এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া :

চকরিয়া উপজেলা সদরে দুইটি ও পেকুয়া চৌমুহনীতে একটি হারবাল দোকান খুলে ইউনানী ওষুধ ব্যবসার আড়াঁলে চলছে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা। স্বাস্থ্য প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের অগোচরে উপজেলা সদরের গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্টে এসব হারবাল প্রতিষ্ঠান খুলে চিকন স্বাস্থ্য মোটা করণের নামে রমরমা প্রতারণা চালাচ্ছে একশ্রেণীর প্রতারক চক্র। এসব হারবাল ওষুধ সেবনে সর্বসাধারণের জীবনহাণির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

অভিযোগ রয়েছে, এসব হারবাল প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু ওষুধে স্টেরয়েড ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়, যা চিকন স্বাস্থ্যকে মোটা করতে ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধ সেবন করলে পরে রোগীর খাওয়ার রুচি বেড়ে যায় অনেক বেশি। সাথে সাথে স্বাস্থ্যমোটা হয়ে যায়। এর মূল কারণ, যে কোনো মানুষ যখন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করে তখন তার শরীরে পানি জমে শরীর ফুলে যায়, এর পরিণতি ভয়াবহ হয়। যার ফলে মানুষ অল্পসময়ে মৃত্যুর পথে ধাবিত হচ্ছে।

জানা গেছে, বেশ কয়েকবছর যাবত চকরিয়া পৌরশহরে হারবাল ও ইউনানী চিকিৎসার নামে চলছে ব্যাপক প্রতারণা। একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি, হাকিম, কবিরাজ ও ডাক্তার সর্ব রোগের চিকিৎসক সেজে দীর্ঘদিন থেকেই সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে আসছে। তাদের চটকদার বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হয়ে ভেষজ ওষুধের নামে নকল ও ভেজাল ওষুধ সেবন করে মানুষ আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এক রোগ সারাতে গিয়ে তারা নানা জটিল ও কঠিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু প্রতারণার মাধ্যমে সর্বসাধারণকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে।

চকরিয়া পৌরশহরের মহাসড়ক লাগোয়া সোনালী ব্যাংকের নীচে সোসাইটি এলাকায় শ্রীদুর্গা ওষুধালয়, চকরিয়া থানা রাস্তার মাথা এলাকায় পুবালী ব্যাংকের নীচে মর্ডান হারবাল এবং পেকুয়া চৌমুহনী এলাকায় মর্ডান হারবাল নামের তিনটি দোকানে কয়েকবছর ধরে চলছে ইউনানী ওষুধ বিক্রির নামে রমরমা প্রতারণা বাণিজ্য।

উল্লেখিত তিনটি দোকানে এবং তাদের নিয়োজিত বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মহিলা বিক্রয়কর্মীরা এক সপ্তাহের মধ্যে চিকন স্বাস্থ্য মোটা হবার প্রলোভন দেখিয়ে মাত্র ১৬০ টাকা দামের মহাওষুধ ‘জাওয়া রিশ কুমনী’ নামের এক বাটি হালুয়া মোদক বিক্রি করে গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন দেড় হাজার টাকা। হালুয়া মোদকটির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম মুসলিম ইউনানী ফার্মাসিটিক্যাল রাজশাহী। অপরদিকে অভিযুক্ত চক্রটি চিকন স্বাস্থ্য মোটা করণ ওষুধের মতো মাত্র একশত টাকা দামের ‘কেলেশ’ নামের একবক্স যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বিক্রি করে লুটে নিচ্ছেন ১২শত টাকা। কেলেশ ট্যাবলেটটির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার হাইম্যাক্স ইউনানী ফার্মাসিটিক্যাল।

অভিযোগ রয়েছে, উল্লেখিত তিনটি হালবাল দোকানে রাজশাহীর মুসলিম ইউনানী ফার্মাসিটিক্যাল, ঢাকার হাইম্যাক্স ইউনানী ফার্মাসিটিক্যাল ও যশোরের দিদার ফার্মাসিটিক্যাল ছাড়াও অন্তত ১০-১২টি হালবাল কোম্পানীর চিকন স্বাস্থ্য মোটা করণ হালুয়া এবং যৌন উত্তেজক ক্যাপসুল ট্যাবলেট বিক্রি করা হচ্ছে।

মানুষের জীবনহাণির আশঙ্কা রয়েছে এই ধরণের ওষুধ তিনটি দোকানের শোরুম ছাড়াও তাদের নিয়োজিত মহিলা ও পুরুষ বিক্রয়কর্মীর মাধ্যমে চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিটি হালুয়া মোদক ও ট্যাবলেট কোম্পানী নির্ধারিত দামে তিনটি প্রতিষ্ঠান সংগ্রহ করলেও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে দশগুনের বেশি টাকা। যেমন মুসলিম ইউনানী ফার্মাসিটিক্যালের মাত্র ১৬০ টাকা দামের ‘জাওয়া রিশ কুমনী’ নামের এক বাটি হালুয়া মোদক বিক্রি করা হচ্ছে দেড় হাজার টাকা দামে।

মুসলিম ইউনানী কোম্পানীর অনেকগুলো পন্য রয়েছে, তৎমধ্যে ২২ টাকা দামের মোটা করণ ট্যাবলেট মাক্সজেট একপাতা গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা, ২২ টাকা দামের হাব্বে নিশাত ট্যাবলেট নেয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা, ৭০ টাকা দামের নিউ ফাক্স সিরাপ নেয়া হচ্ছে ৩৫০টাকা, ২৮ টাকা দামের ম্যাক্সভিন সিরাপ বিক্রি করা হচ্ছে ২২০ টাকা, ২৮ টাকা দামের ম্যাক্সজিন সিরাপ ২০০ টাকা, ৩২ টাকা দামের একবাটি ‘মা আরদে খুরমা’ নামের হালুয়া বিক্রি করা হচ্ছে ৫০০ টাকা।

একইভাবে হাইম্যাক্স ইউনানী ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানীর মাত্র একশত টাকা দামের ‘কেলেশ’ নামের একবক্স যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বিক্রি করে লুটে নিচ্ছেন ১২শত টাকা। ২৪ টাকা দামের একপাতা হাব্বে নিশাত ও মুকাব্বিকাশ নামের ট্যাবলেট বিক্রি করা হচ্ছে ৩০০টাকা, ২৮ টাকা দামের জিন শিং প্লাস নামের সিরাপ বিক্রি করা হচ্ছে ২২০ টাকা, ১৬০ টাকা দামের জাওয়ারিশ কুমনী নামের হালুয়া মোদক বিক্রি করা হচ্ছে ১২শত টাকা, ৩৫ টাকা দামের আর দে হালুয়া বিক্রি করা হচ্ছে ৩৫০ টাকা।

অনুরূপভাবে দিদার ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানীর ১৬০ টাকা দামের মোটা তাজা করণ ওষূধ ‘শুক্রসনজবনী’ নেয়া হচ্ছে ১২শত টাকা, ২৬ টাকা দামের একপাতা লতি বিলাশ ক্যাপসুল বিক্রি করা হচ্ছে ৩০০ টাকা, ২৬ টাকা দামের লতি বিলাশ বোতল নিচ্ছে ৩০০ টাকা, ৬০ টাকা দামের সিরাপ কালোজাম বিক্রি করা হচ্ছে ৩৫০ টাকা ও ৬০ টাকা দামের বডিপ্লাস নামের সিরাপ বিক্রি করছে ৩৫০ টাকা দামে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, আয়ুর্বেদিক, ইউনানী ও ভেষজ ওষুধের বাজারের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে ভুঁইফোড় ও অসাধু প্রতিষ্ঠান। তারা প্রতিবছর সরকারকে বিপুল অঙ্কের করও ফাঁকি দিচ্ছে। রাস্তা-ঘাটে ওষুধ বিক্রি করা বেআইনি। প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেউ ওষুধ খাওয়া বা বিক্রি করাও বেআইনি। ভেজাল ওষুধ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে অভিযোগ করেও তেমন কাজ হচ্ছেনা। এই সুযোগে প্রতারক চক্র মানুষের জীবন নিয়ে প্রতারণার বাণিজ্যে মেতে উঠেছে।