মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম:

নিকট অতীতেও তীব্র স্রোতের জন্য বহুল পরিচিত মাতামুহুরীকে যারা চেনেন তাদের পক্ষে এই নদীতে নাব্য সঙ্কটের খবর হজম করা কঠিন। অথচ এটাই বাস্তবতা। মাত্র দেড়যুগ আগেও যে নদীর ভীতিকর অস্তিত্ব প্রকৃতির রুদ্ররূপের প্রতিফলন হিসেবে গণ্য হতো এখন সেখানে বর্ষা মৌসুম শেষ হতে না হতেই ‘পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি’।
মাতামুহুরী নদী বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপন্ন হয়ে সমতলে নেমে এসে কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। মাতামুহুরী একান্তভাবেই বাংলাদেশের নদী। স্থানীয় প্রবীন ব্যক্তিদের মতে, এ নদীর আজকের বিবর্ণ দশার জন্য স্থানীয়রাই দায়ী।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তিস্থলে রয়েছে অগুনতি ঝিরি, খাল ও পাহাড়। মাতামুহুরী নদীর দু’তীরে রয়েছে সংরক্ষিত মাতামুহুরী রিজার্ভ। যার আয়তন ১ লক্ষ প্রায় ৩ হাজার একর। আয়তনের দিক দিয়ে এ রিজার্ভ ফরেস্ট এশিয়া মহাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃতত্তম রিজার্ভ ফরেস্ট।
লামা-আলীকদম উপজেলার প্রবীন সাংবাদিক রুহুল আমিন জানান, যত্রতত্র জুমচাষ ও বৃক্ষ নিধনের ফলে এসব ঝিরি ও খাল দিয়ে পানি প্রবাহ একেবারে কমে গেছে। তদুপরি এই নদীর উৎসমুখ ঘিরে যে বিশাল বনাঞ্চল, গত দেড় দশক ধরে সেখানে চলছে অবাধে বৃক্ষনিধন ও বাঁশকর্তন। এর পাশাপাশি পাহাড়িয়াদের জুমচাষের ফলে পাহাড় ক্ষয়ে মাটি এসে পড়েছে নদীতে। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পানি ধারণক্ষমতা একেবারে কমে গেছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই নদীর দু’কূল উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আবার বৃষ্টিপাতের সময় পার হয়ে গেলে নদী হয়ে পড়ছে শীর্ণকায়া।
তিনি বলেন, আসলে নদীরও যে পরিচর্যা দরকার, অপব্যবহারের কারণে নদীর জীবনীশক্তির যে হানি ঘটে এ বাস্তবতা মাথায় রাখার দায় আমরা ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি হীন স্বার্থবুদ্ধিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে। গাছ কেটে সাফ করে ফেলা হলে শুধু নদী নয়, সার্বিকভাবে প্রতিবেশগত ভারসাম্য যে টলে যায় তা আমরা ভুলে বসে আছি। এর খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে। কিন্তু তারপরও চেতনা ফেরার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।