সিবিএন ডেস্ক
সরকারি পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সম্ভাব্যতা জরিপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির অভিযোগের মধ্যে কমিশন রবিবার (৮ মার্চ) এই আদেশ দেয়।

অভিযোগ রয়েছে, সরকার পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্র টিকিয়ে রাখছে। ফলে এক দিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জ্বালানি খরচ বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে এসব কেন্দ্র বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন না করায় ব্যয়ও বাড়ছে।

তবে আরও জানা গেছে, সরকার ঘোড়াশালের দুটি ইউনিট এবং সিলেটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রি-পাওয়ারিং করছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সিম্পল সাইকেল থেকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর করছে। এতে একই পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। দেশের অন্য যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এমন সুবিধা সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে বলছে বিইআরসি।

বলা হচ্ছে, সিম্পল সাইকেল প্রযুক্তি পুরানো। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর উচ্চ মাত্রার তাপ বাতাসে ছেড়ে দেওয়া হয়। কম্বাইন্ড সাইকেলে মূলত সেই তাপের পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। আবার কোনও কোনও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কিছু সংস্কার করলে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন করাও সম্ভব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, ‘আমাদের পুরানো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেকগুলোই বাদ দেওয়া হয়েছে। অনেকগুলো রি-পাওয়ারিং করা হয়েছে। সেসব কেন্দ্রের ক্ষমতা বেড়েছেও।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া খুব অল্প কিছু কেন্দ্র এখনও আগের মতো উৎপাদন করতে পারছে না। আমরা সেগুলোর তালিকা করেছি। যেগুলো একেবারে অদক্ষ, সেগুলো বাদ দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। আর যেগুলো রি-পাওয়ারিং করার সুযোগ আছে, সেগুলোর বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরানো ও অদক্ষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা, এদের দক্ষতা ও ক্ষমতা বাড়ানো যায় কিনা, সেসব বিষয়ে কমিশনের মাধ্যমে পিডিবির কাছে প্রশ্ন রাখা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কমিশন জানায়, এসব কেন্দ্রের বিষয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা দরকার।

কমিশন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আদেশের সঙ্গে গত ২৭ নভেম্বর পিডিবিকে আদেশ দিয়ে বলছে- পুরাতন কেন্দ্রগুলো সমীক্ষা করে কীভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় তার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পিডিবির হিসেবে- ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক ও দুই নম্বর ইউনিট থেকে মোট ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেতো, এখন মাত্র ৩৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, দুই ইউনিট থেকে এখন সর্বোচ্চ ৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। ৫ নম্বর ইউনিটটি ২১০ মেগাওয়াট হলে এখন সর্বোচ্চ ১৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, যদিও আপাতত সেটি বন্ধ আছে। এই কেন্দ্রের ৩ ও ৪ নম্বর ইউনিট দুটির ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। ৩ নম্বর ইউনিটটির মোট উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২১০, এখন সেটি ১৭০ মেগাওয়াট ক্ষমতার, যদিও আপাতত বন্ধ আছে। আর ৪ নম্বর ইউনিটের ক্ষমতা ছিল ২১০, এখন সেটি রিপেয়ার করে ১৮০ মেগাওয়াটের করা হয়েছে। হরিপুরের ৮০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি এখন বন্ধ আছে, এই কেন্দ্রের ক্ষমতা ছিল ৬৪ মেগাওয়াট, পরে তা কমে গিয়ে হয় ৪০ মেগাওয়াট। সিদ্ধিরগঞ্জের ২১০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা এখন ২১০, আপাতত সেটিও বন্ধ আছে।

চট্টগ্রামের গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ করে হলেও এখন কমে ১৮০ মেগাওয়াট হয়েছে। এই ইউনিটগুলো থেকে বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে ১১০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩ নম্বর ইউনিটের স্থাপিতব্য উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৫০, কিন্তু এখন উৎপাদন করতে পারে ১৩৫, যদিও কেন্দ্রটি এখন বন্ধ আছে। ৪ নম্বর ইউনিটও ছিল ১৫০ মেগাওয়াটের, এখন ১২৯। ৫ নম্বরটি ছিল ১৫০, এখন ১৩৪ মেগাওয়াটে এসে থেমেছে। এই তিন ইউনিটরর মধ্যে চালু আছে ৪ নম্বরটি, বাকি দুটি বন্ধ।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ১০৪ মেগাওয়াট কেন্দ্র থেকে এখন সর্বোচ্চ পাওয়া যায় ৯০ মেগাওয়াট, যদিও জাতীয় গ্রিডে দিচ্ছে মাত্র ৩২ মেগাওয়াট।

বরিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুই ইউনিটের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ মেগাওয়াট হলেও পাওয়া যায় ৩০, এটাও এখন বন্ধ আছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ও দ্বিতীয় প্রত্যেকটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫ করে হলেও এখন কমে গিয়ে হয়েছে ৮৫ মেগাওয়াট করে।