মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

বিজয়ের মাসে কক্সবাজার জেলাবাসীকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন অনবদ্য উপহার দিলো শহীদ ফরহাদ-সুভাষ তোরণ। তোরণটি নির্মাণ করা হয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার গেইটে পূর্বে ও শহীদ দৌলত ময়দানের (পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ) পশ্চিমে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সড়কে (কাচারী পাহাড় রোড)।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত তোরণটির পশ্চিম পার্শ্বের একাংশে রয়েছে শহীদ ফরহাদ ও শহীদ সুভাষের টাইলসে নির্মিত ম্যুরাল ও “শহীদ ফরহাদ ও সুভাষ তোরণ” নামফলক। তোরণটির পূর্ব পার্শ্বের অংশে রয়েছে, “জেলা প্রশাসকের কার্যালয়” নামফলক। কক্সবাজারের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সভ্যতা সমৃদ্ধ একটি টাইলসে অংকিত ছবি। যেখানে রয়েছে, সমুদ্র সৈকত, নারিকেল গাছ, মাছ ধরার সাম্পান, সমুদ্র সৈকতর লাল কাঁকড়া, নীল আকাশ সহ আরো কিছু। যার চমৎকার নির্মাণশৈলী ও সুদৃশ্য চিত্রায়ণ সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় সহজে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের বিশ্বস্থ সুত্র সিবিএন-কে জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ, তিতিক্ষা, কক্সবাজারের ঐতিহ্য ও সভ্যতার দৃশ্য সম্বলিত এই অপরূপ তোরণটি নির্মাণে পরিকল্পনা দিয়েছেন-কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। ছোট্ট পরিসরে মুক্তিযুদ্ধ, কক্সবাজার, প্রাকৃতিক অবয়ব, কক্সবাজারের দু’জন বীর শহীদের ম্যুরাল সহ ছোট্ট পরিসরে এতকিছু ফুটিয়ে তোলা নিঃসন্দেহে গভীর চিন্তা, ধারণার প্রশংসনীয় এক ফলাফল। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে উঠতেই নব নির্মিত শহীদ ফরহাদ-সুভাষ তোরণ অসাম্প্রদায়িক চেতনার শুধু উজ্জ্বল পরিচিত বহন করেনা, কক্সবাজার জেলা বাসীর জন্য সেটা বিজয়ের মাসে এক বিরল পাওনা। যা সবাইকে গর্বিত ও পুলকিত করে। এর আগেও কক্সবাজারের আর এক বীর শহীদের নামে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষের নামকরণ করা হয়েছে “শহীদ এটিএম জাফর আলম সিএসপি সম্মেলন কক্ষ”। কক্সবাজারের হিলটপ ও হিলডাউন সার্কিট হাউস ২ টির গেইট ও ফটককে করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক বিভিন্ন আকর্ষনীয় চিত্রায়ণ। তুলে ধরা হয়েছে, সংক্ষিপ্ত আকারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বাঙ্গালীর জাতিসত্তাকে। যা মানুষকে সহজে আকৃষ্ট ও মোহিত করে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের ফেসবুক পেইজে বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান কক্সবাজারে নব নির্মিত শহীদ ফরহাদ-সুভাষ তোরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “মহান মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজার জেলার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। পরাধীনতার গ্লানি হতে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার লক্ষ্যে অকাতরে যারা প্রাণ বিলিয়ে দিয়ে অমর হয়েছেন, তাঁদের মাঝে রয়েছেন কক্সবাজারের অহংকার-শহীদ সুভাষ এবং শহীদ ফরহাদ।

শহীদ ফরহাদ চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নকালে রাজনীতিতে জড়িয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন ও উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্র টগবগে তরুণ ফরহাদ, এম.এ ফাইনাল পরীক্ষা ছেড়ে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। চট্টগ্রাম শহর ও হাটহাজারী এলাকায় বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে তিনি কক্সবাজার জেলায় চলে আসেন। কক্সবাজার ও আরাকান সড়কের পাহাড়ি এলাকায় প্রায় দুইশত ইপিআর ও মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি সংগঠিত করে প্রতিরোধ ব্যুহ গড়ে তোলেন।

অপরদিকে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কক্সবাজার সরকারি কলেজের ছাত্র সুভাষ দাশ কিশোর বয়স থেকেই পকিস্তান বিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নিঃস্বার্থ, নিবেদিতপ্রাণ এই তরুণ ছাত্র নেতা রামু সদরস্থ রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেন।কক্সবাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে তিনি অন্যতম সাহসী ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭১ সালের ৬ মে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ও ফরহাদ কে নুনিয়াছড়া বাঁকখালী নদীর তীরে নির্মমভাবে হত্যা করে শহীদ করা হয়।

শহীদ সুভাষ-ফরহাদের মতো ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। বিজয়ের ৪৮ বছরে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ-ফরহাদের স্মৃতি সংরক্ষণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ক্ষুদ্র প্রয়াস-শহীদ ফরহাদ-সুভাষ তোরণ।”