অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন
২৩ শে জুন প্রতি বছর আমাদের স্বমরনকরে দেয় পলাশীর বিপর্যয়ের কথা। স্মরন করে দেয় দেশের ভিতর বিভিন্ন ষড়যন্ত্রকরী মীরজাফর , জগৎশেঠদের ছলনা ষড়যন্ত্র বিশ্বাষঘাতকতা, যা বর্তমান সমৃদ্ধ জনপথের স্বাধীনতা, সমৃদ্দি , সুখ শান্তি কিভাবে ছারখার করে দিতে পারে সেই ইতিহাস এর কথা।

২৩ জুন, পলাশীর মাঠে ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভের মাত্র ৩২ শ সৈন্যের কাছে নবাব সিরাজদ্দৌল্লার ৫০,০০০ হাজার সেনাবাহিনী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পরাজয় বরন করে। বাংলার স্বাধীনতা ১৯০ বছরের জন্য অস্তমিত হয়ে যায়। ষড়যন্ত্রকারী মীরজাফরের নির্দ্দেশে নিহত হন বাংলার নবাব সিরাজদ্দৈাল্লা। উল্লেখ করা যেতে পারে সেদিন যদি নবাবের এক এক জন সৈন্য এক টুকরো পাথর নিয়ে ইংরেজ সৈন্যকে ছুড়ে মারতো , তাতেও ক্লাইভের সৈন্য পরাজিত হতো। কিন্তু তা পারেনি মীরজাফরের ষড়যন্ত্রের কারনে।

সেই কালো দিবস প্রতি বছর ফিরে আসে আসে আমাদের মাঝে।আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়যে, সিরাজদ্দৌল্লা গৃহশত্রুদের চিহ্নিত করে সময়মতো ব্যবস্থা নিতে ভুল করেছিল বলেই বাংলার মুসলমানরা দুশবছরের গোলামে পরিণত হয়েছিল।পলাশীর যুদ্বে সিরাজ কেন পরাজিত ও নিহত হয়েছিলেন? মুর্শিদকুলিখাঁর উদার দাক্ষিন্যে বেড়ে উঠা হিন্দু রাজা, মহারাজা, সভাসদ সামরিক প্রশাসক , রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীদের মুসলিম বিদ্বেশ ইত্যাদী পলাশীর বিপর্যয়ের অন্যতম কারন বলে অনেকে মনে করেন।তারা একবারও ভাবেনি সিরাজের পতনের কারনে তাদের বিজয় হবেনা।পলাশীর বিপর্যয় মানে সারা বাংলার বিপর্যয়, একথা তারা একবারও বুঝতে পারেনি। মুর্শিদকুলি উদার হস্তে হিন্দু কুলিনদের রাজস্বপদে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তার আমলে ভুপৎরায়, দর্পনারায়ন, রঘুনন্দন, কিঙ্কর রায়, আলম চাঁদ,লাহেরীমল,দিলপৎসিং হিন্দু দিওয়ানীর গুরুত্বপুর্ন পদে বহাল ছিলেন।

১৭৪০ সালে আলীবর্দ্দী নবাব হন। এই সময় হিন্দু আধিপত্য এতো বেশী ছিলযে, মুসলমানরা নামেমাত্র শাসক থাকলেও সমস্থ ক্ষমতা তাদের হাতে ছিল।জগতশেঠ, রাজবল্লভ, দেওয়ান চিনু রায় , কিরাত চাঁদ, বিরুদত্ত, রায়দুর্লভ, মানিকচাঁদ,নন্দকুমার এরা সবাই অসাধারন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।এরা ছিলেন কলকাতা ষড়যন্ত্রের মুল নায়ক।কলকাতায় বসেই বর্নহিন্দুরা মারাঠাদের লুঠতরাজ, হত্যা, লুন্ঠনে , ইন্ধনে সাহায্য করেছে। কলকাতা তখন ষড়যন্ত্রের নগরী ছিল।

আজ পার্বত্য শান্তি চুক্তির কথা মনে পড়লে তখন মীরজাফর, ক্লাইভের সেই চুক্তির কথা মনে পড়ে, যে চুক্তির বলে পেছন দরজা দিয়ে শত্রুকে ঘরে ঢুকানো হয়েছিল।দেশের অভ্যন্তরে ফ্রি হ্যান্ড এন, জি, ও দের কার্যক্রম দেখে মনে পড়ে পলাশীর কথা আমেকিরকার পুর্ব উপকুলে ১৭ শতকের গোলামী থেকে ইউরোপীয় অভিবাসন শুরু হয়। ঠিক সেই সময়ে পার্বত্য জনপদ বাসীদেরও অভিবাসন শুরু হয়। তাহলে অভিবাসী মার্কিনিদের আদিবাসী না বলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী বলা হচ্ছে কেন? মার্কিন যুক্ত রাস্ট্রে রেড ইন্ডিয়ান বলে এক আদিবাসী রয়েছে। এদের ক্ষেপিয়ে তুললে অশনি স;ংকেত অনিবার্য। সুতরাং তৃতীয় বিশ্বকে অস্থিতিশীল করতে পারলে পুঁজিবাদী অনুপ্রবেশ সহজ হয়। এ কথা কে না জানে।

আমাদের দেশের এন জি ও চাকরী পাওয়া ছেলেরা আনন্দে আটখানা হচ্ছে। তাদের কাছে এসব কোন বিষয় না ভালো বেতনটাই আসল।পশ্চিমাদের কিন্তু এসব ইতিহাসের কথা ভালো মনে আছে। আর মনে আছে বলেই তারা সেই বৃটিশ আমলে কবর দেওয়া দাদুর কবর দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশে এসে অনুরোধ করে। কিন্তু আমরা সেই স্বাধীনতা হারানো বেদনাটা কি একবারও আমাদের হৃদয়ে পুষে রাখি?

সুতরাং ১৭৫৭ সালের ২৩ জুনের কালো দিবস বাংলাশের ললাট থেকে আজো মুছে যায়নি। সেই কালো দিবস প্রতিবছর ফিরে আসে এবং আমাদের স্বরন করিয়ে দেয় গৃহশত্রুদের চিনতে না পেরে সিরাজ ভুল করেছিল বলে আমাদের দুশবছরের গোলাম হতে হয়েছিল। আজো সে সম্ভাবনা দুর হয়ে যায়নি। তাই ঘরের শত্রুদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হলে আমরা আবার পরাধিনতার অতল গহবরে নিমজ্জিত হবো।