আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অবিলম্বেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা উপকরণে ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এই সংকট মোকাবিলায় মেডিকেল কোম্পানিগুলোকে উৎপাদন ৪০ শতাংশ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে তারা। মঙ্গলবার ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস জেনেভায় এ কথা জানান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, নভেল করোনাভাইরাসে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার প্রায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যা মৌসুমী ফ্লুতে মৃত্যুহারের (এক শতাংশ) চেয়ে অনেক বেশি।
‘সংক্ষেপে বললে, কোভিড-১৯ ফ্লুর চেয়ে কম ছড়ায়, অনাক্রান্তদের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটে না, ফ্লুর চেয়ে কম গুরুতর অসুস্থতা দেখা যায়। এর ওষুধ বা প্রতিষেধক এখনও আসেনি এবং এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য।’
বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯২ হাজার ৭৯৬ জন, মারা গেছেন অন্তত ৩ হাজার ২০১ জন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মৃত্যুহার দেশ ভেদে দুই থেকে সর্বোচ্চ চার শতাংশ। খুবই স্বল্পমাত্রায় রোগাক্রান্ত হাজার হাজার মানুষকে হিসাবে আনলে মৃত্যুহার আরও কম হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর মেডিকেল উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। তাদের হিসাবে, ভাইরাসের কারণে সার্জিক্যাল মাস্কের দাম বেড়েছে, এন৯৫ মাস্কের দাম তিনগুণ হয়েছে এবং ভাইরাসপ্রতিরোধী গাউনের দামও দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
সংস্থাটি বলছে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী মেডিকেল কর্মীদের প্রতি মাসে অন্তত ৮৯ মিলিয়ন মাস্ক, ৭৬ মিলিয়ন গ্লাভস এবং ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বিশেষ চশমা প্রয়োজন।
করোনায় ইরানের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা। ডব্লিউএইচও’র ইমারজেন্সি প্রোগ্রামের প্রধান মাইকেল রায়ানের মতে, অন্য দেশের তুলনায় ইরানেরই মেডিকেল উপকরণ সংকট সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে হঠাৎ করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়াকে তিনি ‘আগুন নিভে যাওয়ার আগে দপ করে জ্বলে ওঠার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। ইতোমধ্যে অন্তত ৮০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু চীনে। দেশটির মূল ভূখণ্ডে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৯৮১ জন মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৮০ হাজার ২৭০ জন।
চীনের বাইরে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে অন্তত ৫ হাজার ৩২৮ জনের শরীরে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস পাওয়া গেছে, মারা গেছেন ৩২ জন।
করোনাভাইরাসে প্রাণহানির সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে ইউরোপের দেশ ইতালি। মঙ্গলবার একদিনে আরও ২৭ জন মারা যাওয়ায় দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯ জন, যা চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ইতালিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২৬৩।
ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে নতুন করে ১৪ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৪ জন। সেখানে অন্তত চারজন কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন। করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে জার্মানিতেও। দেশটিতে মোট ১৯৬ জন এনসিওভি-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া, সুইজারল্যান্ডে ৫৫ জন ও স্পেনে ৪৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এ পর্যন্ত আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ইরানে। দেশটিতে অন্তত ৭৭ জন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৩৬ জন।
এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২১, কুয়েতে ৫৬, বাহরাইনে ৪৭, লেবাননে ১২, ওমানে ১৩, ইসরায়েলে ১০, কাতারে সাত, জর্ডানে একজনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সৌদি আরবে একজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন অন্তত ৭০ জন।
বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত সাত বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরে পাঁচ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক ও ইতালিতে এক বাংলাদেশি ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন।
ভারতে এ পর্যন্ত ২৮ জনের শরীরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।