মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার জেলাসহ সারাদেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি) মেয়াদোত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। চলমান ৩ বছর মেয়াদী কমিটি সমুহের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ৬ মাস আগে থেকে সংশ্লিষ্ট প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নতুন নীতিমালা অনুসরণ করে পরবর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়-২ শাখা থেকে গত ৬ নভেম্বর ০০৭.২০১২.৬৬৬ নম্বর স্মারকে উপসচিব জাহানারা রহমান কর্তৃক স্বাক্ষরিত ৭ পৃষ্ঠার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে একথা উল্লেখ করা হয়েছে।

৬ নভেম্বর জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের আগে একইভাবে ২০১২ সালের ১৫ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়-২ শাখা থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব জাজরীন নাহার স্বাক্ষরিত ০০৭.২০১২.৬৮৮ নম্বর প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী চলমান কমিটি সমুহ গঠন করা হয়েছিলো। গত ৬ নভেম্বর জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের কমিটি গঠন শিরোনামের ৭ নম্বর ক্রমিকে বলা হয়েছে “এ প্রজ্ঞাপন কার্যকর হওয়া সত্বেও ইতিপূর্বে জারীকৃত আদেশের আওতায় গঠিত বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিসমুহ নির্ধারিত মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।” প্রজ্ঞাপনের এ ধারা মতে ৩ পার্বত্য জেলা ব্যতীত দেশের চলমান স্কুল ম্যানেজম্যান্ট কমিটি (এসএমসি) সমুহ স্ব স্ব কমিটি অনুমোদনের তারিখ হতে পূর্ণ ৩ বৎসর বহাল থাকবে। সারাদেশে সরকারি প্রাইমারি স্কুলের চলমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বাতিল করার কিংবা বাতিল হওয়ার কোন কারণ নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর শুধুমাত্র নতুন এসএমসি গঠনের ক্ষেত্রে গত ৬ নভেম্বর জারীকৃত নতুন প্রজ্ঞাপন অনুসারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে। তাছাড়া এ প্রজ্ঞাপন এখনো গেজেট আকারে প্রকাশ হয়নি এবং গেজেট হলেই এটা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকর করা হবে।

নতুন প্রজ্ঞাপনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সভাপতিকে অবশ্যই স্নাতক পাশ এবং কমিটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য কর্তৃক মনোনীত একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বিদ্যোৎসাহী সদস্য কে অবশ্যই এসএসসি পাশ হতে হবে এমন শর্ত রয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এ ২টি মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া ২০১২ সালের কমিটি গঠনের নীতিমালাতে আর খুব একটা পরিবর্তন আনা হয়নি।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা সিবিএন-কে বলেন, “জেলার ৬৫৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি “গত ৬ নভেম্বর জারীকৃত নতুন প্রজ্ঞাপন অনুসারে বাতিল হবে” এমন কথা মোটেও সঠিক নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সব ব্যবস্থাপনা কমিটি বহাল সম্পূর্ণ থাকবে। চলমান ব্যবস্থাপনা কমিটি গুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ হলেই নতুন জারীকৃত প্রজ্ঞাপন অনুসারে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। এতে কমিটি গঠন সংক্রান্ত নতুন জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের কারণে সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল হচ্ছে-মর্মে যে কথা চাউর হয়েছে, তা সম্পূর্ণ গুজব ও তথ্যভিত্তিক নয়।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির একজন প্রবীণ নেতা বলেন, একসাথে সারা বাংলাদেশের সকল প্রাইমারী স্কুলের ম্যনেজিং কমিটির বাতিল করা হলে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে চরম অস্থিরতা ও এক ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। তাছাড়া নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রাইমারি স্কুল গুলোর পিএসসি পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা, ভর্তি কার্যক্রম ইত্যাদি কাজ ব্যাহত হবে। যা শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য ক্ষতিকর হবে। তাছাড়া সরকার তো চলমান ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিলের কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এটা শুধু শুধু গুজব ছড়ানো হচ্ছে কেন। তাঁর মতে, সুষ্ঠু ও সুন্দর প্রাথমিক শিক্ষার স্বার্থে এ ধরনের গুজব ছড়ানো বন্ধ হওয়া দরকার।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার জেলায় মোট ৬৫৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।তারমধ্যে, চকরিয়া উপজেলায় ১৪৫ টি, কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১০৩ টি, রামু উপজেলায় ৮০ টি, মহেশখালী উপজেলায় ৭৭ টি, টেকনাফ উপজেলায় ৬৬ টি, উখিয়া উপজেলায় ৬৪ টি, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলা ৫৯ টি করে।