মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

প্রায় সাড়ে ৮ শ’ আটকাপড়া পর্যটক নিয়ে ৩ টি জাহাজ সেন্টমার্টিন থেকে নিরাপদে টেকনাফ দমদমিয়া জেটি ঘাটে পৌঁছেছে। সোমবার ১১ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে জাহাজ ৩ টি টেকনাফে নোঙ্গর করে। বিষয়টি টেকনাফের নবাগত ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সিবিএন-কে নিশ্চিত করেছেন।

ইউএনও জানান, সেন্টমার্টিনে গত শুক্রবার ৮ নভেম্বর থেকে আটকাপড়া প্রায় ১ হাজার পর্যটকদের মধ্যে প্রায় দেড়শ’ পর্যটক নিজেদের উদ্যোগে কাঠের বোট ও স্পীড বোট নিয়ে সোমবার সকালে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ চলে আসে। অবশিষ্ট প্রায় সাড়ে ৮ শ’ পর্যটক এমভি ফারহান, কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন ও আটলান্টিক ক্রুজে করে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে টেকনাফে পৌঁছায়। টেকনাফের দমদমিয়া জেটি ঘাটে পৌঁছার পর টেকনাফের ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও উপজেলা পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে পর্যটকদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। ইউএনও তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। এ সময় পর্যটকেরা উপজেলা প্রশাসন, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার, পুলিশ, হোটেল রেস্তোরাঁর মালিকদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা কথা বর্ননা করেন। সেখানকার প্রশাসন ও লোকজনের আতিথিয়েতায় আটকে পড়া পর্যটকের খুবই মুগ্ধ বলে জানান। পর্যটকেরা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সেন্টমার্টিনে আটকে গেলেও জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের সার্বক্ষনিক খোঁজ খবরে তাদের মনে হয়নি তাঁরা যে আটকে আছেন। আবহাওয়া দূর্যোগপূর্ণ হলেও সেন্টমার্টিনে তাঁরা বেশ উপভোগ্য ও স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাঠিয়েছেন।

সেন্টমার্টিনে আটকাপড়া পর্যটকদের টেকনাফে ফিরিয়ে আনতে যাওয়া ৩ টি জাহাজ সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ দমদমিয়া জেটিঘাটে জাহাজগুলো পৌঁছালে পর্যটকেরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। যেন সবাই আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। আনন্দের যেন সীমা নেই। টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সিবিএন-কে আরো জানান, সেন্টমার্টিন থেকে ফিরিয়ে আনা পর্যটকদের জন্য টেকনাফের দমদমিয়া জেটি ঘাটে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার মুখী ১৮ টি বাস আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার মধ্যে এসব বাসে করে পর্যটকেরা সবাই যার যার গন্তব্যে রওয়ানা দিয়েছেন। এ ছাড়া পর্যটকেরা অনেকেই তাদের নিজস্ব গাড়ি করে চলে গেছেন। পর্যটদের অভ্যর্থনা জানানোর সময় অন্যান্যের মধ্যে টেকনাফের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আবুল মনসুর, উপজেলা নির্বাচন অফিসার বেদারুল ইসলাম, একাডেমিক সুপারভাইজার নুরুল আবছার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এমদাদ হোসেন, উপজেলা মৎস্য অফিসার দেলোয়ার হোসেন, টুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার, সার্ভেয়ার দেলোয়ার হোসেন, ইউএনও অফিসের মোহাম্মদ ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসংগত, গত বৃহস্পতিবার বিকেল হতে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সিগন্যাল দেওয়ায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সেন্টমার্টিন-টেকনাফ সমুদ্র পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে শুক্রবার ফেরার জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপে থাকা প্রায় এক হাজার পর্যটক গত ৪ দিন ধরে সেখানে আটকা পড়ে যায়। সোমবার ১১ নভেম্বর আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে সেন্টমার্টিনে আটকাপড়া পর্যটকদের টেকনাফ নিয়ে আসতে প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ৩ টি জাহাজকে সেন্টমার্টিনে পাঠানো হয়।

পর্যটকদের নিরাপদে সেন্টমার্টিন থেকে ফিরিয়ে আনার প্রতিক্রিয়ায় টেকনাফের ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সিবিএন-কে বলেন-আটকাপড়া পর্যটকদের নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। বলতে গেলে গত ২ রাত পরিষদের সবাইকে নিয়ে অনেকটা নির্ঘুম কাটিয়েছি। আল্লাহর রহমতে কোন ক্ষতি ছাড়াই সকলে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে টেকনাফে পৌঁছায় মহান আল্লাহতায়লার কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব উপসচিব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এ বিষয়ে সহযোগিতা করায় টেকনাফ উপজেলার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, পুলিশ সহ অন্য সকলকেও ধন্যবাদ জানান টেকনাফের ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।