আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভিন্নমত দমনে সৌদি আরবের কুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচক জামাল খাশোগিকে নৃশংসভাবে হত্যার পর দেশটির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আরও জোড়ালো হয়। এবার লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, গোপন আদালতের মাধ্যমে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করছে সৌদি আরব।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কথিত সন্ত্রাসবাদীদের বিচারের নামে গোপনে বিশেষ আদালত তৈরি করেছে সৌদি আরব। সেখানে সৌদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা মানবাধিকারকর্মী কিংবা ভিন্নমত প্রকাশকারীদের কৌশলে সাজা দেয়া হচ্ছে। বিরোধীমত দমনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ওই আদালত।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গোপন আদালতটি অবস্থিত। যার নাম ‘বিশেষায়িত অপরাধ আদালত’ বা এসিসি। গত পাঁচ বছরে এই আদালতের ৯৫টি মামলা তদন্ত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আদালতের বিভিন্ন নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গতকালের প্রতিবেদনে ওই গোপন আদালতের খোঁজ দেয় মানবাধিকার সংস্থাটি।

তদন্ত শেষে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি বলেছে, রাজতন্ত্রের সমালোচনা বন্ধ করতে নিয়মিতভাবে এই আদালতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এরমধ্যে সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচক, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক ছাড়াও অনেকে রয়েছেন। গোপন এই আদালত ইতোমধ্যে অনেককে মৃত্যুদণ্ডও দিয়েছে।

মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ৫৩ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদন সৌদি আরবের গোপন আদালতের কার্যক্রমই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। প্রতিবেদনে সৌদি আরবের অপরাধ আদালতকে ন্যায় বিচারের প্রতি প্রহসন বলে উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

২০০৮ সালে সৌদি আরব বিশেষ আদালতের নামে গোপন এই আদালত প্রতিষ্ঠা করে। আদালতে যাদের বিচার করা হচ্ছে তারা মূলত সৌদি রাজতন্ত্র, বাদশাহ কিংবা যুবরাজ বিন সালমানের সমালোচক হিসেবে অভিযুক্ত। অ্যামনেস্টি বলছে, সৌদি শাসকদের প্রতি যারা অন্ধ আনুগত্য দেখান না, এই আদালতে মূলত তাদের বিচার করা হচ্ছে।

অ্যামনেস্টির আঞ্চলিক পরিচালক হেবা মোরায়েফ বলেন, এসসিসির বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ অস্পষ্ট। সেখানে প্রতি পদে মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনজীবী নিয়োগ দিতে না দেয়া, কারাবন্দী অবস্থায় কারও সঙ্গেই দেখা করতে না দেয়া এবং সর্বোপরি কেবল নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে দণ্ড দেয়া হয়।