রুহুল আমিন 

বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা হলেও আজ আন্তজাতিক মাতৃভাষা। এটা আমাদের জন্য একটি বিশাল পাওয়া বা অর্জন। আরো শিকড়ের কাছে গেলে বলতে হয় আমার মাতৃ ভাষা চাটঁগাইয়া। সুখের বিষয় বিশ্ব ভাষায় ১০০ এর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে  চট্টগ্রাম ও সিলেটের আঞ্চলিক ভাষা। এটাও একটা বড় অর্জন। চাঁটগাইয়া ও সিলেটি ভাষাও বাংলা ভাষার একটি অন্যতম উপাদান। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন না হলে এ সমস্ত ভাষাও যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হত বা হারিয়ে যেত।

বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামগুলোতেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের চতুর্থ ও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ভাষা। বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, উড়িষ্যা রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ভারতে হিন্দির পরেই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বাংলা।এছাড়াও মধ্য প্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে। সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ২৬ কোটির অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও স্তোত্র বাংলাতে রচিত।

এই ভাষাকে আমাদের মাতৃভাষা হিসেবে ছিনিয়ে আনতে গিয়ে বাংলার দামাল ছেলেদের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে বিলিয়ে দিতে হয়েছিল। তারপরেই ১৯৫৬ সালে সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই ভাষাকে আমরা জারজ সন্তানের মত করে ফেলছি।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাষার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিন্তু আমার দেশে তা নেই।
থাকলেও তা নগন্য।সেই নগন্য প্রচেষ্টা কখনও ভাষার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখাটা দুষ্কর।
আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখি,বাংলা ভাষার হাজারও শব্দ আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের সাথে মিশেছে হাজারও বৈদেশিক শব্দ।
আমাদের মাতৃভাষায় ইংরেজির আধিপত্যটা চরম।
এটা ঠিক যে ইংরেজি আন্তজার্তিক ভাষা যেহেতু সে ভাষা না শেখার বিকল্প নেই কিন্তু নিজ ভাষাকে এড়িয়ে কখনও অন্য ভাষা আমাকে উন্নতির শিখরে পৌছিয়ে দিতে পারে না।
আগে নিজ ভাষাকে সমুন্নত রেখে অন্য ভাষা আয়ত্ব করা উচিত।
আমাদের সরকারেরও উচিত বাংলা ভাষাকে নিয়ে বিস্তর আকারে গবেষণা করা এবং যারা বাংলা ভাষা নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছে তাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা এবং স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা ও পৃষ্টপোষকতা দেয়া।
আমরা যারা তরুণ সমাজ আছি তাদের উচিত,ভাষা আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ ও জাতির জন্য সবসময় নিবেদিত প্রাণ হওয়া।
কারণ বাঙ্গালির প্রথম জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ভাষা আন্দোলন, সেই আন্দোলনের সফলতায় ভবিষ্যৎ সকল আন্দোলন, সংগ্রামে সফলতার ক্ষেত্রে শক্তি যুগিয়েছে।
সেই জন্য তো বলা হয়,ভাষা আন্দোলনের ভিতর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল।
সেজন্য বলতে পারি,ভাষা আন্দোলন এই একটি আন্দোলনই বাঙ্গালির মুক্তির দরজা খুলে দিয়েছিল।

আজ আমরা শহিদদের স্মরণ করার নামে অনেক জায়গায় বিভিন্ন ভাবে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করি,শহিদ মিনারে পুষ্পঅর্পন অনেকটায় আজ লোক দেখানোতে পরিণত হয়েছে, কার আগে কে পুষ্পঅর্পন করবে সেই প্রতিযোগিতার কারণে একজনের পায়ের নিচে অন্যজন পিষ্ট হওয়া,দিনশেষে সেই ফুল পায়ের নিচে দেওয়া,যে পতাকা এবং শহিদের ছবিসহ ব্যানার অসম্মানের সাথে ছুড়ে ফেলে দেওয়া এটি কখনও আত্নার শান্তি দেয় না। বরং শহীদরা অপমানিত হয়। যেটি কখনও কাম্য নই।
তাই বলি, অন্তর থেকে শ্রদ্ধার সাথে না হলে দামি ফুলের মালা,দামি কাপড় পড়ে  শহিদ মিনারে পুষ্পঅর্পন এবং স্লোগান কখনও শহিদদের আত্নার শান্তি দিতে পারে না। পাশাপাশি সুন্দর এবং পবিত্র মনে একটু দোয়া  অনেক দামি।
দেশের সকল মানুষ সুখে,শান্তিতে থাকলে,দারিদ্র বিমোচন হলে সর্বোপরি ভাষার সঠিক মর্যাদা দিলেই ভাষা শহিদরা শান্তি পাবে।
তাই আসুন, বাংলা ভাষার ঐতিহ্য, গৌরব ধরে রাখতে সবাই বদ্ধপরিকর হই।
দেশের উন্নতির জন্য নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করি।
অতিতেও তরুণরা’ই পরিবর্তন করেছে, ভবিষ্যৎও তরুণরা পরিবর্তন আনবে।
তারুণ্যে বলিয়ানে বলিয়ান হউক প্রিয় বাংলাদেশ।
সকল ভাষা শহিদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও আত্নার মাগফেরাত কামনা করি।

 

 

লেখক: শিক্ষার্থী,  ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ। কক্সবাজার সিটি কলেজ ও ডিরেক্টর ,অধ্যয়ন একাডেমিক সলিউশন।