মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া:

কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় পাউবো’র বেড়িবাঁধ মেরামত কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বেড়িবাঁধের ব্লক তৈরীতে সাগরের লবণাক্ত বালি আর নিম্ন মানের পাথর ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে দ্বীপের জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল।

দ্বীপের একাধিক জনপ্রতিধি জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া দ্বীপের ৭১ পোল্ডারের ৪০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ১৪ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত সিসি ব্লক ও মাটির কাজ করার জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রায় ৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা ছাড় দিলেও ঠিকাদার ও কর্তৃপক্ষ যোগসাজসে সাগরের লবণ বালি আর অত্যন্ত নিম্ন মানের পাথর ব্যবহার করে ব্লক তৈরী করা হয়েছে। আর এসব নিম্ন মানের ব্লক বাঁধে বসানোর জন্য এখন তোড়জোড় শুরু করেছে পাউবো ও ঠিকাদারের লোকজন!

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের জেলে পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ঠিকাদারের লোকজন ব্লক তৈরীতে নিম্ন মানের পাথর ও লবণ বালি ব্যবহার করে ব্লক তৈরী করছে। এছাড়াও তৈরীকৃত ব্লকে পানিও দেয়া হচ্ছে না। ব্লক তৈরীর সময় পাউবোর কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার নিয়ম থাকলেও এসময় কাউকে দেখা যায়নি।

কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুচ ছাফা অভিযোগ করেছেন, পাউবোর বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য তৈরীকৃত ব্লকে সাগরের লবণ বালি আর নিম্ন মানের পাথর দিয়ে ব্লক তৈরী হচ্ছে। বর্তমানে তৈরীকৃত ব্লক বাঁধে ব্যবহার করতে গিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। লবণ বালি আর নিম্নমানের পাথর ব্যবহার না করার জন্য বলা হলেও পাউবো ও ঠিকাদারী তা মানছে না বলে দাবী করেন।

সাগরের লবণ পানি ও নিম্ন মানের পাথর ব্যবহার করা প্রসঙ্গে বাঁধ মেরামত বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঈগলরীজ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন (বিডি) লিঃ এর সাইট ইঞ্জিনিয়ার শাহীন বলেন, কাজের গুণগতমান শতভাগ বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি প্রকল্প সাইট এলাকায় এসেছেন এক সপ্তাহ হচ্ছে। যে পাথর নিয়ে ব্লক তৈরীর অভিযোগ উঠেছে সেই পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে তিনি দাবী করেছেন।

কুতুবদিয়া আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের জেলে পাড়া গ্রামের বাসিন্দা জহরলাল জলদাশ জানান, প্রায় এক যুগ ধরে জেলে পাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় জোয়ারে শতশত পরিবার ভিটিবাড়ি হারিয়েছে। বাঁধ মেরামতের কাজ হচ্ছে দেখে এলাকাবাসী আশায় বুক বেঁধে ছিল। কিন্তু পাউবো ও ঠিকাদার কর্তৃক ব্লক তৈরীতে নিন্মমানের উপকরণ ব্যবহার করায় আমাদের সেই আশায় যেন গুড়েবালি!

বান্দরবান জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী রাকিবুল হাছান বলেন, কুতুবদিয়ার ৭১ পোল্ডারে ভাঙন বাঁধ মেরামত কাজ ৪০% শেষ হয়েছে। আগামী জুন মাসের পূর্বে প্রাক্কলিত বাকি কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্লক নির্মাণ কাজে নিম্ন মানের পাথর আর লবণ বালি ব্যবহারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী কুতুবদিয়ায় তিনি সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সত্যতা পান। পরে তিনি নিম্ন মানের পাথর ও লবণ বালি ব্যবহার না করার জন্য ঠিকাদারের লোকজনকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন।