শাহীন মাহমুদ রাসেল :

দিনকে দিন তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় কক্সবাজার জেলায় আস্তে আস্তে শীতের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিউমোনিয়া ও ডায়ারিয়ায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। বয়স্করাও আক্রান্ত হচ্ছে ঠান্ডাজনিত নানান রোগে। সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রইভেট ক্লিনিকেও গত দুই দিনে মেডিসিন ও ডায়ারিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বেড সঙ্কট থাকায় রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।

শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবার বেড়েছে শিশু রোগের প্রকোপ। এ ক্ষেত্রে শিশুদের শীত থেকে নিরাপদ রাখার আহ্বান। সন্ধ্যা থেকে শীতের হিমেল হাওয়ার সাথে সকাল পর্যন্ত হালকা কুয়াশা পড়ছে কক্সবাজারে। দিনের আলো বাড়ার সাথে বাড়ছে রোদের প্রখরতা। আবহাওয়ার এমন ছন্দপতনের প্রভাব অসহনীয় হয়ে দেখা দিয়েছে শিশুদের ওপর।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের এক সিনিয়র স্টাফ নার্স (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, গত দুই-একদিন ধরে শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়ারিয়া আক্রান্ত হয়ে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেড সঙ্কট থাকার কারণে অনেককে মেঝেতে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

তার দেয়া তথ্য মতে, গত ৬ ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত ২৬ জন ডায়ারিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত সংখ্যা রয়েছে ১৪ শিশু। এইসব রোগের পাশাপাশি ঠান্ডাজনিত কারণে শিশুরা নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যার মধ্যে নিউমোনিয়া ও ডায়ারিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। ওই হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটে দেখা যায়, সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্টের বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড সঙ্কট থাকার কারণে অনেক রোগী ওই ওয়ার্ডের বারান্দায় মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর.এম.ও) ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, তার মতে বিগত বছরের তুলনায় শিশুদের ডায়ারিয়া ও নিউমোনিয়ার তেমন প্রকোপ দেখা দেয়নি। কয়েক বছর পর পর এরকম হয়ে থাকে। এবার ভিন্ন। রোগীর চাপ বেড়েছে স্বীকার করে বলেন, আমরা সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১২ মাসের শিশু ছেলে রোহান। তার পিতা নাছির উদ্দিন বলেন, গত সোমবার রাতে তার শিশু ছেলের বমির পাশাপাশি ডায়ারিয়া শুরু হয়। স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। এখন বমির ভাবটা কমে গেছে। পায়খানাও কমেছে। এখন একটু সুস্থের পথে।

তার মতে, প্রতিদিন দিন-রাতে এ হাসপাতালে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিউমোনিয়া, ডায়ারিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে শিশুরা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। ওই ওয়ার্ডের স্টাফ নার্সরা জানিয়েছেন, মেডিসিন ও ডায়ারিয়া শিশু ওয়ার্ডে শিশু রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে বেশি রোগী আসছে। যার মধ্যে ডায়ারিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। যাদের বয়স ৬ মাস থেকে দেড় বছরের মধ্যে। যার কারণে মেডিসিন ও ডায়ারিয়া ওয়ার্ডে কোন বেড খালি পাওয়া যাচ্ছে না।

রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। চিকিৎসকরা বলছেন, অপুষ্টি আর অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। নিউমোনিয়ার হাত থেকে রক্ষায় শিশুদের আরো বেশি যত্ন নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. আবদুল মতিন বলেন, হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশুদের ঠিকমতো টিকা প্রদান ও ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হলে নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তাছাড়া ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে শিশুকে দূরে রাখা এবং গরম কাপড় পরিধান করানো অত্যন্ত জরুরি। ডায়রিয়া এক ধরনের পানিবাহিত রোগ। ৬-১৬ মাস বয়সী আক্রান্ত শিশুকে ঘনোঘনো স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া শিশুদের মায়ের বুকের দুধ ও রোটারিং টিকা দিলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।

তিনি আরও বলেন, এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের ছয় মাস বয়স পর্যন্ত নিয়মিত বুকের দুধ পান করাতে হবে। সব শিশুর প্রতি যত্লশীল হতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। শিশুদের জ্বর, অস্বাভাবিক কাশি ও পাতলা পায়খানা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।