মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া:
চকরিয়ায় বিরোধীয় জায়গাজমির দুপক্ষের সালিশ বৈঠকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় উভয়কে বাধা প্রদানের চেষ্টা করায় সালিশকার ও অনুপস্থিত তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। এমনই অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মোঃ জসিম উদ্দিন (৫০) নামের ব্যক্তি। তিনি উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড বৈরাগিরখীল গ্রামের বাসিন্দা মৃত নুরুল হুদার পুত্র।
গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় বৈরাগিরখীল এলাকায় ঘটেছে সংঘর্ষের এ ঘটনা। এতে অন্তত ৭ জন নারীপুরুষ গুরুতর আহত হয়েছে। সালিশকারকে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে সালিশকার ও মামলার আসামী জসিম উদ্দিন বলেন, আমার চাচাত ভাই শ্রদ্ধেয় ডাঃ আবু তাহের মৃত্যুর পর ভিটেমাটি ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ওনার পরিবারের সাথে বিরোধ চলছিল তারই আপন ভাগিনা বৈরাগিরখীল এলাকার মৃত ফয়েজ আহমদের ছেলে বকতিয়ার উদ্দিন ভুট্টো (৩৮)র সাথে। তাদের উভয় পক্ষ বৈঠকের কথা জানিয়ে আমাকে মরহুম ডাঃ আবু তাহেরের পক্ষ থেকে সালিশকার হিসেবে বৈঠকে থাকতে বলা হয়। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকার পরও পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তি হওয়ার আশায় প্রস্তাবে আমি রাজি হই। এ বৈঠকে গিয়ে দেখতে পাই সালিশকার হিসেবে উপস্থিত রয়েছে ওয়ার্ড মেম্বার ফখরু উদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ফরিদুল হকসহ এলাকার কয়েকজন মুরব্বি। বৈঠকের দিন আলোচনার একপর্যায়ে আবদুল্লাহ আল নোমান ও তার ভাই আবু দরদার সাথে তর্ক সৃষ্টি হয় বখতিয়ার উদ্দিন ভুট্টোর। বিতর্কের একপর্যায়ে সংঘর্ষের অবস্থা দেখে আমি তাদের উভয় পক্ষকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এ বাধাকে উপেক্ষা করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে কমবেশি ৭-৮ জন আহত হয়েছে। পরে জানতে পারি এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় দু’পক্ষই মামলা দায়ের করে। তৎমধ্যে মরহুম ডাঃ আবু তাহেরের পুত্র আবদুল্লাহ আল আরমান বাদী হয়ে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে আমাকে ২নং, আমার দুই ছেলে মোঃ মামুনকে ৫নং ও মোঃ সাইফুলকে ৭নং আসামী করা হয়েছে। অথচ আমার এ দুই ছেলে শালিস বৈঠক বা তার আশেপাশেও ছিল না। আমি এ মিথ্যা মামলার নিরপেক্ষ সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
জখমী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, চাচা জসিম উদ্দিন সালিশকার হিসেবে ছিল ঠিক আছে। কিন্তু তিনি আমাকে আহত করেছেন। বিষয়টি সত্যতা প্রমাণ করতে আমার সকল তথ্য হাতে রয়েছে।
এ ব্যাপারে সালিশকার ডাঃ ফরিদুল হক বলেন, জসিম উদ্দিন আমাদের সাথে সালিশকার হিসেবে ছিলেন। সে কাউকে মারধর করতে আমি দেখিনি। বৈঠককালে বিরোধীয় ওই জমির পরিমাপ করতে বের হলে আমি ঘটনাস্থলের দুরে ছিলাম।
এ বিষয়ে সালিশকার ডুলাহাজারা ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার ফখরু উদ্দিন বলেন, দুপক্ষের সম্মতিতে আমারা বিরোধীয় ভিটেমাটির আপোষ মিমাংসায় বসি। এসময় জসিম উদ্দিনও মরহুম ডাঃ আবু তাহের পরিবারে পক্ষের সালিশকার ছিলেন। আমরা সালিশকারদের তোয়াক্কা না করে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ডাঃ আবু তাহের পরিবারে দায়েরকৃত মামলায় জসিম উদ্দিন আবদুল্লাহ আল নোমানকে কুপাঘাত করেছে ও তার ছেলেরা চাচী বেগম ডাঃ আবু তাহেরকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। তবে অভিযোগ সমূহ ছিল পুরোপুরি মিথ্যা ও সাজানো। প্রকৃত বিষয় হলো সালিশকার জসিম উদ্দিন উভয়ের সংঘর্ষে বাধা দিতে চেয়েছিল এবং তার ছেলেরা কেউই ঘটনাস্থলে ছিল না। এছাড়া ঘটনার পরপর আহত আবু দরদা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ভিডিওটির শুরুতে আবু দরদা স্বীকার করেছে ঘটনার সময় তার চাচা জসিম উদ্দিন তাকে সংঘর্ষের সময় টেনে ধরছিল। ওই ভিডিওর মধ্যপ্রান্তে অপরজনে নাম বলে দেয়ায় সে তার চাচা জসিম উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে।
একই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার ফরিদুল আলম বলেন, জসিম শালিস বৈঠকে কখনো পক্ষপাতিত্ব করেন না। তার সাথে দীর্ঘ সময় ব্যবসার আলোকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, সে মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে। তাছাড়া জসিমকে আসামী করা মামলার এজাহারে সাক্ষীরা সকলেই বাদী পরিবারের সদস্য। এলাকার লোকজন কেউ মিথ্যা সাক্ষী দিতে রাজি না হওয়ায় এজাহারে তারা নিজ পরিবারের সদস্যদের ঘটনার সাক্ষী বানিয়েছে।
দুপক্ষের মামলা তদন্ত কর্মকর্তা চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ মহসিন জানান, দুপক্ষের মামলায় সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে। এ নিয়ে মামলার পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।