আনোয়ার হোছাই, ঈদগাঁহ
বোনকে মোবাইলে বারবার অপরিচিত যুবকের সাথে কথা বলতে দেখে এক পর্যায়ে ভাই মোবাইল কেড়ে নেয়। আবার ওই যুবক কল দিলে ভাই রিসিভ করে কথা কাটাকাটির পর গালিগালাজ করে। এতে প্রেমিক যুবক ভাইকে দেখে নিবে বলে হুমকি দেয়। সময় সুযোগে বোনের প্রেমিক ঠান্ডা মাথায় ভাইকে খুনও করে ফেলে। এতক্ষণ যে ভাইটির কথা বলছি, সে হতভাগা ভাইয়ের মাথার খুলি ও হাড়গুঁড় সম্প্রতি ঈদগাঁহর গহীন জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যার নাম ইব্রাহিম। সে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের লাইল্যারমার পাড়ার ফরিদুল আলম প্রকাশ ফকিরের ছেলে। আর প্রেমিকরুপি প্রধান খুনি হচ্ছে কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়ার ইছহাক মিয়ার ছেলে আবদুল্লাহ (২৮)। খুনের ক্লু উদঘাটনে আটক কিলার চক্ররে সদস্য মোহাম্মদ হোসেন আদালতে স্বীকারুক্তিতে বলেন, ইব্রাহিম বোনের প্রেমিক আবদুল্লাহকে গালি দেওয়ায় প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে কথিত প্রেমিক। প্রতিশোধ বাস্তবায়ন করতে ইব্রাহীমের এলাকার মোহাম্মদ আনোয়ার নামের যুুবকের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রেমিক আবদুল্লাহ। একইভাবে ইব্রাহীমের শ্বশুর বাড়ি কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁহস্থ ইসলামাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম গজালিয়া গ্রামের সোলায়মানের ছেলে মোহাম্মদ হোসেনের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুুলে প্রেমিক। ইব্রাহীম নিজ বাড়ি থেকে বের হলে খুনি আবদুল্লাহকে জানানোর দায়িত্ব পালন করত সেখানকার আনোয়ার। আর ইব্রাহীম শাশুর বাড়ি এলাকায় আসলে সে সংবাদ আবদুল্লাহকে জানাত ঐ এলাকার মোহাম্মদ হোসেন। একদিন খুনি আবদুল্লাহর কথামত ইব্রাহীমকে কৌশলে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে আসে তারই এলাকার আনোয়ার। ইব্রাহীম শ্বশুর বাড়িতে আসছে সংবাদ পেয়ে আবদুল্লাহ তার মিশন বাস্তবায়ন করতে তার এলাকার রফিক নামের অপর এক যুবককে সাথে নিয়ে আবদুল্লাহ,আনোয়ার, মোহাম্মদ হোসেনসহ আরো দুজন নিয়ে ইব্রাহীমের সাথে সাক্ষাৎ, করে এবং সকলে এক সাথে নাস্তা করে। পরে এ ঘাতক চক্র বনে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে গহীন অরণ্যে নিয়ে যায় ইব্রাহিমকে। তখনো সে বুঝতে পারেনি বোনের মোবাইলে তার সাথে বাড়াবাড়ি করা ও হুমকি দেয়া যুুবকটি তার সামনে এবং একটু পরে সে তাকে খুন করবে। পূর্ব পরিকল্পনামত এ ৫ ঘাতক শ্বাসরুদ্ধ করে ইব্রাহীমকে হত্যা করে গহীন অরণ্যে ফেলে আসে বলে আটককৃত কিলার সদস্য মোহাম্মদ হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দেন বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঈদগাঁহ পুলিশের এসআই আবু বকর ছিদ্দীক জানান। এর পর থেকে বিগত প্রায় তিন মাসকাল হতভাগা ইব্রাহিম নিখোঁজ থাকায় তার বাবা ফরিদুল আলম লামা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। ঘটনার প্রায় তিন মাস পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি দিনে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁহস্থ ইসলামপুর ইউনিয়নের পূর্বে গহীন বন থেকে একটি মাথার খুলিসহ হাড়গুড়, সেন্ডেল, শার্ট ও লুঙ্গি কাঠুরিয়াদের সহায়তায় ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ উদ্ধার করে।এসব উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে ইব্রাহিমের বাবা উদ্ধার করা শার্ট দেখে শনাক্ত করেন এটি তার নিখোঁজ ছেলের শার্ট এবং হাঁড়গুড় গুলো তার বলে দাবি করে। হতভাগা ইব্রাহিমের বাবা ফরিদুল আলম বাদী হয়ে তখন ৮ জনকে আসামী করে কক্সবাজার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যাতে স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য এবং পরকীয়া প্রেমের বাধা দেওয়ার জেরে শ্বশুর পক্ষের লোকজন পরিকল্পিত ভাবে ইব্রাহীমকে ডেকে এনে হত্যা করে লাশ গুম করে বলে এজাহারে উল্লেখ করে । মামলা তদন্তের দায়ীত্ব দেওয়া হয় সচুতর পুলিশ কর্মকর্তা আবু বকর ছিদ্দিককে। ইব্রাহীম নিখোঁজের আগে কাদের সাথে মোবাইলে কথা বলেছিল, কল লিষ্ট তুলে তাদের নম্বর শনাক্ত করে। কলের সূত্র ধরে আটক করেন ইসলামাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম গজালিয়ার সোলায়মানের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (১৯)কে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে উক্ত লোমহর্ষক চাঞ্চল্যকর ঘটনার স্বীকারোক্তি দেন।তার স্বীকারোক্তি ও কল লিষ্টের তালিকায় থাকা চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়ার ইছাহাকের ছেলে এ খুনের প্রধান ঘাতক ও নিহত ইব্রাহীমের বোনের কথিত প্রেমিক আবদুল্লাহ ও তার খুনি চক্রের সদস্য একই এলাকার জাফর আলমের ছেলে রফিক ও নিহতের এলাকার ইছহাকের ছেলে মোহাম্মদ আনোয়ারকে আটক করে। পৃৃথক অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে এ কিলারদের আটক করা হয়। তদন্তের স্বার্থে পলাতক অপর খুনির পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। এদিকে এ বর্বর খুনের ঘটনার আসল রহস্য প্রকাশের পর সর্বব মহল এ ঠান্ডা মাথার খুনিদের ফাঁসির দাবি জানান।
ভাইকে খুন করল বোনের প্রেমিক
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।