বিশেষ প্রতিবেদক :
ভারতের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন আল্লামা সৈয়দ আশহাদ মাদানী বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। সুন্দর শরীর-ঘরবাড়ি-ছেলে-মেয়ে ধন-দৌলত এ সবই সম্পদ। কিন্তু তার মধ্যে সবচাইতে বড় সম্পদ হলো ঈমানের সম্পদ। এই ঈমানী সম্পদ রক্ষার জন্য জীবনের সর্বস্তরে রসুল সঃ এর আদর্শ মেনে চলতে হবে।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, রসুল সঃ এর আদর্শ অনুসরনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সন্ত্রাসমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে উন্নয়নের উচ্চ শিখরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে দুই দিনব্যাপী ইসলামী সম্মেলনে প্রধান অতিথির আলোচনায় আল্লামা আশহাদ মাদানী বলেন, সারা বিশ্বে মুসলমানদের ঈমানী সম্পদ লুটে নেওয়ার জন্য আজ ইহুদী-নাছারা গোষ্ঠী দলবদ্ধভাবে মুসলমানদের উপর আক্রমণ করছে। এই আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য এবং ঈমানের সম্পদ রক্ষা করার জন্য মুসলমানদেরকে নিয়মিত কয়েকটি কাজ করতে হবে।

তার মধ্যে একটি হলো নামাজ। তিনি বলেন কোনো মতে নামাজ ছাড়া যাবে না। শুধু জুমার নামাজ-ঈদের নামাজ আদায় করলে হবেনা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। তিনি আরো বলেন শুধু মসজিদে বসে বসে নামাজ আদায় করলেও হবে না। আজান হলে যেকোনো কাজ ছেড়ে নামাজে হাজির হতে হবে।

এরপরে তিনি বলেন মানুষকে কষ্ট দেয়া যাবে না, টাকার বাহাদুরী দেখিয়ে ক্ষমতার বাহাদুরি দেখিয়ে কোন মানুষকে কোন ধরনের কষ্ট দেয় আল্লাহ রব্বুল আলামীন সহ্য করেন না। এটা এক প্রকার গর্ব এবং অহংকার। আল্লাহ অহংকার সহ্য করেন না।

এরপরে আল্লামা আশহাদ মাদানী বলেন, হারাম থেকে প্রত্যেক মুসলমানকে বেঁচে থাকতে হবে। কোনমতেই হারাম রুজি রোজগার করা যাবেনা। তিনি বলেন, হারামের মধ্যে কোন ধরনের বরকত নাই। আর হালাল রুজির মধ্যে বরকত রয়েছে।

আল্লামা আশহাদ মাদানী বলেন, প্রত্যেক মুসলমানকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জীবনের সর্বস্তরে আদর্শ হিসেব মেনে চলতে হবে। চলতে-ফিরতে উঠতে বসতে কাজে-কর্মে ব্যবসা-বাণিজ্যে এমনকি জীবনের সর্বস্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ মেনে চলতে হবে। তখনই একজন মুসলমান তার ঈমানী শক্তিকে ইহুদী-নাছারা ও শয়তানি আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে।

সুদের মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে আল্লামা আশহাদ মাদানী বলেন, সুদ এমন এক মারাত্মক ব্যাধি যা দুনিয়া আখেরাত দুটাই নষ্ট করে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই সুদ হারাম করেছেন। আজকে সম্পদশালী হওয়ার জন্য সমাজে সুদী লেনদেন ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যার পরিণতি খুবই মারাত্মক বলে তিনি মুসলিম সমাজকে সতর্ক করেছেন। সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা পরিবার রাষ্ট্র ও সমাজের কোথাও শান্তি আনতে পারেনা।

শাইখুল হাদিস আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারী বলেন, আলেমরাই সমাজের ইমাম। আলেমদের দেখানো পথে সমাজ পরিচালিত হলে সমাজে সন্ত্রাস দুর্নীতি থাকবেনা। এতে সমাজে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

তিনি বলেন, তবে কিছু কিছু আলেমও আবার স্বার্থপরতার পরিচয় দিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। ইহুদী ও কাদিয়ানীরা কৌশলে ওই সব আলেমদের দিয়ে ইসলাম বিরোধী প্রচারনা চালাচ্ছে। এদের কাছ থেকে মুসলমানদের সতর্ক থাকতে হবে।

আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, মুসলমানদেরকে নবী মুহাম্মদ সঃ এর উম্মত বানিয়ে এবং কোরআন দিয়ে সবচেয়ে বড় সম্মানিত করেছেন। মুসলমানদেরকে এ দুইটি সবচেয়ে বড় নেয়ামত দান করেছেন মহান আল্লাহ। তিনি বলেন, আজকের ঝঞ্ছাবিক্ষুব্ধ সমাজে কোরআনই একমাত্র শান্তির গ্রান্টি। কোরআনের আইন আর রসুল সঃ এর আদর্শ অনুসরনের মাধ্যমে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে সন্ত্রাসমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে উন্নয়নের উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে চাই।

স্থানীয় প্রবীণ আলেমেদ্বীন মাওলানা মোহাম্মদ মুসলিম, হেফাজতে ইসলামের জেলা আমীর মাওলানা আবুল হাসান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দুইদিন ব্যাপী ইসলামী সম্মেলনের শেষ অধিবেশনে ভারতের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন আল্লামা আশহাদ মাদানী, পটিয়া জামিয়া ইসলামিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারী, মাওলানা সিবগাতুল্লা, আল্লামা তৈয়ব, আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব, আল্লামা মুফতি আরশাদ রহমানী, আল্লামা আব্দুল বাসেত খান সিরাজী সহ ওলামায়ে কেরাম বক্তব্য রাখেন।

দুই দিনের এই ইসলামী সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও ইসলামিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমদ চৌধুরী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাওলানা আলী হাচ্ছান চৌধুরী, মাওলানা মুহসেন শরীফ, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ও খতীব মাওলানা ক্বারী তাউল্লাহ। #