সিবিএন ডেস্ক:

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। ২০১৮ সালের এই দিনে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান তিনি। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন।

খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর পূর্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে গত দুই বছর ধরে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। কিন্তু কোনো সুবিধা করতে পারেনি। আইনি লড়াই ও আন্দোলন-সংগ্রামে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা তো দূরের কথা সরকারের ওপর ন্যূনতম চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি দলটি।

খালেদার কারাবন্দির ১১ মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দুই বছর পূর্তির প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। এ দুটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দলটির নেতারা বলেছেন- ‘গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবেই বিএনপি নির্বাচনে গেছে।’

চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে গত দুই বছর ধরে জনসভা, প্রতিবাদসভা, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণঅনশন, প্রতীকী অনশন, গণস্বাক্ষর, গণসংযোগ, মানববন্ধন, বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে ব্রিফিংসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। সর্বপরি জামিনে মুক্তির জন্য আইনি লড়াই অব্যাহত রেখেছে শুরু থেকেই। কিন্তু খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারেনি। ফলে ৩৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনে শেষ দুই বছর কারাগারে রয়েছেন তিনি।
BNP

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা হয় দলটির চেয়ারপারসনের মুক্তি এবং শারীরিক অবস্থা নিয়ে। নেতাদের মধ্যে শঙ্কা যেমন আছে, তেমনি আছে আত্মসমালোচনা ও ব্যর্থতার গ্লানি। দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিহিংসামূলক আচরণের কারণেই খালেদাকে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে মধ্যম সারি ও মাঠ পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, কেবল সরকারের দমননীতি নয়, বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা, সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারা এবং সরকারের মনোভাব বুঝতে দেরি হওয়ার কারণেই মুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

বিএনপির নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। তার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের আস্থায় আনতে হবে। বিএনপির কোনো কর্মী গ্রেফতার বা আহত হয়ে হাসপাতালে গেলে শীর্ষ পর্যায়ের খবর নেন না। তাদের সহযোগিতা করেন না। মাঠ-পর্যায়ের কর্মীদের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতে হবে। তারাই আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবে।’

এ প্রসঙ্গে দলটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘ম্যাডাম কবে বের হবেন, কোন প্রক্রিয়ায় বের হবেন-সে বিষয় নিয়ে কথা বলার মতো বড় নেতা আমি নই। তবে মাঠের একজন কর্মী হিসেবে আমার মনে হয়, রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি যেভাবে মোকাবিলা করার কথা ছিল বিএনপি সেভাবে করতে পারেনি। আমার দল মনে করেছিল- আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ম্যাডাম মুক্ত হতে পারবেন। তাই তিনি আটক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনে না গিয়ে আইনি লড়াইয়ে গেছে বিএনপি। বিএনপির বোঝা উচিত ছিল খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি দেয়ার জন্য নয়। মাঠের একজন কর্মী হিসেবে আমার নিজের দায়িত্বটাও আমি ঠিক মতো পালন করতে পারিনি। আমরা সবাই মিলে ব্যর্থ হয়েছি। এখন যেটা করণীয়, সেটা হলো- দ্রুত দলকে সংগঠিত করে ‘অলআউট’ আন্দোলনে যেতে হবে।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি কোন পথে হবে- সেটা নিয়ে কথা বলার জন্য দলের দায়িত্বশীল নেতারা আছেন। তারাই এ সব ব্যাপারে কথা বলবেন। ফোনে আমি কোনো কথা বলতে পারব না, বলা ঠিক হবে না। কারণ, ফোন ট্রাক হয়।’
BNP

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম বিএনপি কম করেনি। এটা করতে গিয়ে বিএনপির যত নেতাকর্মী আহত, খুন, গুম হয়েছে অন্য কোনো দলের নেতাকর্মী কোনো দিন তা হয়নি। তারপরও বলা হয় বিএনপি আন্দোলন জানে না। আন্দোলন করে না। একটা ফ্যাসিস্ট সরকার যদি ঘাড়ের ওপর চেপে বসে, তাকে নামানোর জন্য আন্দোলন ছাড়া আর কী করার থাকে। বিএনপি তো সশস্ত্র বা বিপ্লবী কোনো পার্টি নয়। নিয়মের মধ্যে থেকেই বিএনপিকে সব কিছু করতে হবে।’

এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনে যাওয়াসহ আমরা সব কিছুই খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবে করছি। দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার প্রোগ্রাম দিয়েছি। আপাতত এটাই আমাদের কর্মসূচি। এরপরের কর্মসূচি কী হবে- সেটা আগাম বলা যাবে না।’