ড্রেজার ফিরে গেছে চীনে

অনলাইন ডেস্ক : কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের (বড় ধরনের খননকাজ) জন্য সাত মাস আগে চীন থেকে আনা ৩১ ইঞ্চি ব্যাসের শক্তিশালী কাটার সাকশন ড্রেজারটি ফেরত পাঠানো হচ্ছে। নদীর তলদেশে ধারণার অতিরিক্ত পলিথিনের কারণে দুই মাস আগে খননকাজ থমকে যাওয়ায় অত্যাধুনিক ‘গ্র্যাব শিপ’ আনার প্রস্তাব দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে খননকাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্প এলাকায় পলির পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। এ কারণে নতুন করে ড্রেজিং শুরু করতে গেলে প্রকল্পের ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের সিনিয়র হাইড্রোগ্রাফার মো. নাসির উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কর্ণফুলীর তলদেশে কয়েক স্তরে জমে থাকা পলিথিনের কারণে চীন থেকে আনা সাকশন ড্রেজার দিয়ে খননকাজ চালানো যাচ্ছে না। প্রায় দুই মাস ধরে ড্রেজারটি কর্মহীন অবস্থায় নদীতে নোঙর করে আছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটি ফেরত পাঠিয়ে নতুন ড্রেজার আনার চিন্তা করছে।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কর্ণফুলীর নাব্য ফেরাতে গত বছর ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ। একই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনটি ছোট ড্রেজার দিয়ে শুরু হয় খননকাজ। কিন্তু নদীর তলদেশে জমে থাকা পলিথিনের কারণে বারবার বাধাগ্রস্ত হতে থাকে ড্রেজিং। এ অবস্থায় গত মার্চে চীন থেকে সাকশন ড্রেজারটি আনা হয়। পাইপলাইন স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষে গত ৬ মে ড্রেজারটি দিয়ে খননকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খায় তারা। নদীর তলদেশে ধারণার অতিরিক্ত পলিথিন থাকার কারণে সাকশন ড্রেজারের পাখাগুলো আটকে যেতে থাকে বারবার। একবার পলিথিনে আটকে গেলে তা পরিষ্কার করতে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। সে কারণে আড়াই মাসের মাথায় জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে ড্রেজারটি দিয়ে খননকাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

এই প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান বলেন, প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনী সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে। ওই সমীক্ষা রিপোর্টে কর্ণফুলীর তলদেশে ২ থেকে ৭ মিটার পর্যন্ত কয়েক স্তরে পলিথিন জমে আছে। এই রিপোর্ট ভিত্তি করে নৌবাহিনী কর্র্তৃপক্ষ খননকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং ও চায়না হারবারের পক্ষ থেকে নতুন করে আরও গভীরতায় খননের প্রস্তাব দিয়েছে। একই সঙ্গে খননকাজে কাটার সাকশন ড্রেজারের পরিবর্তে ‘গ্র্যাব শিপ’ ব্যবহারের কথাও উল্লেখ করেছে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই ও প্রয়োজনীয় সুপারিশের জন্য প্রকল্পের পরামর্শক টিমের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের আওতায় সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার হামিদচর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা চার মিটার গভীরতায় খনন করে ৪৩ লাখ ঘনমিটার পলি ও মাটি তোলার কথা। এর মধ্যে বন্দরের হিসাবে জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতির পরিমাণ ২১ শতাংশ। কিন্তু দুই মাস ধরে খননকাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্প এলাকায় পানির স্রোতে আবারও পলি জমে যাচ্ছে। সে কারণে নতুন করে ড্রেজিং করতে গেলে আগের হিসাবের চেয়ে আরও বেশি পরিমাণ পলি উত্তোলন করতে হবে। এতে প্রকল্প ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যেতে পারে।