মো. নুরুল করিম আরমান, লামা:

বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় তান্ডব চালিয়েছে বন্যহাতির দল। রাতভর তান্ডব চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি কালাইয়ার আগা ও বাছুরী পাড়ার ১০টি বসতঘর। এ সময় হাতির আক্রমণে নিহত হন জহুরা বেগম (৬১) নামের এক বৃদ্ধা। বুধবার ভোরে ১৪-১৫টি হাতি তান্ডব চালিয়ে এসব বসতঘর তছনছ করে দেয়। শুধু তাই নয়, এ সময় হাতিগুলো পদপিষ্ট ও খেয়ে কলা বাগান ও বীজতলার ক্ষতিসাধন করে। হাতির তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে কেউ খোলা আকাশের নীচে, আবার কেউ কেউ ঘরবাড়ী ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে হাতিগুলো ওই গ্রাম সংলগ্ন পাহাড়ে অবস্থান করায় আতংকে আছেন স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী সূত্র জানায়, গহিন পাহাড় থেকে বন্যহাতির দল বুধবার দিবাগত রাতে সরই ইউনিয়নের কালাইয়ার আগা গ্রামে নেমে পড়ে। হাতিগুলো প্রথমে ফজলুল হকের বসতঘর ভাংচুর শুরু করে। হাতির উপস্থিতির টের পেয়ে ফজলুল হক ও তার স্ত্রী সন্তানেরা নিরাপদে ছুটে যাওয়ার সময় পথে হাতির আক্রমণে ঘটনাস্থলেই জহুরা বেগম মারা যায়। এরপর রাতভর তান্ডব চালিয়ে একে একে বাছুরীপাড়ার বাসিন্দা জুলহাস উদ্দিন, মো. রফিক, সৈয়দ আহমদ ও আবদুর রহিমের সম্পূর্ণ বসতঘর তছনছ করার পর কালাইয়ার আগা পাড়ার বাসিন্দা আবদুল গনি, হোসেন আহমদ, আলমগীর ও ফজল হকের বসতঘরের আংশিক তছনছ করে দেয় হাতির দলটি। একই সময় হাতিগুলো স্থানীয়দের ঘরে থাকা ধান, চাউল, বাগানের কলা গাছ খেয়ে ব্যপক ক্ষতি সাধন করে। এর কয়েক দিন আগে ৭-৮টির একটি হাতির দল রাতভর উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ঘিলাতলী পাড়ার মনির আহমদ মজুমদারের কলা বাগান, কামাল পাশার ধানের বীজ তলা ও কলা বাগান, মোস্তাক মিয়ার ধান ক্ষেত, মালু মিয়ার ধানের বীজ তলা এবং আবু তাহেরের তামাক ক্ষেত পদপিষ্ট বিনষ্ট করে দেয়।

হাতি আক্রমনের শিকার ফজল হক ও হোসেন আহমদ বলেন, বুধবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে ১৪-১৫টি বন্যহাতি পাহাড়ের উত্তর পাশ দিয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ কথা জানাজানি হলে লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে। রাতে গ্রামের মানুষ এক ঘণ্টার জন্যও ঘুমাতে পারেনি। হাতি কখন কার বাড়িতে ঢুকে পড়ে, এই ভয়ে মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তারা আরও বলেন, হাতিগুলো প্রথমে বাড়ির চারিদিকে ঘেরাও করে ফেলে। বিশেষ করে ঘরের দরজা জানালার পাশে পাহারাদারের মত দাঁড়িয়ে থাকে। আর ঘর ভাঙ্গা শুরু করে। পরে ঘরে থাকা ধান চাল খেয়ে ফেলে। রাতজেগে আগুনের কুন্ডুলি জ্বালিয়ে বাড়ি ঘর পাহারা দিয়ে হাতির আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্ঠা চালিয়েও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছেনা।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আশ্রাফ আলী ও সাবেক সদস্য আবদুল হালিম জানান, অনেক ক্ষেত্রে রাত জেগে আগুন জ্বালিয়ে, ঢোল পিটিয়ে ও চিৎকার করেও বন্যহাতির দলকে সরানো যায় না। বেশি ভয় দেখালে গায়ের দিকে তেড়ে আসে হাতিগুলো। এ কারণে চেয়ে দেখা ছাড়া আমাদের পক্ষে কিছুই করার থাকেনা। হাতিগুলোর তান্ডবে এক বৃদ্ধার মৃত্যুসহ স্থানীয়দের প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেছে।

এদিকে ক্যায়াজুপাড়া পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ শফিউল আলম জানায়, হাতির আক্রমণে নিহত বৃদ্ধার লাশ বুধবার সকালে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বন্যহাতির তান্ডবে এক বৃদ্ধা নিহত ও বসতঘর তছনছের সত্যতা নিশ্চিত করে সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ উল্ আলম বলেন, এখনো হাতিগুলো এলাকায় অবস্থান করায় লোকজন এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন। আবারও যে কোন মুহুর্তে তান্ডব চালিয়ে জান ও মালের ক্ষতিসাধন করতে পারে।

লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়চার জানান, পাহাড়ে খাদ্য সঙ্কট ও আবাসস্থল খুঁজে না পেয়ে লোকালয়ের দিকে ছুটে যাচ্ছে বন্যহাতি। হাতিগুলোকে গভীর বনে সরিয়ে নিতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কাজ করা হবে।