শাহীন মাহমুদ রাসেল:

কক্সবাজার সদরের গ্রামগুলি থেকে বেশ কয়েক মাস ধরে একের পর এক হালের গরুসহ গাভী ও মহিষ চুরি হয়ে যাচ্ছে। চোরের উৎপাতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি জনতার হাতে বিভিন্ন গরু চোর গণধোলাই খেলেও কমছে না গরু চুরির প্রবণতা। সংঘবদ্ধ চোরের দল ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান যোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দুপাশের বাড়িঘর তাদের প্রধান টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছে। অঞ্চল ভিত্তিক পুলিশ ফাঁড়ি, থানা থাকা সত্ত্বেও গরু চুরি বন্ধ হচ্ছে না।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গরু চুরি করে কাভার্ড ভ্যান, ট্রাকযোগে গরু নিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। ফলে গ্রামের হতদরিদ্র মানুষগুলো মূল্যবান গরু হারিয়ে প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ছে। মাঝেমধ্যে চোর হাতে নাতে ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে জামিন হয়ে আবারও গরু চুরিতে লিপ্ত হচ্ছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় ৭১টি ইউনিয়নে ৯৯২টি গ্রাম আছে। প্রতিদিন কোন না কোন গ্রাম থেকে গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। চুরির ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে মামুলি মনে হলেও গ্রামের হতদরিদ্র মানুষগুলো পথে বসছে। সহায় সম্বল বিক্রি করে গ্রামের স্বল্প পুজির মানুষগুলো গরু পালন করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন দেখলেও চোরের উপদ্রবে তাদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীর বিভিন্ন গ্রামের আব্দুর রশিদ, জহির আহাম্মদ, আমান উল্লাহ, খরুলিয়া গ্রামের হাবিব উল্লাহ, কাইছার, মামুন, রামুর চাকমারকুলের শাহিনুর রহমান, একই উপজেলার জারাইলতলী গ্রামের মিজার, শফি উদ্দীন, জহুরুল ইসলাম, আরমান মিয়া ও মহিদ্দীনের গরু চুরি হয়েছে। তাছাড়া সদরের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে সম্প্রতি আনুমানিক ৪২টি গরু চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে গরু চোর আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সর্বশেষ গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে পিএমখালী ইউনিয়নের ডিকপাড়া এলাকার আমান উল্লাহর বাড়ি থেকে চারটি গরু নিয়ে গেছে চোরের দল।

গরুর মালিক আমান উল্লাহ বলেন, প্রতিদিনের মতো রাতে গোয়ালঘরে গরুগুলোকে খাবার দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে যাই। রাতে কোনো একসময় চোরের দল গোয়ালঘরে ঢুকে চারটি গরু নিয়ে পালিয়ে যায়। সকালে গোয়ালঘরে গরুগুলো দেখতে না পেয়ে চারদিকে খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু সারাদিনেও কোনো খবর না পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানাই।

তিনি জানান, চুরি হয়ে যাওয়া গরুগুলোর মূল্য প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

গরু চুরি ঠেকাতে অনেকেই এখন গোয়ালঘরে রাত কাটাচ্ছে। একই গ্রামের আব্দুর রশিদ জানান, একজন মানুষের বেঁচে থাকার স্বপ্ন গরু চোরেরা মাটি করে দিচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে সদর থানার ওসি (তদন্ত) খাইরুজ্জামান বলেন, সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে বলে শুনেছি। তিনি আরোও বলেন, গরু চুরির প্রবণতা রোধে ইতোমধ্যে গ্রামপুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশ সমন্বয়ে বিভিন্ন এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।