চীনের উহান থেকে উৎপত্তি লাভ করা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্ববাসীর কাছে এখন এক আতঙ্কের নাম। এই ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে ১৬ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ৬৯ হাজারের বেশি। বিশ্বে কতটা ছড়ালো এই ভাইরাস?

চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে অন্তত ৩০টি দেশে আনুমানিক ৬০০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। চীনের বাইরে এশিয়ার আরও তিন দেশ, ফিলিপাইন, হংকং এবং জাপানে একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন। এদিকে এশিয়ার বাইরে গতকাল ফ্রান্সেও এক চীনা নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।

আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে মিসরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা আর জনমানবশূন্য অ্যান্টার্কটিকা বাদে বিশ্বের পাঁচ মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। কোন মহাদেশের কোথায় কতজন আক্রান্ত হয়েছেন সেই চিত্র তুলে ধরা হলো।

চীন
গতকাল শনিবার পর্যন্ত চীনে ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যার বেশিরভাগ চীনের মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ হুবেইয়ের রাজধানী উহান কিংবা তার আশেপাশের এলাকার। গত বছরের শেষে এই উহান শহর থেকেই বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

চীনের মূল ভূখন্ডে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬৬৫ জন, যার অধিকাংশই উহান শহরের। এছাড়া রাজধানী বেইজিংসহ দেশটির অন্যান্য অঞ্চলেও অনেকে মারা গেছেন। তালিকায় এক মার্কিন নাগরিকও রয়েছেন, যা দেশটিতে প্রথম কোনো বিদেশির মৃত্যু

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল
জাপানে ইয়োকোহোমা বন্দরে আটকে পড়া (কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে) ব্রিটিশ প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসে এখন পর্যন্ত ২৩৫ যাত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যা চীনের পর সর্বোচ্চ। প্রমোদতরীটি এখন কোয়ারেন্টাইনে আছে। আর এতে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই।

jagonews24

সিঙ্গাপুরে ৭২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে বসবাসরত পাঁচজন বাংলাদেশি নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ জন। মারা গেছেন একজন।

এদিকে চীনের প্রতিবেশী থাইল্যান্ডে ৩৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে জাপানে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫২ জন। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ২৮ এবং ২২ জন।

চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন তাইওয়ানে ১৮ এবং ম্যাকাউয়ে ১০ জন প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ভিয়েতনাম আর অস্ট্রেলিয়ায় এই সংখ্যা ১৬ এবং ১৫ জন। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার ভারতে ৩ এবং শ্রীলঙ্কা ও নেপালে একজন করে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এদিকে ফিলিপাইনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া দেশটির আরও দুজন নাগরিক ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আরেক দেশ কম্বোডিয়ায় এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্য একজন।

উত্তর আমেরিকা
উত্তর আমেরিকা মহাদেশের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির ১৫ জন নাগরিক এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া ওই অঞ্চলের আরেক কানাডায় করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এখন ৮ জন।

ইউরোপ
এশিয়ার বাইরে প্রথম দেশে হিসেবে ইউরোপের ফ্রান্সে গতকালে এক প্রবীণ চীনা পর্যটক করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া দেশটিতে কোভিড-১৯ নামে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ১১ জন। এছাড়া জার্মানিতেও ১৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিসা চলছে।

এছাড়া ওই অঞ্চলের আরকে দেশ যুক্তরাজ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া রাশিয়ায় ও স্পেনে দুজন করে চারজন এবং ফিনল্যান্ড, সুইডেন আর বেলজিয়ামে একনজন করে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য
মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রথমবারের মতো নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। সেখানে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আটে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে বাংলাদেশিসহ প্রচুর বিদেশি কর্মী রয়েছেন।

আফ্রিকা
আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে মিসরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। অধিকাংশ দেশ দরিদ্র হওয়ায় ওই মহাদেশটিকে এমনিতেই মহামারি ছড়ানোর ‘উর্বরভূমি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এতে করে সেখানে করোনার ব্যাপক বিস্তারের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।