বিশেষ প্রতিবেদক:
রাজাকার, রাজাকারের উত্তরসূরী, অনুপ্রবেশকারী, তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী, ইয়াবাসহ ধরা পড়ে সৌদিতে কারান্তরীণ এবং চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত লোকজনে ভরপুর রয়েছে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কমিটি। খোদ ইউনিয়নের আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ সিকদারও রাজাকারের উত্তরসূরী। তার পিতা মৃত মনিরুজ্জামান সিকদার ছিলেন একজন রাজাকার। এছাড়াও একটি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি রাজাকার এবং দুইটি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হচ্ছেন রাজাকারের সন্তান। অন্যদিকে একটি ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিহত হয়েছেন মাদক বিরোধী ক্রসফায়ারে। এমন অভিযোগ করেছেন খোদ ইউনিয়ন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বশির আহমদ চৌধুরী।

তিনি লিখিতভাবে এই অভিযোগ দিয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড.সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের কাছে। অভিযোগপত্রে তিনি ‘বিতর্কিত’ এসব নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছেন।

ওই অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সম্মেলন না দিয়ে তিন মাসের এই আহ্বায়ক কমিটি তিন বছর আঁকড়ে রেখেছেন আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ সিকদার। তিনি একজন চিহ্নিত রাজাকারের সন্তান। তার পিতা মনিরুজ্জামান সিকদার শান্তি কমিটি একজন তালিকাভুক্ত সদস্য ছিলো। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদ ব্যবহার করে তিনি ইউনিয়ন মাদক নির্মূল কমিটি ও কমিউনিটি পুলিশের সভাপতির পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন। এসব পদ ব্যবহার করে নানাভাবে হুমকি দিয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীয়সহ বিভিন্ন অপরাধীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন।

অভিযোগকারী যুগ্ম আহ্বায়ক বশির আহমদ চৌধুরী দাবি করেন, তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়কের পদ আঁকড়ে ধরে দলীয়ভাবেও নানা অনিয়ম করেছেন হারুন অর রশিদ সিকদার। ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করে তিনি একচ্ছত্রভাবে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী, রাজাকার ও রাজাকারের সন্তান এবং অনুপ্রবেশকারীদের হাতে তুলে দিয়েছেন অর্ধেকের বেশি ওয়ার্ড কমিটির নেতৃত্ব। এর মধ্যে ৯নং ওয়ার্ড সভাপতি নূর আহমদ ডিলার একজন রাজাকার এবং সাধারণ সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ইয়াবা নিয়ে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে সৌদি আরবে কারান্তরীণ রয়েছেন। ১নং ওয়ার্ডের সভাপতির  পিতা রাজাকার। ২নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ও ৪নং ওয়ার্ড সভাপতি মোঃ আলম অনুপ্রবেশকারী। ৫নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক মহিদুল আলম ইয়াবা বিরোধী ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। ৭নং ওয়ার্ড সভাপতি আবদুল মজিদ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলম বাবুল দুজনই ইয়াবা মামলার ক্রসফায়ারের আসামী হয়ে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। একইভাবে ৩নং ওয়ার্ডের সাধরণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম লালু দীঘদির্ন দলীয় কোনো কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নেই। অভিযোগ ছিলো এসব কমিটি দিয়ে আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ সিকদার হাতিয়ে নিয়েছেন বিশাল অংকের টাকা।

জানা গেছে, দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত শুদ্ধি অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি রাজাকার, রাজাকারের উত্তরসূরী, মাদক ব্যবসী, চাঁদাবাজ ও অনুপ্রবেশকারী এবং দুনীতিবাজদের দল থেকে বাদ দেয়ার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এখনো হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্ডগুলো আঁকড়ে আছে এসব বিতর্কিতরা। এই পরিস্থিতিতে সেখানকার ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্ডগুলো থেকে সব বিতর্কিত ব্যক্তিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বাদ দিতে জোর দাবি জানিয়েছেন।

ইউনিয়ন কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক বশির আহমদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কমিটির বিতর্কিত লোকজনকে বাদ দিতে দীর্ঘ তিন বছর ধরে নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার এই প্রচেষ্টার বিষয়টি জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ অবহিত করেছেন। এ কারণে আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ সিকদার নানাভাবে বশির আহমদ চৌধুরীকে মামলা-হামলাসহ নানা হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আহ্বায়ক ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো বিতর্কিত। ওয়ার্ড কমিটি অধিকাংশেরই সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ইয়াবা ব্যবসায়ী। এর মধ্যে একজন ক্রসফায়ারে নিহতও হয়েছে। বাকিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এসব কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করতে হবে। অন্যদিকে ইউনিয়ন আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দকেও নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ সিকদার রাজাকারের সন্তান বলে অনেকে আমাকে জানিয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরো কিছু অভিযোগ রয়েছে। তাই তার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সম্মেলন করা যাবে না। নতুন করে সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি দিয়ে ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সম্মেলন করতে হবে। আমি সে ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে জানাবো।