– এডভোকেট রিদওয়ানুল বারী
সন্দ্বীপের প্রথম ভৌগোলিক পরিচয় মেঘনার মোহনায় অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপ হিসাবে। সন্দ্বীপে উত্তরে বামনী নদী এবং নোয়াখালী মূল ভূখণ্ড, পশ্চিম হাতিয়া খাল বা হাতিয়া নদী এবং হাতিয়া দ্বীপ পূর্বে সন্দ্বীপ চ্যানেলে পূর্বপাড় চট্টগ্রাম এবং দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর। আনুমানিক ১৬১৬ খৃষ্টাব্দ থেকে ১৬৬৫ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত দেলোয়ার খাঁ ওরফে দীলাল রাজার নেতৃত্বে সন্দ্বীপ প্রায় স্বাধীন ছিল। মোগল আমলে সন্দ্বীপ হাতিয়া, বামনী ও সাগর দিহি নিয়ে সন্দ্বীপ পরগণা গঠিত হয়েছিল। তাছাড়া বিভিন্ন সময় ঢাকা, শ্রীপুর ও নোয়াখালীর সাথেও ঐ দ্বীপযুক্ত ছিল। কেউ কেউ অনুমান করেন যে, মেঘনা মুখের সন্দ্বীপ এককালে চট্টগ্রাম মূল ভূখণ্ডে সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং কোনো এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলেই মধ্যভাগ হয়ে বর্তমান প্রবল খাদসৃষ্টি ও সন্দ্বীপ বিচ্ছিন্ন হয় (দৈনিক আজাদ-অক্টোবর-১৯৬৩)। ওয়ারষ্টারের মতে সন্দ্বীপের বয়স তিন হাজার বছরেরও বেশী। তার মতে সন্দ্বীপের মধ্যভাগ নোয়াখালীর পূর্ব জন অধ্যুষিত হয়েছিল। সোনাগাজীর দক্ষিণাংশ ও ফেনীর পশ্চিমাংশ সহ কোম্পানীগঞ্জ, সুধারাম, লক্ষীপুর, রামপুর, রামগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, রামগতি, হাতিয়া, মনপুরা, উত্তর শাহাবাজপুর, দক্ষিণ শাহাবাজপুর ও ভোলার সমুদয়স্থান প্রাচীন সন্দ্বীপের ভূমি। বরিশালের যেসব অংশে এবং নোয়াখালীর যে সব অংশে নারিকেল, সুপারী প্রচুর পরিমাণে জন্মে থাকে সেই সমুদয় স্থান প্রাচীন সন্দ্বীপের অংশ ছিল। ঐতিহাসিক ডুজারিকের মতে, চতুর্দশ শতাব্দীতে সন্দ্বীপে অবস্থান শ্রীপুর (বিক্রমপুর) সীমার ১৮ মাইল দক্ষিণে ছিল, শ্রীপুর ঐ সময় চাঁদপুরের দক্ষিণে অবস্থিত ছিল। আরবদের আমলে সন্দ্বীপে একটি ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্য ও বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। মোগল রাজত্বকালেও ইহা একজন মনছদারের শাসিত রাজ্য ছিল। “তাওয়ারিখে ইসলামাবাদ” উল্লেখ আছে “শহর সন্দ্বীপ” নামে একটি শহর ছিল। শহরের লোকেরা উর্দু ভাষায় কথা বলত। বোধহয় এটা ইতিহাস বর্ণিত তদান্তিন সমৃদ্ধশালী সন্দ্বীপ বন্দর,। নয়াশহর নামে সন্দ্বীপে আর একটি নতুন শহর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মোগল রাজ্য সন্দ্বীপের স্বাধীনতার বীজ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে মেঘনা নদীর সাহার্য্যে সন্দ্বীপকে তিনভাগে বিভক্ত করেন, মেঘনা নদী পূর্ব-পশ্চিম পাড়ের অংশকে বাখেরগঞ্জ (বর্তমান বরিশাল) জেলার সামিল করে, ত্রিপুরার অংশকে ত্রিপুরা (বর্তমান কুমিল্লা) জেলার সামিল করে এবং ইসলামাবাদের নিকটবর্তী অংশকে চট্টগ্রাম জেলার সামিল করে সন্দ্বীপকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এরপর থেকে ১৮৮২ সাল পর্যন্ত সন্দ্বীপ চট্টগ্রামের শাসনভুক্ত ছিল। উক্ত বর্ষে নোয়াখালী স্বতন্ত্র জেলা রূপে গঠিত হওয়ায় সন্দ্বীপকে নোয়াখালী জেলার শাসানাধীন করা হয়। আবার ১৯৫৪ সালে সন্দ্বীপকে দুভাবে বিভক্ত করে এক অংশকে (১৫ মৌজা) নোয়াখালীর সাথে রেখে অন্য অংশ (ষাট মৌজা) চট্টগ্রাম জেলার সাথে যুক্ত করা হয়। ৬০ মৌজার মধ্যে ভাঙনের ফলে ৩৫ মৌজা সম্পূর্ণ ১০ মৌজা আংশিকভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দ্বীপের অবস্থানরত এক দিকে সন্দ্বীপকে নানা জাতির মিলনক্ষেত্রে পরিণত করে বিভিন্ন সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী করেছে, অন্যদিকে একই অবস্থানগত কারণ সন্দ্বীপকে নানা জাতির রণক্ষেত্র পরিণত করে বহুবার বঙ্গোপসাগরের নীল পানিতে লাল রক্তের ধারা প্রবাহিত করেছে। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও আমলাদের খেয়াল খুশিতে সন্দ্বীপের মানচিত্র ভৌগলিক সীমার পরিবর্তন হয়। পাশাপাশি কারণে নদী বা সমুদ্রের খরস্রোতের প্রভাবে এই দ্বীপটির ভূমি ও অবস্থানের সীমার পরিবর্তন ঘটেছে অনেকবার।
ইতিহাস ভিত্তিক সন্দ্বীপের আয়তন কোন সময় কত ছিল? যাই হউক সন্দ্বীপের ভৌগলিক সীমানা নির্ণয় করা মোটামুটি সম্ভব হবে। তাই আয়তনের পরিবর্তন ধারা আলোকপাত হলঃ ১৫৩৫ খৃষ্টাব্দ (হাতিয়া ও বাবনীসহ) ৬৩০ বর্গমাইল, ১৭৮০ খৃষ্টাব্দ ৪১৭ বর্গমাইল (হাতিয়া ও বাবনী বাদে), ১৯৬৮ খৃষ্টাব্দে ৪১৯.৩৯ বর্গমাইল, ১৮৯১ ও ১৯০১ খৃষ্টাব্ে ২৫৮ বর্গমাইল, ১৯১৬ খৃষ্টাব্দে, ১২৬.৫ বর্গমাইল, ১৯২১ খৃষ্টাব্দে ১৩০ বর্গমাইল, ১৯৩১ খৃষ্টাব্দে ১২৬ বর্গমাইল, ১৯৪১ খৃষ্টাব্দে ১৬৭ বর্গমাইল, ১৯৫১ খৃষ্টাব্দে ১৬৭ বর্গমাইল, ১৯৬১ খৃষ্টাব্দে ১৮৭ বর্গমাইল, ১৯৭৪ খৃষ্টাব্দে ২৯৫ বর্গমাইল (জলাভাগসহ), ১৯৮১ খৃষ্টাব্দে ২৯৪.৩৮ বর্গমাইল (জলাভাগসহ) সন্দ্বীপের একজন প্রাক্তন সার্কেল অফিসার এর মতে ১৯৭৯ খৃষ্টাব্দে স্থলভূমির আয়তন ১১৫ বর্গমাইল, পরবর্তীতে ভাঙ্গনের ফলে ১৯৮৪ সালে ৯৫ বর্গমাইল, ১৯৮৫ সালে সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী উরিরচর সন্দ্বীপেরই, একটি একটি ইউনিয়ন, ১৯৮৫ সালে উরিরচর সন্দ্বীপের আয়তন, ১১৭ বর্গমাইল (উরিরচর সহ)। ১৯৯০ সালে ১০৫ বর্গমাইল (উরিরচরসহ)। ২০০৩ খৃষ্টাব্দে উরিরচর ৮৫ বর্গমাইল। তবে সন্দ্বীপের সীমানায় জেগে উঠা ডুবা চর সহ সন্দ্বীপের আয়তন প্রায় ২৬৩ বর্গমাইল। (সূত্রঃ উপজেলার নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়)। ১৯৯৫ সালের ৬ জানুয়ারী ঢাকা গেজেটের ভিত্তিতে যে অংশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারও প্রচার করেছেন, তাই অনুসরণে বর্তমান সন্দ্বীপ থানা অধীন চট্টগ্রাম জেলার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত ৬০ (ষাট) মৌজার নাম ঃ (উল্লেখ্য যে, ৩২ মৌজা আংশিকভাবে নদীগর্ভে বিলীন)। (১) চরলক্ষী (২) সমসেরাবাদ (৩) পায়াডগী (৪) চরবদু, (৫) চর রহিম, (৬) বাটাজোরা, (৭) শফিনগর, (৮) কাঠগর, (৯) চর হুদ্রাখালী, (১০) থাক হুদ্রাখালী, (১১) থাকদীর্ঘাপার, (১২) চরদীর্ঘাপার (১৩) দীর্ঘপার, (১৪) চর সন্তোষপুর, (১৫) চেউরিয়া, (১৬) কাজিরখিল, (১৭) বাওয়া, (১৮) মোক্তারপুর, (১৯) দুবলাপুর, (২০) রোহোনী, (২১) মোহাম্মদপুর, (২২) ইজ্জতপুর, (২৩) শ্রীরামপুর, (২৪) আমিরাবাদ, (২৫) মনদিল, (২৬) সাবিদ মহুরী, (২৭) নেয়ামস্তী, (২৮) সুলতানপুর, (২৯) কমলপুর, (৩০) পাঁচবাড়য়িা, (৩১) শরীফপুর, (৩২) বৈইটা, (৩৩) চর উদয়কালী, (৩৪) চর পীরবক্স, (৩৫) থাক সন্তাষপুর, (৩৬) আমানউল্যা, (৩৭) কালাপানিয়া, (৩৮) হরিশপুর, (৩৯) রহমতপুর, (৪০) আজিমপুর, (৪১) মাইডভাঙ্গা, (৪২) সাতঘরিয়া, (৪৩) সারিকাইত, (৪৪) চৌকাতলী, (৪৫) সন্তোষপুর, (৪৬) গাছুয়া, (৪৭) থাকগাছুয়া, (৪৮) চরগাছুয়া, (৪৯) বাউরিয়া, (৫০) থাক বাউরিয়া, (৫১) চর বাউরিয়া, (৫২) থাক কুচিয়ামোড়া, (৫৩) কাছিয়াপাড়, (৫৪) থাক কাছিয়াপাড়, (৫৫) চর কাছিয়া, (৫৬) হারামিয়া, (৫৭) মুছাপুর, (৫৮) মগধরা। চট্টগ্রাম রেকর্ডস গ্রন্থে সন্দ্বীপের আরো দুইটি মৌজার নাম পাওয়া যায়। (ক) কিশনগর (খ) রামপুর।
১৯৫৪ সালে পূর্ব সময় পর্যন্ত ৭৫ মৌজার সন্দ্বীপ ছিল। নোয়াখালী জেলার সাথে ৭৫ মৌজার সন্দ্বীপ থানার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৫৪ সালে ৬০ মৌজার সন্দ্বীপ চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত করে সকলের প্রশ্ন বাকি ১৫ মৌজা কোথা গেল। কেন বা সন্দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নোয়াখালীর তিনটি থানার সাথে যুক্ত করা গেল। প্রাক্তন সন্দ্বীপের ১৫ মৌজা কাটিয়া নোয়াখালী জেলার সুধারাম হাতিয়া ও কোম্পানীগঞ্জ থানার সাথে সংযুক্ত করা গেল। নিচে তা তুলে দেয়া হল। (ক) সুধারামের সঙ্গে ৪টি মৌজা (১) চর আমান উল্ল্যা (২) চরভাটা, (৩) চরলাগালিয়া, (৪) চর ক্লার্ক, (খ) হাতিয়ার সঙ্গে ৭টি মৌজা, (১) চর ভারত সেন, (২) চরনলচিড়া, (৩) চরডাচ, (৪) চরইশ্বর, সাবেক পয়স্তি সাবেক পয়স্তি ভরাট, (৬) চরইশ্বর (ভরাট পর্যন্ত) বুড়িরশ্চর পয়ন্তি, (গ) কোম্পানীগজ্ঞের সঙ্গে ৪টি মৌজা, (১) চরযাত্রা, (২) চর এলাহী, (৩) চরলেংটা, (৪) চরবালুয়া।
১৯৫২ সালে জেলা বোর্ডের নির্বাচনে তৎকালীন ৭৫ মৌজা বিশিষ্ট সন্দ্বীপ থানাকে চট্টগ্রামের সাথে অন্তর্ভুক্তির দাবী উত্থাপিত হয়েছিল। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের এ দাবী ব্যাপক সমর্থনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন সন্দ্বীপের ৭৫ মৌজা হতে কোন মৌজা সন্দ্বীপ থেকে বিছিন্ন করার বা পরিত্যাগ করার থেকে নোয়াখালীর কোন থানার সাথে যোগ করার পক্ষে কোন রায় বা সমর্থন কোন মহল কোন কালে পাওয়া যায়নি এবং দেওয়াও হয়নি। ১৫ মৌজা সন্দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন করার বিরুদ্ধে একটা গঠনমূলক ও বাস্তবমুখী আন্দোলন সৃষ্টির প্রয়াস সন্দ্বীপবাসীর মাঝে গড়ে উঠতে হবে। তাই আজকের সন্দ্বীপবাসী এ প্রশ্ন করার অধিকারী রাখে, কি করে সন্দ্বীপের ৭৫ মৌজা নোয়াখালীতে ছেড়ে দেয়া হল। তারাও এই প্রশ্ন যথাযথভাবে উত্থাপন করবে, প্রতিকার চাইবে। এদিকে বর্তমান উরিরচর নিয়ে উত্তর অংশে কোম্পানীগঞ্জের সাথে যুক্ত করার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উক্ত বিষয়টি আমাদের রাজনৈতিক ও সচেতন মহল সজাগ হওয়া জরুরি। ৭৫ মৌজার সাথে বর্তমানে নতুন জেগে উঠা চরাঞ্চলের চর শাবানী, চরনুর, ইসলাম (জেলেচর) চর কালাম ও চর ভাষান এর ঠিক পূর্ব দিক ঘেষে সন্দ্বীপের পশ্চিমে ও দক্ষিণ অবধি এক বিরাট চরাঞ্চল জেগে উঠেছে এবং তার সীমানা সন্দ্বীপের দক্ষিণ সওদাগরহাট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। উরিরচর হতে যে চর পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে নেমে এসেছে তা সন্দ্বীপের বর্তমান উত্তর সীমানার সাথে যুক্ত হয়েছে। মেঘনার পানি হাতিয়া চ্যানেলে পশ্চিমে হাতিয়ার পুর্বকূল ঘেষে দক্ষিণ দিকে প্রভাহিত হবার ফলে চর শাবানী বয়া, ১, ২, ৩ এবং অষ্ট্রেলিয়া বয়া ১ ও ২ এবং এর ডব্লিউ বয়া ১ ও ২ এর আওতাধীন জলসীমা কার্যত চরে রূপান্তরিত হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তঃ থানা সীমা নির্ধারণ করা আশু প্রয়োজন।
বর্তমানে সন্দ্বীপের সামান্য পশ্চিমে জেগে উঠা ঠেংগারচর ভৌগলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ে পত্রপত্রিকা সহ সরকারের পক্ষ হতে অপ্রত্যাশিত বক্তব্য শুরু হয়েছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আমির হোসাইন চৌধুরী সম্প্রতিকাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয় জলযান থেকে হাঁটু পরিমাণ কাঁদা ডিঙিয়ে ঠেঙারচরে যেতে হয়। চরের উত্তর ও পশ্চিম দিকে ভাঙ্গন অব্যাহত আছে। তবে পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে মধ্যে সন্দ্বিপের দিকের চরের আকার বৃদ্ধি হচ্ছে। অর্থাৎ অচিরেই টেঙ্গারচর সন্দ্বীপের মূল অংশের সহিত সম্পৃক্ত হয়ে যাবে। সন্দ্বীপের পশ্চিম দিক ভূমি থেকে চর নামা (উঠা) অব্যাহত আছে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বলা হয় যে, হাতিয়া থেকে ঠেঙ্গার চরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। যা হাতিয়ার সীমা থেকে অনেক দূর। অপরদিকে সন্দ্বীপ থেকে ঠেঙ্গারের চরের দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার, ঠেঙ্গার চরটি অতীতে সন্দ্বীপের বিলীন হওয়া নেয়ামস্তি ইউনিয়নের উপর স্থিত একটি চর। যাহার মালিকানা নেয়ামস্তি ইউনিয়নের পূর্বে বসবাসরত লোকের সম্পত্তি বটে। বর্তমান টেঙ্গারচরটি জেগে উঠার পর সন্দ্বীপের নেয়ামস্তি ইউনিয়নবাসীদের নতুন আশা পুনঃ জীবিত হয়ে উঠেছে। নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলা থেকে কখনো দাবি উঠে নাই যে, ঠেঙ্গার চর হাতিয়ার অংশ। বিভিন্ন দালিলিক ও ভৌগলিক প্রমাণে ঠেঙ্গারচর সন্দ্বীপের অংশ। যা সন্দ্বীপের ভৌগলিক সীমানায় অবস্থিত। যেহেতু ঠেঙ্গারচরটি সন্দ্বীপের অংশ। যেহেতু চরটি দিয়ারা জরীপ সহ সকল প্রশাসনিক বিষয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের অধীনের পরিচালিত হওয়া বাঞ্চনীয়। সন্দ্বীপবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ঠেঙ্গারচরের সকল কর্মকান্ডকে সমর্থন করেন। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট সন্দ্বীপবাসীর দাবী ঠেঙ্গারচর সন্দ্বীপের অংশ হিসাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অধীনে ঘোষণা করা হোক। হাতিয়া থেকে ঠেঙ্গারচরের দূরত্ব বেশী হওয়ায় প্রশাসনিক যোগাযোগ করা অতীব দুরূহ। কিন্তু ঠেঙ্গারচর থেকে সন্দ্বীপ দূরত্ব স্বল্প হওয়ায় যে কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে সমস্যার সম্মুখীন হবে না।
সন্দ্বীপবাসীর মতই ঠেঙ্গারচরকে সন্দ্বীপের অংশ মনে করেছেন বন বিভাগও। সন্দ্বীপ রেঞ্চ বন কর্মকর্তা মোঃ নিজাম উদ্দিন জানান যে, আমরা বিগত ১০ বছর যাবত সন্দ্বীপের রেঞ্জের অধীনে থেকে নেয়ামস্তী চরে ঠেঙ্গারচর বনায়ন সৃজন করে যাচ্ছি। ২০০৯-২০১২ পর্যন্ত সময়ে এই চর ১০৫০ হেক্টর ভূমিতে ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে তোলা হয়েছে। বন রেঞ্জ কর্মকর্তারা আরো জানান ২০১৪ সালের ৫ জুন ইস্যুকৃত এক গেজেটে চট্টগ্রাম জেলা সন্দ্বীপ রেঞ্জের আওতায় নেয়ামস্তী চরে জেগে উঠা ভূমির পরিমাণ ৭ হাজার একর বলে উল্লেখ করা হয়। এখানে ৬ ধারায় জারীর সুপারিশও করা হয়। সন্দ্বীপ বন বিভাগ রেঞ্জে থেকে ২০১৩ সালে এই চরকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ বন বিভাগের গেজেটেও টেঙ্গারচর নেয়ামন্ডী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে প্রমাণ বহন করে যে, ঠেঙ্গার চর অতীতে বিলীন হয়ে যাওয়া নেয়ামস্তী ইউনিয়ন সন্দ্বীপের অংশ। তাই সন্দ্বীপবাসীর দাবী ঠেঙ্গারচরটির সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম ও উন্নয়ন দ্বারা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অধীন হওয়া একান্ত বাঞ্চনীয়। বর্তমানে সন্দ্বীপ উপজেলার নির্বাহী অফিসার থেকে জানা যায় যে, সি এস নকশা অনুযায়ী বর্তমান ঠেংঙ্গারচরটি সন্দ্বীপের এক সময়ের নেয়ামস্তী মৌজার অংশ। তাই বহুল তথ্য প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণ করে যে, ঠেঙ্গার চরটি সন্দ্বীপের অংশ।
এতে ভবিষ্যতে হানাহানি ও জবর দখল এড়ানো যাবে। যেহেতু নোয়াখালীর ইতিহাস লেখক প্যারী মোহন সেন উল্লেখ করেন যে, সন্দ্বীপ ও হাতিয়ার বিচ্ছিন্ন অংশ ক্ষুদ্র নদীটি ভাটার সময় শুকিয়ে যেত। এমনকি সন্দ্বীপের স্থল সীমানা ক্রমশঃ পূর্বদিকে চলে আসে। তখন সন্দ্বীপের সীমানা কোথায় কি অবস্থায় তার তদারকি সরকারিভাবে করা হয়নি। এর মাঝে জেগে উঠা চর শবানী, চর নুর কালাম ও চর ভাষান হাতিয়ার প্রভাবশালী ও জাতীয় পর্যায়ের কর্তকতাদের চাপের মুখে, বিশ্লেষন ছাড়া হাতিয়ার সাথে যুক্ত করে দেয়। প্রায় চরগুলো প্রভাবশালী লোকদের নাম অনুসারে নামকরণ করে নেয়। সর্বোপরি যে সমস্ত মৌজা নিয়ে সন্দ্বীপ গঠিত হয়েছিল, বর্তমানে বিভিন্ন দিকে চর জেগে উঠার প্রেক্ষিতে ঐ সমস্ত মৌজার সীমানা চিহ্নিত করা আশু আয়োজন হয়ে পড়েছে এবং ট্রেডার্স সার্ভে দ্বারা তা নির্ধারণ করে চিহ্নিত না করলে অন্য কোন জেলা বা থানার আওতায় সন্দ্বীপের ঐ সমস্ত চর সমূহ যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সার্ভে অব বাংলাদেশ, ডেপুটি কমিশনারের আওতায় ট্রেডার্সের মাধ্যমে সীমানা চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া কার্যকরী করতে হবে এবং ৪৭০ বর্গমাইল আয়তনের ভিত্তিতে মূল সন্দ্বীপের সীমানা নির্ধারণ জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে করতে হবে।
সূত্র : (১) নোয়াখালীর ইতিহাস, (২) সন্দ্বীপ সন দর্শন-১৯৭৯, (৩) শ্বাশত সন্দ্বীপ, (৪) সন্দ্বীপের ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতি, (৫) সন্দ্বীপের ইতিহাস, (৬) দ্বীপ দর্পণ, (৭) ক্রসবাঁধ (হাজার বছরের সন্দ্বীপ), (৮) ক্রসবাঁধ (সন্দ্বীপের ভৌগলিক রূপরেখা) (৯) বিধ্বস্ত সন্দ্বীপ পুনর্বাসন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।