– ফজলুর রহমান, ৩৩তম ব্যাচ, চ.বি
শুরুতেই শুনি ২৮তম ব্যাচের মুকল আপুর কথা। একটা চিত্র পাওয়া যাবে। তিনি বললেন-“এমন নাচা নেচেছিলাম! এখন পুরো শরীর ব্যথা। প্রথমে আমাদের আটাশতম ব্যাচের সাথে নেচে-গেয়ে ক্লান্ত। পরে দেখলাম লুসিআপু কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে নেচে চলেছে। আমি আবার তুলা রাশির মেয়ে। কাউকে নাচতে বা গাইতে দেখলে চুপ করে বসে থাকতে পারিনা।নিজের ব্যাচছুট হয়ে নাচতে নাচতে ঢুকে পড়লাম একুশতম ব্যাচের সাথে। সে কী নাচ! তখন নকীব খান (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক ছাত্র) একটার পর একটা গান গেয়ে চলেছেন। সাথে সাথে চলছিলো আমাদের নাচ। শেষের গানটি ছিলো ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে, হৃদয়ের কোটরে রাখবো…’, ততক্ষণে আমি একুশের হৃদয়ের কোটরে ঢুকে পড়েছি।গান শেষ হলে সবাই ‘একুশ’ ‘একুশ’ বলে বলে চিৎকার করতে থাকে। তখন আমিও চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করি। সবাই চুপ হয়ে জানতে চাইলো কী হয়েছে! আমি কেঁদে কেঁদে বললাম ‘আমি একুশ নই,আটাশ,আমি আমার বন্ধুদের হারিয়ে ফেলেছি।’ তখন ওদের থেকে একজন চিৎকার করে বলতে থাকে “একটা সুন্দরী বালিকা পাওয়া গেছে আটাশের”। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার বন্ধুরা এসে হাজির। তারপর আমি আবার আমার আটাশে।”
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একটা খন্ডচিত্র পাওয়া গেল। এবার এর সাথে যোগ করুন প্রায় ১০হাজার প্রাক্তনের এক সাথে নেচে-গেয়ে মাতিয়ে রাখার চিত্র। সহযোগী চিত্রে থাকবে ব্যাচভিত্তিক মনমাতানো পরিবেশনা, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল উপস্থাপনা, পরিবেশনায় পরিমিতিবোধ, বুড়োর মনে জোয়ানের জোয়ার আসা, জোয়ানদের আরো জোয়ান হওয়া ইত্যাদি। ব্যাচভিত্তিক পরিবেশনায় যখন একজন ভরাট গলায় বললেন, “ভার্সিটি লাইফে যা বলতে পারিনি আজ তা বলার সুযোগ এসেছে”। এমন কথার পর বিপুল সমাগম যেন প্রাণভরে সে সুযোগ নিয়েছে। কারণ এরপর-‘ আজ ফাগুনী পূর্ণিমা রাতে চল পলায়ে যাই” গানটি যখন ধরলেন গায়ক সকলে তখন তালে তালে মাতাল হয়ে পালানোর মেজাজে একাকার হয়ে যান।
চলচ্চিত্র গায়িকা অনামিকা মুক্তিও এসে আধুনিক গানে মাতিয়ে তোলেন। আর ফিনিশিং টাচে আসেন চিরকূট ব্যান্ড। ভোকাল সুমী যখন কন্ঠে ছাড়েন –‘না বুঝি দুনিয়া, না বুঝি তোমায়” তখন হাজারো কন্ঠ হয় এক কন্ঠ, হাজার জোড়া হাত উপরে উঠে হয় একাত্ন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সব চলে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ঘরানায়। হিন্দি, ইংরেজিসহ বিদেশী ভাষা পাত্তা পায়নি।
এবার আমরা ধীরে ধীরে আরো কিছু চিত্রে প্রবেশ করি।
মনমাতানো র্যালি: র্যালি দিয়ে অনুষ্ঠানমালার সূচনা। র্যালিটি হয় আগের দিন। ২১ নভেম্বর। বিকেলে। চারুকলা নান্দনিক প্রাঙ্গন থেকে সিরিষতলার উন্মুক্ত বাতাসে। র্যালির আকাশ বেলুন হরেক বেলুনে ভরে যায়। বাহারি টিশার্ট মন আকর্ষন বাড়ায়। ঢোলের বাড়ি নাচিয়ে তোলে। বাঁশির সুর মনটানে। নাচুনে সাবেকরা প্রাণভরে উপভোগ করে এই আনন্দ শোভাযাত্রা। র্যালিশেষে বাউল উৎসব। প্রাণের সুর পেয়ে একাকার হয় কয়েক হাজার মন।
উনি এখন বাকি খান: অনুষ্ঠানের দিন। ২২ নভেম্বর। স্থান জিইসি কনভেনশন সেন্টার। এখানে স্থাপিত কিছু স্টলের নামকরণ বেশ ছিল উপভোগ্য। নান্দনিক। স্মৃতি উস্কানো। চা, কফি, পান, নাস্তাসহ নানা স্টলের পসরা সকলের মন টেনে নেয়। চলুন, এবার নামগুলো পড়ি: ঢেলে দেই। মউর দোয়ান। চাইয়্যু গুতা হাইবা। থামলে ভালো লাগে। আঁই কিত্তাম। কথা কিন্তু সত্য। বুঝ পাইছেন। এক্কানা বইয়ু। কথা ঠিক না বে ঠিক। উনি এখন বাকি খান। পান ক্যাসিনো। কেনে চলর। ভাইনার দোয়ান।
জানু,ডিলিট করে দিও: প্রবশে তোরণ থেকে শুরু হয় ফেস্টুনের ঝলকানি। ডাইনিং হল, সমাগম সামিয়ানাসহ নানা স্থানে মনকাড়া সব কথামালার উপস্থাপনায় ঝুলে থাকে শতাধিক ফেস্টুন। কিছু ফেস্টুনের ভাষায় চলুন একটু চোখ বুলিয়ে নিই: রিকশা চালায় রসিক ডেরাইভার। প্রোফাইল পিক দেখে প্রেম করা যায় না রে মামু। জানু ,দেখে ডিলিট করে দিও, …সত্যি বলছি, দেখেই ডিলিট করে দেবো। কেমন করে এতো অচেনা হলে তুমি, কিভাবে এতো বদলে গেছি এই আমি। মাইরের মধ্যে ভাইটামিন আছে। আমার মাথাটা চুলকায় চুলগুলো যায় যায়, পড়েছি যে আমি সেশনজটের পাল্লায়। হুদাই ভাব লইয়েন না, বিয়া কিন্তু সবাই করে। আমার ভিতর তোমার বসবাস, এটাই আমার মহাসর্বনাশ। বলেন তো- কমলাকান্তের ভাইয়ের নাম কি?- মালটাকান্ত। সানডে মানডে কোলজ কইরা সিল মাইরা দিলো রে। সিনিয়ার মানে সমুদ্রের পাশে (See near), জুনিয়ার মানে চিড়িয়াখানার পাশে (Zoo near)। উস্তাদ বামে কিন্তু পেলাস্টিক। মোটামুটি শরীলে একটা ভাব আইছে না! নলা খাবেন ঢেলে দেই ।চৌধুরী সাহেব, আমার ঘর নাই বাড়ি নাই কিন্তু ফেসবুকে স্ট্যাটাস আছে। মধু হই হই আঁরে বিষ হাবাইলা। গুজব শুনে হুদাই, লবণ কিনে ভোঁদাই। ভাই আমরাতো কান্দি না, আমাগো চেহারাটাই এমন। ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়। এক যুগে প্রিয় ছিল কুলফী, আজ সবাই ভালোবাসে সেলফী। পেয়াঁজ কেন আসামী।দূরত্ব বাড়লে কি গুরুত্ব বাড়ে, মরে গেলে পাগলা কেউ মনে রাখে নারে। বুঝলে বুঝপাতা, না বুঝলে তেজপাতা।
শাটল ট্রেন ও স্টেশন: অনুষ্ঠানস্থলে রাখা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য শাটল ট্রেন। প্রতীকীভাবে। শাটল ট্রেনের চবি স্টেশনটাও ফুটিয়ে তোলা হয় নিখুঁতভাবে। এবার সাবেকদের আবেগ চরমে উঠে যায়। ছবি আর আড্ডায় স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন সকলে। চবি’র রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এমপি তো এখনো সেই শাটল ট্রেন বহন করে চলেছেন। স্মৃতিচারণে বললেন তিনি-“ শাটল ট্রেনে গলা ছেড়ে গাইতাম। আবারো যদি বন্ধুদের সাথে গাইতে গাইতে যেতে পারতাম। প্রথম বর্ষে থাকতে বন্ধুদের নিয়ে শাটল ট্রেনের বগিতে গলা ছেড়ে গান গেয়ে ক্যাম্পাসে যেতাম। অনেক বন্ধু তখন গান গাইতেন, যারা এখন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাদের নাম বলে লজ্জা দিতে চাই না। এখনও মনে হয়, সেই বন্ধুদের নিয়ে শাটলে গান গেয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারতাম! ব্যস্ততার কারণে হয়ে ওঠে না। এমন দিন আর কখনও আসবে কি-না জানি না। তবে আমি এমন দিন আবারো ফিরে পেতে চাই।”
এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে: অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও এলামনাই এসোসিয়েশনের উপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র পরিবেশিত হয়। সুন্দর কথার উপর থিম সং এর দেখাও মিলে। ‘কতদিন তোমাকে খুঁজেছি’-শিরোণামে চবি’র বিভিন্ন স্পটে প্রেয়সীকে খুঁজে বেড়ানোর প্রেমগাঁথা নিয়ে কবিতাও আবৃত্তি হয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে মনে দাগ কাটে ‘এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে’ গানটি। এই গানটি অনেকটা চবি’রই প্রোডাক্ট। সাবেক ছাত্র নকীব খান সোলসে গেয়েছিলেন।গানটি ক্ষণে ক্ষণে বাজানো হয়। সকলের মনেও প্রতিক্ষণে বেজে যায় সেই সে প্রাণের কথা।
সব হোমমেইড: অনুষ্ঠানে কোন প্রধান অতিথি ছিলেন না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক মন্ত্রী-এমপি-প্রফেশনাল-ভিআইপি ছিলেন। তবে সকলে ছিলেন চবি’র সাবেক ছাত্র হিসেবে, এলামনাইদের একজন হিসেবে। বাইরের কাউকে অতিথিই করা হয়নি। সরকারের সাবেক মুখ্য সচিব ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে এবং পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ, কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল মোসলেম চৌধুরী, বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউজ রানা, , চাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক সাংসদ মাজাহারুল হক শাহ চৌধুরী, সাবেক ভিপি নাজিম উদ্দিন, সাবেক সচিব ও অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মোরশেদুল আলম প্রমুখ। আরো বক্তব্য রাখেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল হক, আয়োজক কমিটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম, আয়োজক কমিটির সেক্রেটারি মো: গিয়াস উদ্দিন।
বক্তারা বলেন, “প্রথম পুনর্মিলনী উদ্যোগের শুরুতে আমরা আশা করেছিলাম, হয়তো দুই-তিন হাজার প্রাক্তন এতে অংশ নেবেন। কিন্তু সকলের স্বতঃস্ফ‚র্ত অংশগ্রহণে দ্রুত সময়ে আট হাজারের বেশি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কাজ করা, মানবতার কল্যাণে কাজ করা। আমরা শুধু পুনর্মিলনী নয়, নিয়মিত সেমিনার সিম্পোজিয়াম, জব ফেয়ার আয়োজন করবো। বুলেটিন প্রকাশ করা হবে। প্রতি রেজিস্ট্রেশনের দুই হাজার টাকা করে আট হাজার প্রাক্তনের কোন টাকা খরচ করা হয়নি। এগুলো সংগঠনের স্থায়ী তহবিল গঠনের পাশাপাশি অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তির জন্যও তহবিল গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে সহায়তা করা হবে। এছাড়া অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে।”
বর্তমান ও সাবেক উপাচার্যগণকে সম্মাননা প্রদান: বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ছাড়াও প্রাক্তন চার উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান, অধ্যাপক ড. এম বদিউল আলম, অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন ও অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়। অনুভূতি প্রকাশ করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যও রাখেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, “আমি খুব গর্বিত এমন বিরল সম্মানের জন্য। এতো প্রতিথযশা মানুষের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, আল্লাহ আমাকে অনেক বড় সম্মানে ভূষিত করেছেন। আমি এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রী ছিলাম, তারপর শিক্ষক ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছি। এই অঙ্গনের জন্য দোয়া করবেন। জ্ঞান সৃজন, জ্ঞান উৎপাদন ও গবেষণার মাধ্যমে যেন এগিয়ে যেতে পারে। এজন্য অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতা চাই। আমরা যেন পৃথিবীর মানচিত্রে নাম লেখাতে পারি।
বক্তব্যের শেষে তিনি গেয়ে ওঠেন “আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ,
তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান,বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান ।” রবীন্দ্র সঙ্গীতের লাইন নিজের মত করে উচ্চারণ করে তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকে যেন বিশ্বমর্যাদায় আসীন হন, সেই কামনা করি।
আসলেই স্পেশাল কেক: নানা স্পেশাল কেকের কথা আমরা শুনেছি। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই এসোসিয়েশনের এবারের কেকটি আসলেই ‘স্পেশাল ওয়ান’। ১১ কেজি কেক। ৫০ হাজার টাকা খরচ। ৩৫ ব্যাচের ছাত্রী সাকিয়া সুলতানার তৈরি। দর্শন বিভাগের এই সাবেক ছাত্রীর তৈরি কেকটি ভিন্ন কারণে স্পেশাল । বই ডায়েরি, ডিগ্রি ক্যাপ দিয়ে তুখোড় কারুকার্যের উপস্থাপনা ছিল এতে।
দেশের বাইরে থেকেও একাত্নতা: “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের চবিয়ানরা ইতিহাস সৃষ্টিকরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মহা উৎসবে যোগ দিতে না পারলেও একাত্বতা প্রকাশ করে গান করেছিলাম। বন্ধুরা প্রবাসে আজ মন পড়ে আছে চাকসু, জারুল তলা, ঝুপড়ি, ক্যাফেটেরিয়াফ্যাকাল্টি, লাইব্রেরী আর সেমিনারে ফিরে যেতে চাই আমার প্রিয় ক্যাম্পাসে।”- নিউইয়র্ক থেকে লিখেছেন ৩৪ ব্যাচের শিবলী। লোক প্রশাসন বিভাগের এই প্রাক্তন একই সাথে জুড়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তনদের একাত্ন হয়ে সম্মিলিত পরিবেশনার একটি ভিডিও।
উদ্বোধন ও শোক প্রস্তাব পাঠ: ২২ নভেম্বর সকাল সোয়া ১০টায় জাতীয় সঙ্গীতের তালে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন অতিথিরা। এরপর বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণ করে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হাসান হারুন।
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না:
১৯৬৬ সাল। চার বিভাগ। বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অর্থনীতি। ২০৪ জন শির্ক্ষার্থী। যাত্রা শুরু করলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন সিরাজুল ইসলাম। অর্থনীতি বিভাগের তিনি। স্মৃতি টেনে জানালেন তিনি,‘ ক্যাম্পাস জীবনের সব মনে আছে, এমনকি আমার ক্রমিক নাম্বারটাও, এটা ছিল ১৩২। আমরা ২৫-৩০ ছিলাম, কিন্তু আজ কেউ বেঁচে নেই।’ একদিন সকলে নেই হয়ে যাবেন সে বার্তাই জানালেন যেন তিনি।
তেজস্বী লিডারশিপ: অনুষ্ঠান আয়োজনে তেজস্বী লিডারশিপের দেখা মিলে সবটাচে। সাবেক প্রতি জমা দেয়া হয় ২১০০ টাকা। আয়োজকরা বলেন, ‘পুরো টাকাই এলামনাই ফান্ডে জমা থাকবে। অনুষ্ঠানের জন্য ওখান থেকে কোন খরচ করা হবে না। আমরা নিজেরাই খরচ বহন করবো অথবা স্পন্সর নেব প্রয়োজনে।’ সবচেয়ে বেশি হিম্মত ভেসে উঠে স্পট রেজিস্ট্রেশনে। কি সাহসী কাজ আয়োজকদের! বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম থেকে ৪৯তম ব্যাচের আট হাজারেরও বেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থী আগেই চুড়ান্ত হয়েছিল। স্পট রেজিস্ট্রেশনের সুযোগও নেয় আরো হাজারো জন। তবে সবকিছু ধীর-স্থির ও প্রজ্ঞায় সামাল দেন আয়োজকগণ। কেউ নিরাশ হননি। বঞ্চিত হননি। সংকটে ভুগেননি। ঝামেলায় পড়েননি। একটা উদাহরণ দিচ্ছি, দুপুরে খাবারের আয়োজন ছিল সাড়ে আট হাজারের। স্পট রেজিস্ট্রেশনের কারণে তা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আগেই পূর্বাভাস পেয়ে রাতের খাবারের একটি অংশ দুপুরে টেনে আনেন। এরপর রাতকে নতুনভাবে ভরিয়ে দেন। এছাড়া চা, কফি, নাস্তার বাহারি পরিবেশনা থেকে র্যাফেল ড্র- সবখানে আয়োজকদের নিখুঁত তদারকির ছাপ মিলেছে।
শোক বই মন্তব্য বই ও স্মৃতির লেখা: প্রবেশ তোরণের পাশেই শোভা পায় শোক বই। এতে হারানো সতীর্থ, প্রিয়জন, শিক্ষকদের কথা পাতায় পাতায় ফুটে ওঠে। কেউ কেউ আবেগে ভেসে যান। রাখা হয় মন্তব্য বই। যেখানে অনুষ্ঠান নিয়ে অনেক গঠনমূলক মন্তব্যের হরফ দেখা যায়। আর টানানো স্মৃতির পর্দায় অনেকে নিজের সিগনেচারসহ স্মৃতি ধরে রাখেন। লিখে যান- ‘ মনে রেখো আমিও ছিলাম’, ‘ মনে ছিলে মনে রবে’, ‘ আমি তোমাদেরই লোক’ প্রভৃতি বাক্য।
প্রাণের উৎসবে মাতি উল্লাসে: র্যাফেল ড্র দিয়ে মাঝরাতে অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘটে। টানা দুদিনের মিলন মেলায় বিরহের সুর আসে। তবে ফেরার সকলের চোখে তৃপ্তিচ্ছটা দেখতে পাই। অনুষ্ঠানের স্লোগান ছিল ‘‘প্রাণের উৎসবে মাতি উল্লাসে”। সবার জন্য সমান আয়োজন পেয়ে সকলে উৎসবে মাতেন, উল্লাসে উপভোগ করেন। এখানেই ছিল স্লোগানটির বড় সার্থকতা। আর দিনশেষে পুরো অনুষ্ঠানের শিরোণাম দাঁড়ায়-‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’।
লেখক: ৩৩তম ব্যাচ। ৪র্থ ব্যাচ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং সহকারী রেজিস্ট্রার (সমন্বয়), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।