালায়। সবার নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করার মতো কোন সুযোগ নাই।

বয়োবৃদ্ধ রশিদ আহমদ দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। খুব কষ্ট করে ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।

কক্সবাজার পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের কবরস্থান পাড়ায় এক মেয়ের বাসা। মাঝেমধ্যে সেখানেও থাকেন। ওই সুবাদে সেখানে ভোটার।

ভিক্ষা কেন করছেন? প্রশ্ন করলাম।
তারপর দুঃখের বর্ণনা।

তিনি জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে গাড়ি থেকে পড়ে কোমর ভেঙে যায়। অভাবি সংসারে ভাতের টাকা নাই। চিকিৎসা কি সম্ভব? কোন রকম হাতুড়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বয়স বেড়েছে। কোমরের ব্যথাও বাড়ছে দিন দিন। পেটের দায়ে বের না হয়েও উপায় নাই। তাই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে লাঠিতে ভর করে হলেও বের হলেন।

গতকাল শনিবার ভিক্ষা করে ৫০ টাকা পেয়েছেন। আজ রবিবারের ভাগ্যে কি জোটে জানেন না।
বৃদ্ধ রশিদ আহমদ ভিক্ষা করছেন ৮/১০ বছর। এর আগে ছোটখাটো কাজ কর্ম পেলে করতেন।

#করোনা ভাইরাসের কারণে আজ চারিদিকে আতংক। মানুষজন হোম কোয়ারেন্টাইনে। অনেকটা গৃহবন্দি। বাজারের দোকানপাট প্রায় বন্ধ। নিম্ন আয় ও দৈনিক আয়ের মানুষগুলোর ভাতের টাকা নেই।
টাকা দেওয়া ও নেওয়ার ভিক্ষুকও ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে সামনে কি হয়, আল্লাহই জানে।
#আসুন, সাধ্যমতো বৃদ্ধ, অসহায়, অভাবি মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই।

 

ইমাম খাইর
বার্তা সম্পাদক
কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)
মোবাইলঃ ০১৮১৫৪৭১৪০০