বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
রাজধানীর জুরাইন থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া এবং শরীয়তপুরের পাচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। এই পথ পাড়ি দিতে সময় লাগতো প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। তবে এবার এ সমস্ত ঝামেলার অবসান হতে চলেছে।
সার্ভিসলেনসহ ৮ লেন এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হবে বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নবনির্মিত এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি হবে এশিয়ান হাইওয়ের করিডোর-১ এর অংশ। ৮ লেনের এক্সপ্রেসওয়েটি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডব্লিউও (পশ্চিম)। সেনাবাহিনীর এসডব্লিউও-এর তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সম্পন্ন হয়েছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের কাজ।
এদিকে পদ্মাসেতুর কাজও এখন শেষ পর্যায়ে। স্বপ্নের এ সেতু উদ্বোধনের আগেই খুলে দেওয়া হচ্ছে দেশের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়ে। বর্তমানে এই সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। তবে পদ্মাসেতু খুলে দেওয়ার পর ৫০ থেকে ৫৫ মিনিটেই পুরো সড়ক পাড়ি দেওয়া সম্ভব হবে।
এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি ২.৩ কিলোমিটার কদমতলী-বাবু বাজার লিংক রোড ফ্লাইওভার রয়েছে। অন্য চারটি ফ্লাইওভার হলো আবদুল্লাহপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার এবং মালিগ্রামে। ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে চারটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ ছাড়াও রয়েছে চারটি বড় সেতু।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দৃষ্টিনন্দন এবং আধুনিক ট্রাফিক ডিজাইন সমন্বিত এ এক্সপ্রেসওয়ে উন্নত বিশ্বের সড়কের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্মিত। ইউরোপ-আমেরিকার সড়কের থেকে কোনো অংশে কম নয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নত হচ্ছে তা এ সড়ক দেখলেই বোঝা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এক্সপ্রেসওয়েতে বর্তমানে ঢাকার জুরাইন থেকে মাওয়া পর্যন্ত মাত্র ৩০ মিনিট সময় লাগবে। অন্যদিকে শরীয়তপুরের পাচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সময় লাগবে ২০ মিনিটের কম। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে কম সময়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌঁছানো যাবে।
এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য টোল দিতে হবে যানবাহনগুলোকে। এটি চালু হলে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার নন-স্টপ গাড়ি চালিয়ে যাওয়া যাবে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার ছয় লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ের মূল সড়কটি হবে চার লেনের।
এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে দুই লেন করে পৃথক সড়ক রয়েছে। যাতে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করতে পারে। নির্দিষ্ট কয়েকটি পয়েন্ট ছাড়া এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা এবং এক্সপ্রেসওয়েতে নামা যাবে না। এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো ট্রাফিক ক্রসিং নেই।
সূত্র জানায়, এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে দুটি প্যাকেজে। প্রথম প্যাকেজে যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে শরীয়তপুরের পাচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার।
এই সড়কে সেতু রয়েছে ৩১টি। এগুলোর মধ্যে পিসি গার্ডারের সেতু ২০টি ও আরসিসির ১১টি। এছাড়া ধলেশ্বরী-১ ও ধলেশ্বরী-২ এবং আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর তিনটি বড় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বাইরে ৪৫টি কালভার্ট, আবদুল্লাহপুর, হাঁসারা, শ্রীনগর, কদমতলী, পুলিয়া বাজার ও সদরপুরে থাকছে ৬টি ফ্লাইওভার। জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে থাকছে ৪টি রেলওয়ে ওভারপাস। গ্রেট সেপারেটর হিসেবে ১৫টি আন্ডারপাস ও ৩টি ইন্টারচেঞ্জ রয়েছে। এগুলো রয়েছে যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া এবং ভাঙ্গায়।
এক্সপ্রেসওয়ের দুই প্রান্তে দুটি টোলপ্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশেষ করে ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, খুলনা জেলাসহ আশপাশের সব জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগে নিরাপদ ও আরামদায়ক হবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে প্রকল্প এলাকায় সাজ সাজ রব চলছে। সার্ভিস লেনের দু’পাশে সবুজায়নের জন্য নানা ধরনের বনায়ন করা হয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনে আনন্দিত রাজধানীর জুরাইন এলাকার বাসিন্দা আয়েশা সিদ্দিকা। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের ফলে জুরাইন, ধোলাইপাড়, যাত্রবাড়ী, পোস্তাগোলা উন্নত হয়েছে। আগে আমরা ডাউন ছিলাম। আমার বাপের বাড়ি ফরিদপুর। বর্তমানে পাঁচঘণ্টার বেশি সময় লাগে। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পরে সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় জুরাইন চলে আসতে পারবো। ভাবতেই জানি কেমন আনন্দ লাগছে।
এক্সপ্রেসওয়ের বিষয়ে মাওয়া ঘাটের ফল বিক্রেতা সাইদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এখন আর কোন সমস্যা নাই। আগে কেউ অসুস্থ হলে পথেই আরো অসুস্থ হয়ে যেত । এখন কম সময়ে ঢাকায় নিরাপদে যেতে পারবো।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা, খুলনা বিভাগের দশ এবং ঢাকা বিভাগের ছয় জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ টি জেলার মানুষ সরাসরি এই আন্তর্জাতিকমানের এক্সপ্রেসওয়েতে কম সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন। হাইওয়েতে আগামী ২০ বছরের জন্য ক্রমবর্ধমান ট্রাফিকের পরিমাণ বিবেচনা করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় ১১ হাজার ৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে মোট ব্যয় ১১ হাজার কোটি টাকা। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই এক্সপ্রেসওয়েতে আছে কালভার্ট, আন্ডারপাস, ৪টি বড় সেতু, ২৫ টি ছোট সেতু, ৫টি ফ্লাইওভার, ২টি ইন্টার চেন, ৪টি রেলওয়ে ওভার পাস। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন একটি সড়ক। আমার মনে হয় এটি ইউরোপের অনেক দৃষ্টিনন্দন সড়ককেও হার মানাবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।