জাগো নিউজ:

দেশের সব কাজে পুরুষের পাশাপাশি এগিয়ে নারীও। অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে নারীরা সমানতালে অবদান রাখছেন। নিজের দক্ষতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে পুরুষের সঙ্গে বিভিন্ন কাজ করছেন নারীরা। তেমনি দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টেও আলো ছড়াচ্ছেন নারী বিচারপতিরা।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট- উভয় বিভাগে এখন ১০৫ জনের মধ্যে ১০৪ জন বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারিক কাজ করছেন আট নারী বিচারপতি। তারা নিজেদের পেশায় স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। নিজেদের মেধা, যোগ্যতা আর প্রজ্ঞা দিয়ে তারা বিচারাঙ্গনের মতো কঠিন জায়গায় বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

 

এই আট জনের মধ্যে বিচারপতি জিনাত আরা দায়িত্ব পালন করছেন আপিল বিভাগে। বাকি সাত বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন হাইকোর্ট বিভাগে। তারা হলেন- বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, বিচারপতি কাশেফা হোসেন, বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, হাইকোর্ট বিভাগে দায়িত্ব পালন করা নারী বিচারপতিদের মধ্যে ফাতেমা নজীব ও কাজী জিনাত হক ছাড়া বাকি পাঁচজন নিজ নিজ বেঞ্চের নেতৃত্বদাতা বিচারপতি। এর মধ্যে বিচারপতি কাশেফা হোসেন একক বেঞ্চে বিচারিক কাজ করে আসছেন।

আপিল বিভাগের বিচারপতি জিনাত আরা গত ৪০ বছর ধরে বিচার বিভাগে রয়েছেন। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী হাইকোর্ট বিভাগের ৯৯ জন বিচারপতির মধ্যে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে।

উচ্চ আদালতে একজন অগ্রজ বিচারপতিও ছিলেন নারী। তিনি বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারিক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে অবসরে গেছেন। তিনিই ছিলেন দেশের প্রথম নারী বিচারক ও বিচারপতি।

বিচারপতি জিনাত আরা
বিচারপতি জিনাত আরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভের পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ স্কুল ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট কোর্স করেন। এরপর তিনি ১৯৭৮ সালের ৩ নভেম্বর বিচার বিভাগে মুনসেফ হিসেবে চাকরি শুরু করেন। ১৯৯৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান জিনাত আরা। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ পান। ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে তাকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এর মধ্য দিয়ে আপিল বিভাগে দ্বিতীয় নারী বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী
বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরীর বাবা সাবেক বিচারপতি এ টি এম মাসুদ। ১৯৮১ সালের ২২ আগস্ট তিনি ঢাকা জেলা জজ আদালতে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৮৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯৬ সালের ১৪ মে তালিকাভুক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তাকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। দুই বছর পর ২০০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। যদিও এখন বিচারিক দায়িত্বে নেই বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী।

 

 

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব
বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের বাবা সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম পাসের পর ১৯৯২ সালে জেলা আদালতে আইন পেশা শুরু করেন। ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর হাইকোর্টে এবং ২০০২ সালের ১৫ মে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ফারাহ মাহবুব। ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন। ২০০৬ সালে হাইকোর্ট বিভাগে পূর্ণাঙ্গ বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান ফারাহ মাহবুব।

বিচারপতি নাইমা হায়দার
বিচারপতি নাইমা হায়দার সাবেক বিচারপতি মরহুম বদরুল হায়দার চৌধুরীর মেয়ে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনার পর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯৮৯ সালে জেলা আদালতে আইন পেশায় যোগ দেন নাইমা হায়দার। ১৯৯৩ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী এবং ২০০৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। ২০০৯ সালের ৬ জুন নাইমা হায়দার নিযুক্ত হন হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি পদে। ২০১১ সালের ৬ জুন তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ
বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করার পর মুনসেফ হিসেবে ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর বিচার বিভাগে যোগদান করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান কৃষ্ণা দেবনাথ। এর দুই বছর পর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।

বিচারপতি কাশেফা হোসেন
বিচারপতি কাশেফা হোসেনের বাবা মরহুম বিচারপতি মোহাম্মদ হোসেন। তিনি ইংরেজি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া লন্ডনেও একই বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। এরপর ১৯৯৫ সালে জেলা আদালতে আইন পেশায় যোগ দেন কাশেফা হোসেন। পরে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান কাশেফা হোসেন। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।

বিচারপতি ফাতেমা নজীব
নরসিংদীর জেলা ও দায়রা জজ বেগম ফাতেমা নজীব হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে পদোন্নতি পান। এখন তিনি হাইকোর্টে বিচারিক কাজ করছেন।

বিচারপতি কাজী জিনাত হক
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাজী জিনাত হক। তিনি একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. শরীফা খাতুনের মেয়ে। সর্বোচ্চ আদালতে বিচারিক দায়িত্ব পালনের আগে কাজী জিনাত দুই মেয়াদে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।